- Lohagaranews24 - https://lohagaranews24.com -

বঙ্গোপসাগরে নিম্নমানের চাল নিয়ে ভাসছে দুটি জাহাজ

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

নিউজ ডেক্স : ত্রিশ হাজার টনেরও বেশি চাল নিয়ে দু’টি মাদার ভ্যাসেল দীর্ঘদিন ধরে বঙ্গোপসাগরে অলস ভাসছে। টেন্ডারের শর্ত লংঘন করে নিম্নমানের চাল পাঠানোয় জাহাজ দু’টি থেকে চাল খালাসে অস্বীকৃতি জানিয়েছে খাদ্য বিভাগ।

একটি সূত্রে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে চালের অভাব আছে টের পেয়ে চাল রপ্তানিকারক দেশগুলোও নানা কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। সরকার শুল্ক প্রত্যাহারের সাথে সাথে বিদেশে চালের বুকিং রেট বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। একই সাথে টেন্ডারের শর্ত লংঘন করে নিম্নমানের চালও পাঠানো হচ্ছে।

খাদ্য বিভাগের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, এমভি থাই বিন বে নামের একটি মাদার ভ্যাসেল ১২ হাজার ২৯০ টন সেদ্ধ চাল নিয়ে গত ৩১ আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছে। জাহাজটি বন্দরের বহির্নোঙরে অলস বসে থেকে চাল বুঝিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু খাদ্য বিভাগ এই চাল গ্রহণ করছে না। অপরদিকে থাইল্যান্ড থেকে একইভাবে সরকারের জন্য ১৯ হাজার ৮৫০ টন সেদ্ধ চাল নিয়ে এমভি ডায়মন্ড–এ নামের অপর একটি মাদার ভ্যাসেল গত ১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছে। এই জাহাজটির চালও সরকার গ্রহণ করছে না। দু’টি জাহাজে সেদ্ধ চাল আমদানি করা হয়েছে। শর্ত ছিল চালগুলো ৪ শতাংশ লালচে থাকবে। কিন্তু জাহাজ আসার পর নমূনা সংগ্রহ করে দেখা গেছে চালগুলো ১২/১৩ শতাংশ লালচে। এর বাইরেও কিছু সমস্যাও রয়েছে। খাদ্য বিভাগের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেছেন, চালগুলোর মান যথাযথ নয়। তাই গ্রহণ করা হচ্ছে না। আমাদের দেশের ক্রাইসিসকে তারা পুঁজি করে ফায়দা হাসিল করতে চাচ্ছে। যে ধরনের চাল দেয়ার কথা বলে টেন্ডারে অংশ নিয়েছিল সেই মানের চাল না দিয়ে কম দামের চাল দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সরকারি পর্যায়ে কথাবার্তা হচ্ছে বলেও তিনি জানান। এ ব্যাপারে খাদ্য বিভাগের চট্টগ্রামের কন্ট্রোলার মোহাম্মদ জহিরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সরকার ওই দু’টি জাহাজের চাল ‘রিজেক্ট করার’ কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, চালগুলো টেন্ডারের শর্তের সাথে না মিলায় সরকার রিজেক্ট করেছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, জাহাজ দু’টি বহুদিন ধরে বহির্নোঙরে আছে। তারা পণ্য খালাস করছে না। আবার কি করবে তাও জানাচ্ছে না।

সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দেশে বছরে তিন কোটি ত্রিশ লাখ টনের বেশি চালের চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে দেশের চাহিদার প্রায় পুরো চালই দেশের কৃষিখাত থেকে পাওয়া যায়। তবে প্রকৃতি ও পরিবেশের উপর ফসল উৎপাদন নির্ভরশীল হওয়ায় কোন কোন বছর কিছুটা ঘাটতি দেখা দেয়। গত কয়েক বছরের তথ্য উপাত্ত থেকে দেখা যায়, দেশে বছরে পাঁচ লাখ টন থেকে ত্রিশ লাখ টন পর্যন্ত চালের ঘাটতি হতে পারে। ফসল ভালো হলে পাঁচ লাখ টন চাল আমদানি করতে হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন কারনে ফসল উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়লে আমদানির পরিমাণ বাড়ে। ভারত, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড এবং মায়ানমার থেকে অধিকাংশ সময় চাল আমদানি হয়।

চলতি বছর নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ফসল উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে করে চালের কিছুটা ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়। বাজারে বাড়তে থাকে চালের দাম। সরকার নিজেও আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে চাল কিনে। অপরদিকে বেসরকারি আমদানিকারকদেরও চাল আমদানিতে উৎসাহিত করে। এতে প্রথমে চালের শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১২ শতাংশ এবং শূণ্য মার্জিনে চাল আমদানির এলসি খোলার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়। পরবর্তীতে আরো দশ শতাংশ শুল্কও প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। এতে করে প্রচুর ব্যবসায়ী ভারত, পাকিস্তান, মায়ানমার, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনাম থেকে চাল আমদানির উদ্যোগ নেয়। আর এই সময় বিদেশি রপ্তানিকারকরা সতর্ক হয়ে ওঠে। তারা চালের দাম বাড়িয়ে দেয়। কোন কোন ক্ষেত্রে টন প্রতি ষাট থেকে আশি ডলারেরও বেশি বাড়িয়ে দেয়া হয়। এতে করে বাংলাদেশে শুল্ক প্রত্যাহার করা হলেও তার সুফল ক্রেতারা পাচ্ছেন না। টন প্রতি আশি’ ডলার বাড়ালেও কেজিতে সাড়ে ছয় টাকা বাড়তি মূল্য বৃদ্ধি ঘটে যায় আমদানি পর্যায়ে। চাল রপ্তানিকারক প্রায় প্রতিটি দেশই চালের রপ্তানি মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। গতকাল প্রাপ্ত তথ্যে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, ভারত চালের দাম ৪০০ ডলার থেকে ৪৮০ ডলারে, বার্মা ৩২৫ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৩৭০ ডলারে, থাইল্যান্ড ৪২৫ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৪৬৫ ডলারে, ভিয়েতনাম ৩৮০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৪৩৫ ডলারে নির্ধারণ করেছে। ফলে বাংলাদেশে শুল্ক প্রত্যাহার হলেও চালের আমদানি মূল্য ঠিকই উচ্চ হারে থেকে যায়।

একাধিক ব্যবসায়ী গতকাল দৈনিক আজাদীর সাথে আলাপকালে বলেন, দেশে চালের সংকট নিয়ে এভাবে ফলাও করে সরকার আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান না করে যদি গোপনে ব্যবসায়ীদের ডেকে চাল আমদানির এলসি খুলতে বলতো তাহলে বিদেশি রপ্তানিকারকেরা এভাবে ‘চালবাজি’ করতে পারতো না। বিষয়টি গোপনে ম্যানেজ করলে অনেক বেশি সুফল মিলতো। আন্তর্জাতিক দরপত্রে যেই দরে চাল কিনেছে সেখানে যে মানের চাল দেয়ার কথা তা না দিয়ে নিম্নমানের চাল গছিয়ে দেয়ার চেষ্টাও এই ‘চালবাজির’ অংশ বলে ব্যবসায়ীরা মনে করছেন। –আজাদী প্রতিবেদন