Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | ইয়াবার রুট ধরেই আসছে ‘আইস’

ইয়াবার রুট ধরেই আসছে ‘আইস’

নিউজ ডেক্স : বর্তমানে দেশে সবচেয়ে বেশি আলোচিত মাদকের নাম ইয়াবা। দেশের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্ত দিয়ে ঢুকে পরবর্তী সময়ে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া এ মাদক ঠেকাতে কঠোর নজরদারি করে আসছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

একইপথে ইয়াবার চেয়েও ভয়ংকর মাদক আইস বা ক্রিস্টালমেথ বাংলাদেশে ঢুকছে। সম্প্রতি উদ্ধার হওয়া আইস বা ক্রিস্টাল মেথ চালান মিয়ানমার থেকে এসেছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। চট্টগ্রামে আইসের চালান জব্দের ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছে মাঠ পর্যায়ের বিক্রেতা। তবে মূল হোতা ধরাছোঁয়ার বাইরে।  

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশেষ কোনও মাদক প্রতিরোধে যখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যস্ত থাকে, তখন অন্য মাদকের ওপর নজরদারি কিছুটা কমে। এই সুযোগে বিকল্প আরেকটি মাদক প্রবেশ করে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইয়াবায় এমফিটামিন থাকে পাঁচ ভাগ, আর আইসের পুরোটাই এমফিটামিন। ফলে এটি ইয়াবার চেয়ে অনেকগুণ বেশি ক্ষতিকর এবং অনেক বেশি পরিমাণ প্রতিক্রিয়া তৈরি করে মানবদেহে। মানবদেহে অতি অল্প সময়ে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে এই মাদক। এটি সেবনে মস্তিষ্কের রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এ থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে। ফলে স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। আইস বা ক্রিস্টাল মেথে শতভাগ এমফিটামিন থাকায় এটি বিশ্বজুড়ে ভয়ঙ্কর মাদক হিসেবে চিহ্নিত।  

জানা গেছে, ১৮৮৭ সালে জার্মানিতে মারাত্মক সব ড্রাগের ওপর গবেষণা করতে গিয়ে আবিষ্কৃত হয় ক্রিস্টাল ড্রাগ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুদ্ধবিমানের চালক ও সৈনিকদের সারাক্ষণ নির্ঘুম রাখতে জার্মানি ও জাপানে মাদকটি ব্যবহারে উৎসাহিত করা হতো। পরবর্তীতে এই মাদকের নাম পরিবর্তিত হয়ে কোথাও ক্রিস্টাল মেথ, আইস, এক্সটেসি এবং এলাকাভেদে নানা ছদ্মনামে এর ব্যবহার চালু হয়।

১৯৭০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিস্টাল মেথ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ২০১০ সালে অস্ট্রেলিয়া থেকে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, লাওস, চীন, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার হয়ে বাংলাদেশে মাদকটির ব্যবহার শুরু হয়। ক্রিস্টাল আইস উচ্চমাত্রার একটি মাদক এবং এটি সেবনে অনিদ্রা ও অতি উত্তেজনা তৈরি হয়। মাদকটি ফলে স্মৃতিভ্রম ও মস্তিষ্ক বিকৃতি, স্ট্রোক, হৃদরোগ, কিডনি, লিভার নষ্ট হয়। এছাড়া দাঁতক্ষয়, অতিরিক্ত ঘাম, চুলকানি, রাগ ও আত্মহত্যার মতো ভয়ানক প্রবণতাও তৈরি হয়।       

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্যমতে, নগরের খুলশী থেকে চট্টগ্রামে প্রথম নতুন ধরনের মাদক আইসের প্রথম চালান ধরা পড়ে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি। ওইদিন ১৪০ গ্রাম আইসসহ দুই জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৭। এরপর গত মে মাসে চন্দনাইশ উপজেলা থেকে ২০০ গ্রাম আইসসহ এক যুবককে গ্রেফতার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।  

