ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দিদের কক্ষের জানালায় একাধিক অ্যান্টেনা কেন!

চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দিদের কক্ষের জানালায় একাধিক অ্যান্টেনা কেন!

নিউজ ডেক্স : চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দিদের জানালায় ঝুলছে একাধিক তারযুক্ত অ্যান্টেনা। অভিযোগ পাওয়া গেছে, এসব অ্যান্টেনা ব্যবহার করে বন্দিদের অবৈধভাবে মোবাইলে কথা বলার সুযোগ করে দিচ্ছে কারা অভ্যন্তরের থাকা একটি চক্র।

আইটি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত তারযুক্ত অ্যান্টেনা ব্যবহার হয়ে থাকে মোবাইলে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক পাওয়ার জন্য। এটা মূলত বিভিন্ন দুর্গম ও পাহাড়ি অঞ্চলে ব্যবহার হয়। কম্পিউটার কাউন্সিল চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রকৌশলী মধুসুধন বলেন, সাধারণত নেটওয়ার্ক কানেকটিভিটি শক্তিশালী করার জন্যই তারযুক্ত অ্যান্টেনা ব্যবহৃত হয়।

তিনি বলেন, যদি কারা অভ্যন্তরে কোনো জ্যামার প্রযুক্তি স্থাপন করা থাকে তাহলে সেই জ্যামারের মাধ্যমে সেখানে ব্যবহৃত মোবাইলগুলোর সিগন্যাল সিস্টেমে ধরা পড়বে। এতে ধরা না পড়ার জন্য অসাধুচক্র অ্যান্টেনা তারযুক্ত মোবাইল নেটওয়ার্ক সেখানে ব্যবহার করতে পারে।

তারযুক্ত অ্যান্টেনা ব্যবহারের আরেকটি কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, কারা কর্তৃপক্ষ মোবাইল নেটওয়ার্ক কোম্পানির সাথে কথা বলে যদি ওই এলাকায় নেটওয়ার্ক ফ্রিকুয়েন্সি কমিয়ে দিয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে কারা অভ্যন্তরে মোবাইল নেটওয়ার্ক দুর্বল থাকবে। ওই নেটওয়ার্কে ভালোভাবে কথা বলা যাবে না। এতে শক্তিশালী নেটওয়ার্কের জন্য তারযুক্ত অ্যান্টেনা সেখানে ব্যবহার হতে পারে। আবার কোনো সময় বিটিভি দেখার জন্যও এসব অ্যান্টেনা সেখানে ব্যবহার হতে পারে।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দিদের রাখার জন্য নির্ধারিত যমুনা ভবনের কয়েকটি জানালায় তারযুক্ত অ্যান্টেনা সরেজমিন দেখা গেছে। তিনশ’ শয্যার পাঁচ তলা বিশিষ্ট বন্দিদের ওই ভবনটির ৪র্থ ও ৫ম তলায় বেশ কয়েকটি জানালার বাইরে এগুলো বসানো হয়েছে। অ্যান্টেনা সংযুক্ত জানালাগুলোর ভেতরে দাঁড়িয়ে আছেন এক বা একাধিক বন্দি। যমুনা ভবনটির পেছনের অংশের পরে কারাগারের একটি বিশাল সীমানা প্রাচীর রয়েছে। প্রাচীরের ওপারে থাকা সড়কটি জেল রোড হিসেবে পরিচিত। যমুনা ভবনে বন্দিদের অ্যান্টেনাযুক্ত জানালাগুলোতে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজনের দৃষ্টি নিচের সেই জেল রোডে চলাচলকৃত মানুষজনের ওপর। সড়কের নিচ থেকে বন্দিদের জানালার উদ্দেশে কোনো হাজতির নাম ধরে ডাকা হলে কিছু সময় পর সেই জানালার কাছে হাজির হচ্ছে নাম ধরে থাকা ওই বন্দি। পরে বন্দি ও বাইরে থাকা লোকজনের সাথে মোবাইলে কথা আদান-প্রদান করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার মো. কামাল হোসেন বলেন, আমরা শুধু অফিসিয়ালি বন্দিদের সপ্তাহে একদিন ও মাসে ৪ দিন মোবাইলে ৫ মিনিট করে কথা বলার সুযোগ দিচ্ছি। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কারাগারে বন্দিদের মোবাইলে কথা বলার এমন সুযোগ দেয়া হয়। এসব নজরদারির জন্য একটি ভিজিল্যান্স টিম রয়েছে। এর বাইরে কোনোভাবে মোবাইলে কথা বলার সুযোগ নেই। জেল সুপার বলেন, কারা অভ্যন্তরে অবৈধভাবে মোবাইল ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে আমাদের সার্বক্ষণিক নজরদারি রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের এখানে বিটিভি (বাংলাদেশ টেলিভিশন) ভালোভাবে দেখা যায় না। সেই কারণে হয়তো কেউ কেউ অ্যান্টেনা ব্যবহার করে থাকতে পারে।

এক প্রশ্নের জবাবে জেল সুপার বলেন, কারাগারে মোবাইল ব্যবহারের বিষয়টি নজরদারির জন্য স্থাপিত জ্যামার নষ্টের কারণে তা খুলে মেরামতের জন্য পাঠানো হয়েছে। এতে কারা অভ্যন্তরে বর্তমানে কোনো জ্যামার নেই। জানা গেছে, চট্টগ্রাম কারাগারে নানা অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

সমপ্রতি অভিযোগ উঠে, কারাগারে বসেই শীর্ষ সন্ত্রাসী থেকে শুরু করে মাদকের আসামিরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নিয়মিত বাইরে যোগাযোগ করছে। কারাগারে বসেই বাইরে বিভিন্ন অপরাধ কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছে তারা। আর এসব যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে মোবাইল ফোন। সম্প্রতি কারাবন্দি থাকা অবস্থায় প্রতিপক্ষের হাতে খুন হয় দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী অমিত মুহুরী। ওই ঘটনা তদন্তে জানা যায়, কারাগারে বসেই ওই শীর্ষ সন্ত্রাসী মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বাইরে বিভিন্ন জনের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখত। দৈনিক আজাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!