ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | মাতারবাড়ি থেকে চালু হবে প্রথম ফিডার সার্ভিস

মাতারবাড়ি থেকে চালু হবে প্রথম ফিডার সার্ভিস

নিউজ ডেক্স : মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরকে ঘিরে অভ্যন্তরীণ নৌ রুটে কন্টেনার পরিবহনে দেশে প্রথম ফিডার সার্ভিস চালু হবে। চট্টগ্রাম–পানগাঁও নৌ রুটে কন্টেনার পরিবহনে গতি না এলেও অভ্যন্তরীণ ফিডার সার্ভিসে লাখ লাখ টিইইউএস কন্টেনার পরিবাহিত হবে। একই সাথে বাল্ক কার্গো নিয়েও অভ্যন্তরীণ নৌ রুটে জাহাজ চলাচল বাড়বে। নতুন এই রুট কেবল আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্য নয়, দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অভ্যন্তরীণ নৌ রুটে সম্ভাবনা থাকলেও নানা কারণে তা কাজে লাগানো যায়নি। চট্টগ্রাম থেকে অভ্যন্তরীণ নৌ রুটে কন্টেনার পরিবহনের জন্য প্রায় ৩৪০ কোটি টাকা খরচ করে ২০১৩ সালে নির্মাণ করা হয় পানগাঁও কন্টেনার টার্মিনাল। বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে বিআইডব্লিউটিএর মালিকানাধীন ৫৫ একর জায়গার উপর গড়ে তোলা এই কন্টেনার টার্মিনালে প্রত্যাশিত গতি আসেনি। চট্টগ্রাম বন্দরের ঢাকামুখী কন্টেনারের চাপ কমানো, চট্টগ্রাম–ঢাকা মহাসড়কের গাড়ির চাপ কমানো, রাস্তার স্থায়িত্ব বৃদ্ধি, ঢাকা অঞ্চলের আমদানি–রপ্তানিকারকদের খরচ সাশ্রয়সহ বিভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে টার্মিনালটি গড়ে তোলা হয়। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এই টার্মিনালে নিয়মিত কন্টেনার আনা–নেয়ার কথা ছিল।

বিশ্বের নানা দেশ থেকে ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্ট হয়ে চট্টগ্রামে আসা ঢাকা অঞ্চলের কন্টেনারগুলো এখান থেকে নৌ পথে পানগাঁও নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই কার্যক্রমে গত এক দশকেও প্রত্যাশিত গতি আসেনি। সীমিত পরিসরে চট্টগ্রাম থেকে পানগাঁও টার্মিনালে কন্টেনার পরিবাহিত হয়।

অভ্যন্তরীণ রুটে কন্টেনার পরিবহনের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর। এই বন্দরকে ঘিরে দেশে প্রথম ফিডার সার্ভিস চালু হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। মাতারবাড়ি থেকে এই ফিডার সার্ভিস চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা বন্দরে কন্টেনার পরিবহন করতে পারবে। বর্তমানে চট্টগ্রাম–সিঙ্গাপুর, চট্টগ্রাম–কলম্বো, চট্টগ্রাম–পেনাং, চট্টগ্রাম–পোর্ট কেলাং বন্দরে যেসব ফিডার সার্ভিস চলাচল করছে সেগুলোর একটি বড় অংশ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রুটে কন্টেনার পরিবহন করার সুযোগ পাবে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরে ১৬ থেকে ১৮ মিটার ড্রাফটের কন্টেনার ভ্যাসেল বার্থিং নেবে। বিশ্বের নানা দেশ থেকে আসা এসব বড় জাহাজে গড়ে ১০ হাজার টিইউএস কন্টেনার থাকবে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে যেসব ফিডার ভ্যাসেল চলাচল করে সেগুলোতে সর্বোচ্চ আড়াই হাজার টিইইউএস কন্টেনার বহন করে। কোনো কোনো জাহাজ ৮শ থেকে ১ হাজার টিইইউএস কন্টেনার নিয়েও বন্দরে নোঙর করে। অর্থাৎ চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে যেসব ফিডার ভ্যাসেল আসে সেগুলোর ৪ থেকে ১০ জাহাজের পণ্য মাতারবাড়িতে আসা একটি জাহাজ পরিবহন করবে।

তারা বলেন, মাতারবাড়িতে জাহাজ থেকে কন্টেনারগুলো খালাসের পর এগুলো আবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠাতে হবে। প্রতিবেশী দেশগুলোতেও পাঠানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে ৯/১০ মিটার ড্রাফটের কন্টেনার জাহাজ বড় ‘ভরসা’ হয়ে উঠবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা কন্টেনার মাতারবাড়িতে খালাস করা হবে। ওখান থেকে সড়কপথে না এনে বর্তমানে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরে চলাচল করে এমন জাহাজের (ফিডার ভ্যাসেল) মাধ্যমে চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা বন্দরে নিয়ে আসা হবে। ফলে মাতারবাড়ি থেকে চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা বন্দরে গড়ে উঠবে সম্ভাবনাময় ফিডার সার্ভিস।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর দেশে আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্যসহ নানা খাতে সম্ভাবনা তৈরি করছে। ২০২৬ সালে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরে কন্টেনার জাহাজ ভিড়তে শুরু করবে। এই বন্দরে প্রথম দিকেই বছরে ১০ লাখ টিইইউএস পর্যন্ত কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা যাবে। বন্দর সম্প্রসারিত হলে এই সম্ভাবনা আরো বাড়বে। মাতারবাড়িতে খালাস হওয়া কন্টেনারগুলো দেশের অন্য তিনটি বন্দরে পাঠাতে নতুন ফিডার সার্ভিস চালু হবে। অভ্যন্তরীণ রুটে ফিডার সার্ভিস সম্ভাবনার নানা দুয়ার খুলবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। -আজাদী প্রতিবেদন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!