গত ১৭ জুন কর্ণফুলী উপজেলা থেকে ৫ গ্রাম আইসসহ গ্রেফতার করা হয় আরও একজনকে। গত ১২ জুলাই নগরের কোতোয়ালি থানার পাথরঘাটা নতুন ফিশারীঘাট এলাকা থেকে ৯৭৫ গ্রামের আইসের বড় চালান জব্দ ও তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। গত ১৪ জুলাই নগরের ব্রিজঘাট এলাকা থেকে নগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল ৮০ গ্রাম আইসসহ একজনকে গ্রেফতার করে। সর্বশেষ গত ১০ আগস্ট রাত পৌনে ৯টার দিকে নগরের লালদিঘীর মোড় এলাকায় থেকে ৪৩০ গ্রাম ওজনের আইসসহ একজনকে গ্রেফতার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ।  

প্রায় দুই বছর আগে ঢাকার মোহাম্মদপুরে নিয়মিত অভিযানে ৫ গ্রাম আইসসহ এক যুবককে আটক করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। তখনই আইসের কথা জানা যায়। এরপর ওই যুবকের স্বীকারোক্তিতে ঝিগাতলার একটি বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় হাসিব বিন মোয়ামের রশিদ নামে এক ব্যক্তিকে। রশিদ ওই বাসার তলকুঠুরীতে ‘আইস’ তৈরির কারখানা বসিয়ে সবে উৎপাদন শুরু করেছিল বলে জানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। রশিদের কাছে ২৯ গ্রাম আইস পাওয়া গিয়েছিল। পরে রশিদের স্বীকারোক্তিতে বসুন্ধরা এলাকায় থেকে নাইজেরীয় এক নাগরিককে ৫০০ গ্রাম আইস সহ গ্রেফতার করা হয়।

র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মশিউর রহমান জুয়েল বলেন, আইস সাম্প্রতিক সময়ে দেশে প্রবেশ করেছে। মাদক ব্যবসায়ীরা ইয়াবার পাশাপাশি আইসের বাজার তৈরির চেষ্টা করছে। এটা অনেক দামি মাদক। আমাদের কাছে যারা আইস নিয়ে গ্রেফতার হয়েছে, তারা মাঠ পর্যায়ের। মূল হোতাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। আইস সাদা মাদক। এটা নৌ, সড়ক ও বিমানপথে আসতে পারে।  

তিনি বলেন, চট্টগ্রামে আইসের কোনও কারখানার সন্ধান এখনও পাওয়া যায়নি। আমাদের পক্ষ থেকে গোয়েন্দা নজরদারি রাখা হচ্ছে। মাদক নির্মূলে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।  

নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) সালাম কবির বলেন, আইস অনেক দামি মাদক। ছোট ছোট মাদক কারবারিরা ইয়াবার পাশাপাশি বর্তমানে এর ব্যবসাও শুরু করেছে। উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের টার্গেট করে মূলত মাদকটি ছড়িয়ে পড়ছে। ১ গ্রাম আইস অন্তত ৮ জন সেবন করতে পারে।

তিনি বলেন, গত ১৪ জুলাইয়ের চালানে ফোরকান নামের কক্সবাজারের এক ব্যক্তির মাধ্যমে জালাল আইসগুলো মিয়ানমার থেকে সংগ্রহ করেছে বলে প্রাথমিক তথ্য দিয়েছে। তার মোবাইলেও আমরা মিয়ানমারের একটা লিঙ্ক পেয়েছি। তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন আছে, কিভাবে এ মাদকগুলো হাতে এসেছে। গত ১০ আগস্ট চন্দনাইশ থানার জনৈক আজিজুর রহমানের কাছ থেকে সংগ্রহ করে বিক্রির জন্য ঘটনাস্থলে অবস্থান করছিল বলে জানায় গ্রেফতার হওয়া আরেকজন।  

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মেহেদি হাসান বলেন, কোন না কোন লিংকের মাধ্যমে আইস আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা অনেককে আইসসহ গ্রেফতার করেছি। বাংলানিউজ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!