- Lohagaranews24 - https://lohagaranews24.com -

সাতকানিয়ায় সামাজিক দূরত্ব না মানায় দিন দিন করোনার ঝুঁকি বাড়ছে

নিউজ ডেক্স : পরস্পরের সংস্পর্শে সাতকানিয়ায় ১ থেকে ১৩ তে পৌঁছেছে করোনার সংক্রমণ। ঝুঁকিতে রয়েছে তাদের সংস্পর্শে আসা আরো অনেকে।

সাতকানিয়ায় প্রথম করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যবসায়ীর পরিবারের সদস্য, নিকটাত্মীয়সহ আরো ১২ জন সংক্রমিত হয়েছে। এছাড়া সাতকানিয়ায় করোনা শনাক্ত হয়েছে আরো ২ জনের। সব মিলিয়ে ১৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

পুরো চট্টগ্রামে করোনা শনাক্ত হওয়া ৫৫ জনের মধ্যে ১৫ জন সাতকানিয়ার বাসিন্দা। ফলে সাতকানিয়াকে করোনা রোগীর হটস্পট হিসেবে বিবেচনা করেছে স্বাস্থ্য প্রশাসন।

করোনার সংক্রমণ বাড়লেও সামাজিক দূরত্ব মানছে না সাধারণ লোকজন। করোনার সংক্রমণ রোধে ইতিমধ্যে পুরো সাতকানিয়াকে লকডাউন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জোরালো তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু তা আমলে নিচ্ছে না লোকজন।

সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে চায় না তারা। সাধারণ মানুষের মাঝে এসব বিষয় নিয়ে নেই কোনো সচেতনতা। ব্যাংক থেকে হাট-বাজার কোথাও যথাযথভাবে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলছে না তারা।

সাপ্তাহিক হাট-বাজারগুলোর দিকে থাকালে মনে হবে কোনো জনসভাস্থল। পাড়া মহল্লায় চলছে অপ্রয়োজনীয় ঘোরাফেরা এবং আড্ডা। অনেক এলাকায় খেলাধূলাও চলছে। মসজিদগুলোতে মানা হচ্ছে না সরকারি বিধিনিষেধ। প্রশাসনের কঠোর নজরদারির পরও যেন তাদেরকে দমিয়ে রাখা যাচ্ছে না।

এমনকি অপ্রয়োজনীয় ঘোরাফেরা ঠেকাতে প্রতিদিন জরিমানা করার পরও তা বন্ধ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। ফলে সাতকানিয়ায় করোনার ঝুঁকি আরো বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ ওসমানী জানান, করোনার উপসর্গ নিয়ে গত ৯ এপ্রিল সাতকানিয়ার পশ্চিম ঢেমশা ইছামতি আলীনগর এলাকার এক ব্যবসায়ী মারা যান। ওই দিন রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরে বিআইটিআইডিতে নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে তার করোনা শনাক্ত হয়। ফলে মারা যাওয়া ব্যক্তির পরিবারের সদস্য, নিকটাত্মীয়, তাকে বহনকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক, তার লাশ ধোয়া ও দাফনের কাজে সম্পৃক্ত থাকা ১৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য বিআইটিআইডিতে পাঠানো হয়।

নমুনা পরীক্ষা শেষে প্রাপ্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ১৬ জনের মধ্যে ৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়। ওই ৫ জন হলো করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির ছেলে, তাকে বহনকারী অটোরিকশাচালক ও তার লাশ ধোয়া এবং দাফনের কাজে অংশ নেওয়া স্থানীয় লোকজন।

একসাথে একই গ্রামের ৫ জনের করোনা শনাক্ত হওয়ার পর মারা যাওয়া ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা আরো কিছু নিকটাত্মীয়ের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য বিআইটিআইডিতে পাঠানো হয়।

এসব নমুনা পরীক্ষা শেষে গত ১৯ এপ্রিল পাওয়া রিপোর্টে মাদার্শা ইউনিয়নের রূপনগর এলাকার একজনের করোনা শনাক্ত হয়। তিনি ইছামতি আলীনগর এলাকায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির মেয়ের জামাই।

ওই ব্যক্তির করোনা শনাক্ত হওয়ার পর গত ২০ এপ্রিল তার পরিবারের ৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। এসব নমুনা পরীক্ষা শেষে বিআইটিআইডি হতে দেওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী আরো ৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়। তারা সবাই একই পরিবারের সদস্য।

নতুন শনাক্ত হওয়া ৬ জনই ১৯ এপ্রিল করোনা শনাক্ত হওয়া ব্যক্তির পরিবারের সদস্য এবং ইছামতি আলীনগর এলাকায় মারা যাওয়া ব্যক্তির মেয়ে ও নাতিসহ নিকটাত্মীয়।

