- Lohagaranews24 - https://lohagaranews24.com -

সবার দৃষ্টি এখন অলির দিকে

1549110052jhgfd

নিউজ ডেক্স : লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমেদ এর জাতীয় মুক্তি মঞ্চ গঠনের ঘোষণায় দেশের রাজনীতির অঙ্গনে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। এ মঞ্চ গঠনের নেপথ্যে ২০ দলীয় জোটের মধ্যে নিজেদের অবমূল্যায়ন, নাকি জামায়াতকে নিয়ে নতুন জোট গঠন ? এ প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’কে স্বাগত জানানোর বিষয়টি সাধারণ মানুষও নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিগত একাদশতম সংসদ নির্বাচনের আগে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর বিএনপি অনেকটা তাঁর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এতে জোটের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে অনেকটা অপাংক্তেয় হয়ে পড়ে ২০ দলীয় জোটের ছোট ছোট দলগুলো। ড. কামাল হোসেনের প্রতি বিএনপির এই নির্ভরশীলতা ভাল দৃষ্টিতে নেয়নি ছোট দলগুলো। এ নিয়ে জোটের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে। সর্বশেষ ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর জোটের মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিজয়ী প্রার্থীদের শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু জোটের সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের সংসদ সদস্যরা শপথ গ্রহণ করলে জোটের মধ্যে দূরত্ব আরো বাড়তে থাকে। এ অবস্থায় মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ঘোষণা দিয়ে জোট থেকে বেরিয়ে আসেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) আন্দালিব রহমান পার্থ। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমেদ এ নিয়ে সমালোচনা করেন। ফলে এই দূরত্বের সূত্র ধরেই জাতীয় মুক্ত মঞ্চ গঠনের কারণ থাকতে পারে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা। রাজনৈতিক আরেকটি সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির সাথে জামায়াতের সম্পর্ক তেমন একটা ভালো যাচ্ছে না। তাই দেশের রাজনীতিতে আলাদা একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমেদ জাতীয় মুক্তি মঞ্চ গঠন করেছেন।

প্রসঙ্গত, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও পুনরায় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে গত ২৭ জুন জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ওই প্ল্যাটফর্মের ঘোষণা দেন অলি আহমদ। ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’-এ এলডিপি ছাড়াও আছে ২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা, খেলাফত মজলিস এবং ন্যাশনাল ওলামা মুভমেন্ট।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘আমরা ২০ দলীয় জোটে ছিলাম, আছি এবং থাকবো। যদি আমাদের জোট থেকে চলে যাওয়ার উদ্দেশ্য থাকতো, তাহলে যেদিন বিজেপি’র আন্দালিব রহমান পার্থ গেছেন সেইদিন অথবা তার আগে চলে যেতাম। সুতরাং অন্য কোন উদ্দেশ্য নিয়ে ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’ গঠন করা হয়নি। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে পুনরায় সংসদ নির্বাচন আয়োজন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১৮ দফা দাবি তুলে ধরার দাবিতে এই জাতীয় মুক্তি মঞ্চ গঠন করা হয়েছে।’

সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, ‘গত ১৬ মে ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল সকল দল নিজ নিজ অবস্থান থেকে কর্মকা- শুরু করবে। সুতরাং এ সিদ্ধান্তের আলোকে আমরা সবাইকে নিয়ে কর্মকা- শুরু করেছি। তাই এ নিয়ে আমাদের অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই।’

‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’ গঠন প্রসঙ্গে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘আপাতত এ নিয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে চাই না। শুধু এটুকু বলবো- রাজনীতিতে ডিগবাজি খেয়ে কেউ সফল হয় না। কোন রাজনৈতিক নেতা দেশের বড় দল থেকে বাইরে গিয়ে ভালো কিছু করতে পারেনি। জনগণও তাদের সেভাবে গ্রহণ করে না।’

তবে এ প্রসঙ্গে দলের চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন ভিন্ন কথা। তিনি দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চের উদ্দেশ্য ভাল। এজন্য দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এটিকে স্বাগত জানিয়েছেন।’

উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম বলেন, ‘কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমেদ রাজনীতির শুরুতে বিএনপির সাথে ছিলেন। পরে তিনি বিএনপি ছেড়ে এলডিপি গঠন করেন। এখন তিনি বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সাথে রয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বে গড়া এ ধরনের জাতীয় মুক্তি মঞ্চ থেকে ভাল কোনো কিছু আশা করা যায় না। জাতীয় রাজনীতিতে তারা তেমন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে হয় না।’

এলডিপি’র সভাপতি কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমেদ বলেন, ‘জাতির মুক্তির লক্ষ্যে ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’ গঠন করা হয়েছে। নতুন এ প্ল্যাটফর্মের সাথে ২০ দলীয় জোটও আছে। শুধু জামায়াত ইসলামী নয়, দেশের সবাইকে নিয়ে কাজ করবো। এ মুক্তি মঞ্চের মাধ্যমে দেশের ৪টি জেলা শহরে প্রাথমিকভাবে কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে পহেলা জুলাই বিকাল ৩টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব এবং ১৬ জুলাই সিলেটে ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’ এর উদ্যোগে আলোচনা সভা করে আমাদের উদ্দেশ্যগুলো ধারাবাহিকভাবে দেশের জনগণকে জানিয়ে দেওয়া হবে।’ -দৈনিক পুর্বকোণ