ব্রেকিং নিউজ
Home | উন্মুক্ত পাতা | সাতকানিয়া আদালতের ১৩৭ বছর

সাতকানিয়া আদালতের ১৩৭ বছর

151

মোঃ জামাল উদ্দিন : এ বছর সাতকানিয়া আদালত ১৩৭ বছরের সূবর্ণ পথ অতিক্রম করতে যাচ্ছে। সাতকানিয়া আইনজীবি সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন আহামদ চৌধুরী কচির জানিয়েছেন, বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান সুচারুরূপে সম্পন্ন করার জন্য এডভোকেট সুনীল বড়–য়াকে সভাপতি ও এডভোকেট মিনহাজুল আব্রারকে সাধারণ সম্পাদক করে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হয়েছে।

জানা যায়, আইন আদালতের ক্রম বিকাশ এ পর্যালোচনায় ১৭৬১ সালে ইংরেজ কোম্পানী চট্টগ্রামের শাসন ভার গ্রহণ করে। মিঃ হেরির উপর শাসন ভার অর্পণ করা হয়। ১৭৭৩ সালে এ জেলার গোড়াপত্তন হয়। ১৮৮০ সালে এ জেলার একজন জেলা জজ, ৩ জন অতিরিক্ত জেলা জজ, ৪ জন সাব-জজ, ১৬ জন মুন্সেফ নিয়োগ দেয়া হয়। তৎমধ্যে ৫ জন সদরে, ৪ জন পারিবারিক আদালতে, ২ জন সাতকানিয়ায়, ১ জন কক্সবাজারে, ১ জন ফটিকছড়িতে, ১ জন উত্তর রাউজানে, ১ জন দক্ষিণ রাউজানে, ১ জন সন্দ্বীপে বিচার কার্য্যে নিয়োজিত ছিলেন। বিভিন্ন তথ্য উপত্তা পর্যালোচনায় দেখা যায় ১৮৮০ সালে সাতকানিয়া আদালত প্রতিষ্ঠা হয়। বর্তমান সাতকানিয়া পোষ্ট অফিস কার্যালয়ে পরবর্তী ১৮৮৪ সালে সাতকানিয়া আদালত ভবন নির্মিত হয়।

শত বছরের ঐতিহ্যমন্ডিত সাতকানিয়া আদালত প্রতিষ্ঠার পর পরই মোকদ্দমা পরিচালনার জন্য স্থানীয় পর্যায়ে আইনী সহায়তা প্রদানের জন্য আইনজীবী হিসাবে সনদধারী ব্যক্তিবর্গ সাতকানিয়া আদালতে পেশাগত কাজে নিয়োজিত হন। এ আদালতে অনেক স্বনামধন্য আইনজীবী পেশাগত চর্চায় নিয়োজিত ছিলেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন কামিনী কুমার ঘোষ, জিয়াবুল হক, শান্তিপদ ঘোষ, নুর হোছাইন চৌধুরী, মোক্তার আহমদ চৌধুরী, ভূপাল শর্ম্মা প্রমুখ।

