- Lohagaranews24 - https://lohagaranews24.com -

সেতু থেকে মাতামুহুরী নদীতে ফেলে হত্যা : মুন্নীর স্বীকারোক্তি

P-1-4-9

নিউজ ডেক্স : তখন বিকাল চারটা। শিশু আল ওয়াসী বাড়ির কাছের সড়কে খেলছিল। এ সময় একটি চিপস দিয়ে তাকে কোলে তুলে সবুজবাগের পশ্চিমাংশের বিলের মাঝখানের পথ দিয়ে স্বপ্নপূরী ক্লাবের সামনে যান মুন্নী আক্তার। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার পর টমটমযোগে পৌরশহরের চিরিঙ্গা পুরাতন বাসস্টেশনে গিয়ে নামেন। এরপর হেঁটে মাতামুহুরী নদীর সেতুর মাঝখানে গিয়ে নদীতে নিক্ষেপ করেন শিশু ওয়াসীকে। এতেই শিশুটির মৃত্যু হয়। চকরিয়ায় আলোচিত আড়াই বছরের শিশু আল ওয়াসী হত্যাকাণ্ডে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার একমাত্র আসামি মুন্নি আক্তার। জবানব্দীতে তিনি নিজের নৃশংসতার কথা এভাবে বর্ণনা করেন। ওয়াসী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকাল বুধবার বিকালে তাকে উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। বিচারকের কাছে তিনি জবানবন্দি দেন। কখন এবং কী কারণে শিশুর প্রতি এই নির্মম আচরণ করেছেন, জবানবন্দীতে তা-ও জানান।

এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার ওসি মো. বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, শিশু আল ওয়াসী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত একমাত্র আসামি মুন্নি আক্তারকে ঘটনার রাতে বাপের বাড়ি থেকেই আটক করা হয়। এরপর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এই হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মুন্নিকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলা হলে বিচারক রাজীব কুমার দেবের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয় সে।

ওসি জানান, জবানবন্দিতে মুন্নি আক্তার আদালতকে জানায়, শিশু আল ওয়াসীর বাবা সাহাব উদ্দিনের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিল। সেই সূত্রে দুজনের মধ্যে বিয়ের কথা থাকলেও তাকে ছেড়ে রুনা ইয়াছমিনকে বিয়ে করে সাহাব উদ্দিন। এ কারণে তার জীবন তছনছ হয়ে যায়। তাই সাহাব উদ্দিনের জীবনও দুর্বিষহ করে তুলতে তার শিশুপুত্রকে হত্যার পথ বেছে নেয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চকরিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ইসমাইল জানান, পৌরশহরের সবুজবাগ সড়ক থেকে শিশুটিকে ফুসলিয়ে অপহরণের পর পুলিশকে খবর দেওয়া হয় রাতে। এর পরপরই বাটাখালী খোন্দকার পাড়ার খলিলুর রহমানের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তারই মেয়ে মুন্নি আক্তারকে আটক করা হয়। কিন্তু তার আগেই শিশুটিকে নিক্ষেপ করা হয় নদীতে। এর পরদিন সকাল দশটার দিকে নদীর চরে পাওয়া যায় শিশুটির মৃতদেহ। শিশুটিকে অপহরণের পর হত্যা ও লাশ গুম করার চেষ্টার অভিযোগ এনে সংশ্লিষ্ট আইনে মঙ্গলবার রাতে থানায় মামলা করেন শিশু আল ওয়াসীর মা রুনা ইয়াছমিন।

তিনি বলেন, পুালিয়ে যাওয়ার আগেই মুন্নি আক্তারকে আটক করা হয়েছে। এ কারণে মাত্র দুদিনের মাথায় হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন সম্ভব হয়েছে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সবুজবাগে বাড়ির কাছে সড়কের ওপর সোমবার বিকাল চারটার দিকে সমবয়সী শিশুদের সঙ্গে খেলছিল আড়াই বছরের শিশু মো. আল ওয়াসী। এ সময় বোরকা ও নেকাবে মুখ ঢাকা অচেনা এক নারী আদর করার ছলে ফুসলিয়ে শিশু আল ওয়াসীকে কোলে নিয়ে দ্রুত সটকে পড়েন। বিলের মাঝখানের ছোট পথ দিয়ে কিছুদূর যাওয়ার পর ওই নারী ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে একটি এপ্রোন বের করে শিশুটিকে ঢেকে নেন। এ সময় বিলে কাজ করা দুই নারী শ্রমিক শিশুকোলে অচেনা ওই নারীকে দেখতে পায়।

কঙবাজার জেলা পুলিশের চকরিয়া সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার কাজী মো. মতিউল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, নিষ্পাপ শিশু হত্যাকাণ্ডে যাতে মুন্নির সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত হয় সেভাবেই পুলিশ কাজ করবে। ইতোমধ্যে সে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত মর্মে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ায় মামলাটি এখন বিচারিক পর্যায়ে চলে যাবে। আশা করছি, অল্প সময়ের মধ্যেই এই হত্যাকাণ্ডের রায় পাবে পরিবার।