ফিরোজা সামাদ : তারপর একদিন দেখলাম, এক তরুণ বয়সী অসহায় ছেলে একটি মোটরসাইকেলের ছবি দিয়ে পোস্ট করে লিখলো, “আমার মা হসপিটালে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে। টাকার অভাবে মায়ের চিকিৎসার বিল দিতে পারছি না। এমন কেউ কী নেই? আমার এই মটর সাইকেলটি রেখে কিছু টাকা দেয়ার? আমি একমাসের মধ্যেই টাকাটা ফেরত দিয়ে বাইকটি নিয়ে আসবো! ”
আহা! এমন সকরুণ আর্তনাদ দেখে আমার মন কেমন জানি বিগলিত হয়ে গেলো। আমি আমার এক নাতিকে দেখালাম, “এই ছেলেটিকে চিনিস? ও বললো সামনাসামনি চিনি না। তবে যতদূর জানি টুকটাক সাংবাদিকতায় জড়িত। যাহোক, আমি কমেন্টেই সরাসরি জিজ্ঞেস করলাম তোমার আপাতত কতো টাকার দরকার? সে যাই হোক তার মায়ের চিকিৎসার জন্য বাইক বন্ধক রাখতে না করলাম আর বললাম তোমার বিকাশ নাম্বার দাও , আমিই টাকাটা পাঠিয়ে দিচ্ছি। কৃতজ্ঞতায় আপ্লুত হয়ে বললো, আন্টি আমি বাইকটি কোথায়? কার কাছে রাখতে দেবো? ” আমি বললাম, ” কোথাও রাখতে হবে না, তোমার হাতে যখন টাকা আসবে তখন দিও! ”
তারপর থেকে বেশ কয়েকমাস আমার যে কোনো স্ট্যটাসকে লাইক কমেন্টস দিয়ে ভরিয়ে দিয়ে ঋণ করে চুপ হয়ে গেলো। বাহ্ তারুণ্যের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের কী অপূর্ব সমীকরণ? পরে অবশ্য আমার পরিচয় জেনেছে। কথা বলেছে।
তারপর? তারপর? তারপর? কোনো এক কুক্ষণে সেই অর্থের বিনিময়ে বা বন্ধুত্বের খাতিরেই হোক আমারই বিপক্ষের লোকের বন্ধু হয়ে গেলো। আমরা সবাই জানি বা প্রবাদ রয়েছে, ” শত্রুর বন্ধু সতত শত্রুই হয়,আর শত্রুর মিত্র হয় বন্ধু!” কী চমতকার? ফেসবুক বন্ধুত্বে বা দয়া,মায়া -মমতায় আবদ্ধ হওয়া কখনোই ঠিক কাজ হবে না। এরা জোয়ারের বানের মতো আসে, কিছুক্ষণ থমকে থেকে আবার ভাটির টানে চলে যায়। আমি মনে
করি ফেসবুক বন্ধুত্ব সীমাবদ্ধ থাকুক লাইক ও কমেন্টসে ইনবক্সে নয়, মোবাইলে নয়! ভুল কিছু বললে ।
জীবন থেকে নেয়া ( চলবে)