এতে প্রমাণিত হয় যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির সংস্পর্শে আসায় তার ছেলে, মেয়ে, মেয়ের জামাই, নাতি ও নিকটাত্মীয়সহ আরো ১২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এজন্য তিনি লোকজনকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার তাগিদ দেন। অন্যথায় পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

সাতকানিয়া পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ জোবায়ের জানান, লোকজনকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার জন্য আমরা প্রতিনিয়ত বলে যাচ্ছি। এরপরও মানুষের মধ্যে গাফিলতি ভাব রয়েছে। কোনো প্রয়োজন ছাড়া মানুষ এলাকায় ঘোরাফেরা করছে। হাট-বাজারে ভিড় করছে। অনেক দায়িত্বশীল মানুষও সামাজিক দূরত্ব মানছে না। ফলে সাধারণ লোকজনের মধ্যেও নিয়ম না মানার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে করে পুরো এলাকা দিন দিন ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে।

সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সফিউর কবীর জানান, করোনার সংক্রমণ রোধে এলাকায় জনসমাগম এড়াতে, অপ্রয়োজনীয় ঘোরাফেরা ও আড্ডা বন্ধ করতে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য পুলিশ অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আবার কারো ঘরে খাবার নেই এ ধরনের তথ্য পেলে তাদের ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। এরপরও মানুষ ঘরে থাকতে চায় না। অপ্রয়োজনে হাট-বাজার ও রাস্তাঘাটে ঘোরাফেরা করে। ফলে এলাকায় করোনার ঝুঁকি বাড়ছে।

সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূর এ আলম জানান, পুরো সাতকানিয়া লকডাউনে রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী এবং পুলিশ ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এরপরও লোকজনকে ঠেকানো যাচ্ছে না। হাট-বাজারগুলোতে ভিড় করছে। রাস্তা-ঘাটে অপ্রয়োজনীয় ঘোরাফেরা করছে। রমজান মাস শুরু হওয়ার আগে কিছুটা ঠিক ছিল। এখন মানুষকে কোনোভাবেই দমিয়ে রাখা যাচ্ছে না। বেধে দেওয়া সময়ের পরও দোকান খোলা রাখায় এবং মোটরসাইকেল নিয়ে অপ্রয়োজনীয় ঘোরাঘুরি করায় অনেককে জরিমানাও করা হয়েছে। লোকজনকে প্রতিনিয়ত সচেতন করা হচ্ছে। তবুও তারা সামাজিক দূরত্ব মানছে না। এতে করে ঝুঁকি বাড়ছে।

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)-এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় করোনা বিষয়ক সেলের সমন্বয়ক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান জানান, লোকজন হাট-বাজারে বেচাকেনায়, রাস্তা-ঘাটে ঘোরাফেরায় এবং মসজিদে নামাজ আদায়ে সামাজিক দূরত্ব মানছে না। মানুষ স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করছে। এতে দিন দিন ঝুঁকি বাড়ছে। সাতকানিয়ার পশ্চিম ঢেমশা ইছামতি আলীনগরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা আরো ১২ জন সংক্রমিত হয়েছে। ফলে মানুষের বুঝা উচিত করোনার ঝুঁকি থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা। একই সাথে ঘন ঘন হাত ধোয়া এবং হাঁচি-কাশির ক্ষেত্রে শিষ্টাচার মেনে চলতে হবে। অনেকে বাইরে চলাফেরার সময় মাস্কটি পর্যন্ত ব্যবহার করছে না। আবার কেউ কেউ একই মাস্ক টানা ৬-৭ দিন ব্যবহার করছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে উপসর্গবিহীন অনেক করোনা রোগী সর্বত্র অবাধে ঘোরাফেরা করছে। এদিকে, নমুনা সংগ্রহ করার পর পরীক্ষা রিপোর্ট পেতে ৫-৭ দিন চলে যাচ্ছে। ওই সময়ে তারা বাইরে ঘোরাঘুরি করছে। ফলে তাদের মাধ্যমেও অনেক লোক সংক্রমিত হচ্ছে।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘করোনার সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার কোনো বিকল্প নাই। সাতকানিয়ায় ইতিমধ্যে ১৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। সাতকানিয়ার দিকে আমাদের বিশেষ নজর রয়েছে। সেখানে এখন লকডাউন চলছে। আরো কড়াভাবে লকডাউন পালনের ব্যাপারে আমরা প্রশাসনের সাথে আলোচনা করবো। সামাজিক দূরত্ব মেনে না চললে সেখানে সামাল দেওয়া মুশকিল হয়ে পড়বে।’ দৈনিক আজাদী