- Lohagaranews24 - https://lohagaranews24.com -

মেয়ে হয়তো জানে না মায়ের খুনি তার বাবা

নিউজ ডেক্স : ফেনীতে ফেসবুক লাইভে এসে স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় স্বামী ওবায়দুল হক টুটুলকে (৩২) আটক করেছে পুলিশ।এমন নৃসংশ হত্যাকাণ্ডে হতভম্ব হয়ে পড়েছে শহরের বারাহীপুর এলাকাবাসী। অনেকেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার ভাষাটাও হারিয়ে ফেলেছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ‌্যম ফেসবুক লাইভে এসে এমন কাণ্ড পাশবিকতার ইতিহাসে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে।

এদিকে, নিহত গৃহবধূর আরওয়া নামের দেড় বছর বয়সী ফুটফুটে এক মেয়ে রয়েছে। মায়ের মৃত্যুর পর বাবাকেও ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ। আরওয়া শুধু কাঁদছে, তার কান্না কেউ থামাতে পারছেন না। ফুটফুটে দেড় বছরের মেয়েটি কি জানে? তারা মায়ের খুনি তার বাবাই। যে বয়সে বাবা-মায়ের আদরে হেসে খেলে বড় হওয়ার কথা সে বয়সেই হারাতে হয়েছে মাকে। বাবা থেকেও নেই। আরওয়ার কি দোষ ছিলো? ছোট্ট মেয়েটি কেন বাবা-মায়ের কোল হারালো? মেয়েটির ভবিষ্যৎ পৃথিবী কেমন হবে? সে কি পারবে এ মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যে বেড়ে উঠতে? এমন প্রশ্নই যেন বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে সবখানে।

এদিকে এমন চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড নিয়ে চিন্তিত নারী সংগঠকরাও। মানবাধিকার নেত্রী ও বেসরকারি সংস্থা নিজেরা করি’র সমন্বয়কারী খুশি কবির বলেন, ‘সারা পৃথিবী যেখানে অদৃশ্য শত্রুর কবলে জর্জরিত। চলছে বৈশ্বিক মহামারির বিপর্যয়। এমন পরিস্থিতিতে ফেনীতে এ ঘৃণ্যতম ঘটনা ঘটেছে।

একজন নারীকে নির্মমভাবে খুনের ভিডিও ফেসবুকে লাইভে প্রচার- এর চাইতে নৃশংস আর কি হতে পারে? এটি নিঃসন্দেহে অসুস্থ পুরুষতান্ত্রিকতার বহিঃপ্রকাশ। খুনি ব্যক্তি জঘণ্য, অসুস্থ এবং বিকৃত মস্তিষ্কের বলে আমি মনে করি। এ ধরনের ঘটনায় কিছু ধরনের পুরুষের পরিচয় বেরিয়ে আসছে।

তিনি আরও বলেন, ফেনীতে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ফেনীর মানুষ আন্দোলনের মাধ্যমে আদালত থেকে সুবিচার নিশ্চিত করেছে। আশা করবো, এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতেও ফেনীর মানুষ সোচ্চার থাকবে।  

বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট ও ফেনী জজকোর্টের আইনজীবী এম. শাহজাহান সাজু বলেন, এটি একটি দুঃখজনক ঘটনা। খুনি যেহেতেু ফেসবুক লাইভে খুনের বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, ম্যাজিস্ট্রেটের কাছেও যদি ১৬৪ ধারার জবানবন্ধিতে একই স্বীকারোক্তি দেন, তাহলে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় ঠান্ডা মাথায় খুন করার অপরাধে খুনির ফাঁসি হতে পারে।

শাহজাহান সাজু আরও বলেন, নিহত গৃহবধূর পরিবার চাইলে খুনির সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের জন্য এ মামলা সম্পূর্ণ বিনা পারিশ্রমিকে লড়তে চান তিনি।

তিনি আরও বলেন, নিহতের একটি দেড় বছরের ছোট মেয়ে আছে, বাবা যেহেতু মায়ের খুনের আসামি, আইন অনুযায়ী মেয়েটি তার দাদি-নানির কাছে বড় হবে। যেহেতু তার বাবা মায়ের খুনি, তাই নিরাপত্তার কারণে মেয়েটিকে তার নানির কাছে লালন-পালন জন্য দেওয়া যেতে পারে।

গৃহবধূর বোন রেহানা আক্তার জানিয়েছেন, পাঁচ বছর আগে কুমিল্লার গুণবতী এলাকার আকদিয়া গ্রামের সাহাবুদ্দিনের মেয়ে তাহমিনা আক্তারের সঙ্গে ওবায়দুল হক টুটুলের প্রেমের সম্পর্কে বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের পর থেকে আর্থিক অসচ্ছলতা নিয়ে তাদের পরিবারের মাঝে প্রায় সময় ঝগড়া হয়ে আসছিল। এরইমধ্যে স্বামী টুটুল মেয়ের পরিবারের কাছ থেকে বেশ কিছু টাকাও নেয় কিন্তু আরও টাকা চাইলে তারা অস্বীকৃতি জানায়। একপর্যায় দুপুরে ফেসবুক লাইভে এসে স্বামী টুটুল তার স্ত্রীকে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন। পরে হত্যাকারী টুটুল নিজেই পুলিশকে মুঠোফোনে খবর দিলে পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে তাকে আটক করে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা ও ফেসবুকে প্রচার চালানো মোবাইল জব্দ করা হয়।

তবে ছেলের পরিবারের দাবি, তাহমিনা আক্তারের সঙ্গে অন্য পুরুষের অবৈধ সম্পর্ক থাকায় টুটুল উত্তেজিত হয়ে তার স্ত্রীকে হত্যা করেন। টুটুলের মা লুৎফর নাহার জানান, ছেলের বউয়ের অন‌্য যায়গায় পরকীয়া প্রেমেরে সম্পর্ক ছিল। যার জেরে তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো।

মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন জানান, পারিবারিক কলহের জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবু বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ফেনীর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে, রাতেই নিহতের বাবা সাহাবুদ্দিন বাদী হয়ে টুটুলকে আসামি করে ফেনী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। নিহতের মামা মোজাম্মেল হোসেন বলেন, টুটুল একা তার ভাগ্নিকে খুন করতে পারেন না। এ ঘটনার সঙ্গে তার পরিবারও জড়িত রয়েছেন।

এদিকে ঘটনাস্থল বারাহীপুরে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজনে জানান, সকালে নিহত গৃহবধূকে স্বামীর পরিবারের সবাই মিলে মারধর করে, তখন এলাকাবাসী বাধা দিলে তারা পারিবারিক ব্যাপার বলে এলাকাবাসীকে তাড়িয়ে দেয়। বিকেলেই খুনের ঘটনা ঘটে।

ওবায়দুল হক টুটুল ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন। তাদের ঘরে দেড় বছরের একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। তিনি ওই এলাকার গোলাম মাওলা ভূঁইয়ার ছেলে। বাংলানিউজ