আইনজীবীরা সমাজের সচেতন অংশ। তারা নিজ পেশার বাইরে সমাজ কল্যাণমূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। অন্যায় ও অনিয়মের বিরুদ্ধে স্বোচ্ছার ভূমিকাও পালন করেন। রাজনীতি সচেতন নাগরিক হিসাবে রাজনৈতিক ভূমিকাও কম নয়। বৃটিশ আমলে উপনিবেশিক গোষ্ঠীর অন্যায় শাসনেও আইনজীবীদের বলিষ্ট প্রতিবাদী ভূমিকা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় শাসক গোষ্ঠীকে অনেক ক্ষেত্রে বাধ্য করেছে। পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর একচেটিয়া বর্বর শাসন ও শোষনের বিরুদ্ধে আইনজীবীদের সরব প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল। ১৯৭১ এর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের বার সমিতির বিজ্ঞ সদস্যদের ন্যায় অত্র বারের অনেক বিজ্ঞ আইনজীবী সক্রিয় ভূমিকা ও অবদান রেখেছেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সাতকানিয়া আদালতসহ দেশের সকল আদালতের আইনজীবীরা স্বাধীন দেশের নাগরিকদের সুবিচার প্রাপ্যতা নিশ্চিতে গৌরবজ্জল ভূমিকা পালন করেছেন। সাতকানিয়া আদালতে পেশাগত মর্যাদা পুনঃ প্রতিষ্ঠিত করতে ও কর্মরত আইনজীবীগণ নব প্রত্যয় সাতকানিয়া আইনজীবী সমিতির কার্যক্রমকে বেগবান করেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলের আদালত হিসাবে আইনজীবী সংখ্যা কম থাকলেও সে সময়ে আইনজীবীরা সাতকানিয়া আদালতের গন্ডি পেরিয়ে জজ কোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগে সুনাম অর্জন করেছেন। সময়ের পরিক্রমায় অনেক আইনজীবী পেশা থেকে অবসর নিয়েছেন। কেউ কেউ পরলোক গমন করেছেন। পেশাগত ব্যস্ততার মাঝে আইনজীবী সমিতি প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ পার করলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃবর্গ সেদিকটি খেয়াল করেননি। অন্যভাবে বলা যায় রাজনৈতিক ও আর্থ সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে হয়তোবা সমিতির নেতৃত্ব বিষয়টিকে আমলে নেননি। বর্তমানে দেশ অনেক এগিয়েছে। দেশের আত্ম সামাজিক পরিস্থিতির প্রভূত উন্নতি হয়েছে। আদালত ও বিচার ব্যবস্থায় গুণগত পরিবর্তন হয়েছে। আইনজীবীদের মর্যাদাও সমুন্নত হয়েছে। আদালতের অন্যতম অনুসঙ্গ হিসাবে আইনজীবীরা কোর্ট অফিসারের মর্যাদায় পেশাগত কাজে বেঞ্চকে নিয়মিত সহায়তা করে যাচ্ছেন। সাংবিধানিকভাবেও ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স মোতাবেক আইনজীবীদের মর্যাদাও নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের আদালত হিসাবে সাতকানিয়া আদালত আজ আর পিছিয়ে নেই। সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও বাঁশখালী উপজেলার দেওয়ানী সংক্রান্ত মামলা মোকদ্দমার বিচারকার্য এ আদালতে পরিচালিত হয়ে আসছিল। ২০০৭ সালে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণের প্রেক্ষিতে বাঁশখালীর মামলা সমূহ তথায় স্থানান্তরিত হয়। সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ার মামলা সমূহ এখানেই পরিচালিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে এখানে যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রতিষ্ঠার পর এ আদালত মানুষের সুবিচার প্রাপ্তির সুযোগ বেড়েছে এবং মামলার ব্যয় বহুলাংশে কমেছে। যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালত স্থাপিত হওয়ায় আইনজীবীর পেশাগত ব্যস্ততাও বৃদ্ধি পেয়েছে।

পেশার মানোন্নয়নে এবং বার বেঞ্চের সম্পর্ক জোরালো করতে আইনজীবী সমিতি ও সময়োচিত পদক্ষেপ নিয়েছে। বর্তমানে সাতকানিয়া আইনজীবীর সদস্য সংখ্যা শতাধিক। তবে নিয়মিত প্রাকটিশনার আইনজীবীর সংখ্যা ৩০ জনের মতো। বাকিরা জজ আদালতে নিয়মিতভাবে পেশায় নিয়োজিত আছেন। কিন্তু সাতকানিয়া আইনজীবী সমিতির সাথে সম্পর্ক রেখে চলেছেন। সুখে-দুঃখে সকল আইনজীবীরা এগিয়ে আসছেন।

বৃটিশ আমলের জরাজীর্ণ বেড়া দ্বারা নির্মিত আদালত ভবন বর্ষাকালে পানিতে ডুবে থাকে এবং বিজ্ঞ বিচারকদের জরাজীর্ণ কোয়াটার বর্তমানে সরকারী সংস্থার পরিত্যক্ত ঘোষিত তবুও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিচারকগণ বসবাস করেন। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরেও বাংলাদেশের উক্তরূপ জরাজীর্ণ আদালত ভবন এবং বিচারকদের কোয়াটার যাহার আধুনিকায়ন করা সময়ের দাবী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!