নিউজ ডেক্স : সোশ্যাল সাইট ফেসবুকের উৎকর্ষের কারণে সারা বিশ্বেই অনলাইন ভিত্তিক অসংখ্য ব্যবসা গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশেও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু এর মধ্যেই প্রতারকরাও এসে গেছে অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসায়। এসব নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধ নিয়মিতই আসছে নানান অভিযোগ। শুধু একটা ফেসবুক পেইজ খুলে মানুষের সরল বিশ্বাসকে পুঁজি করে প্রতারণা করে যাচ্ছে অপরাধীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তেমন কোনো তৎপরতাও নেই এদের বিরুদ্ধে।
এমন চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতাদের আকর্ষণ করে তথাকথিত অনলাইন শপগুলো।
সম্প্রতি ‘ইউনিক শপ’ নামের একটি ফেসবুক পেইজ সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতাণার অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাজধানীর তেজগাঁও এলাকার বাসিন্দা রাইয়াত গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা অনলাইন ইউনিক শপে একটি অপ্পো এফ ৩ প্লাস ব্ল্যাক কালার (যার মূল্য ৩৭০০ টাকা) পছন্দ করে বিজ্ঞাপনে দেওয়া নাম্বার ০১৭৮১-৮৬৩২১৪ এ ফোন করে মোবাইলটি কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
অপরপ্রান্তে ফোন রিসিভ করা নারী উক্ত ক্রেতাকে প্রথমে ১০০ টাকা বিকাশ করার কথা বলে। যথারীতি অভিযোগকারী ক্রেতা উক্ত নাম্বারে ১০০ টাকা বিকাশ করার পর বিষয়টি অবহিত করলে ফোন রিসিভ করা নারী ক্রেতার নাম ঠিকানা টুকে নেয়। এরপর আধঘণ্টা পার হলে ওই নাম্বার থেকে ফোন করে উক্ত নারী এস এ পরিবহনে প্রোডাক্ট পাঠানোর কথা বলে ক্রেতাকে জিজ্ঞেস করে ঢাকায় কোন এলাকা থেকে নিতে ক্রেতার সুবিধা হবে।
ভুক্তভোগী ক্রেতা রাইয়াত আশা করেছিল ঢাকার ভিতর ডেলিভারি ম্যানের মারফত অর্ডারকৃত মোবাইল হাতে পাবে। কিন্তু এস এ পরিবহনে প্রোডাক্ট আসবে জেনে অবাক হলেও জানায় মহাখালী নাবিস্কো শাখা থেকে নিতে সুবিধা হবে বলে জানিয়ে দেন। তখন বলা হয় ডেলিভারীর সময় আজ পার হয়ে গেছে। আপনার প্রোডাক্ট আগামীকাল কুরিয়ার করা হবে আপনি পরশুদিন পেয়ে যাবেন।
দোকানের রিসিপ্টও ভুয়া
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে এস এ পরিবহন মহাখালী শাখা থেকে ক্রেতাকে ফোন করে মোট ৩৭২০ টাকা দিয়ে মোবাইলটি নিয়ে আসতে বলে। ক্রেতা রাইয়াত কন্ডিশনের টাকা পরিশোধ করে মোবাইলটি হাতে নেয়। এরপর প্যাকেট খুলে দেখে অপ্পোর পরিবর্তে স্যামসাং মোবাইল পাঠানো হয়েছে।
সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতা অনলাইন ইউনিক শপের নাম্বারে ফোন করে পরিচয় দিয়ে প্রসঙ্গ উঠালে লাইন কেটে দেয়। এভাবে বারবার ফোন করা হলেও ফোন রিসিভ করেনি। একপর্যায়ে অপরিচত নাম্বার থেকে ফোন করা হলে সেই নারী কন্ঠ জানায়, এটা ডেলিভারী ম্যানের ভুল। কিন্তু ক্রেতা বিষয়টি মানতে নারাজ।
এরপর থেকে সেই নাম্বারে বারবার ফোন করা হলেও প্রতিবারই লাইন কেটে দেয়। এভাবে দুইঘণ্টা পার হবার পর, অন্য আরেকটি নাম্বার থেকে 01781-863214 এ নাম্বারে ফোন করে পুলিশের ভয় দেখালে সেই নারীকণ্ঠ জানায়, আপনি আগামীকাল আপনার অর্ডারের নাম্বারটি পেয়ে যাবেন।
কিন্তু পরদিন শুক্রবার সারাদিন পার হলেও এ বিষয়ে কোন সমাধান হয়নি বলে জানান ভুক্তভোগী ক্রেতা। বিকেলে ফোন করা হলে জানাচ্ছি বলে লাইন কেটে দেয়। এরপর যতবার ফোন করা হয়েছে ততবারই লাইন কেটে দেওয়া হয়েছে। এদিকে অনলাইন ইউনিক শপের ফেসবুক পেইজে ক্রেতা রাইয়াতকে ব্লক করে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
ঠিকানা-পরিচয় হিসেবে শুধু একটুকুই দেওয়া আছে প্রতারক পেইজটিতে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি তাদের কোনো ঠিকানা ও পরিচয় কোনো ক্রেতাকে দেয় না। তারা অর্ডার ডেলিভারী দেয় এস এ পরিবহন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে। সেই প্রোডাক্টটি তারা এলিফ্যান্ট রোড এস এ পরিবহন শাখা থেকে পাঠিয়েছে বলে জানান মহাখালী এস এ পরিবহন শাখা। কুরিয়ারে মারিয়া টেলিকম নামের যে দোকানটির ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে চকরিয়া পৌরসভা মার্কেটে ওই নামে কোনো মোবাইলের দোকান নেই বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।
এর আগে চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি ‘ব্লেজারের বদলে জ্যাকেট, এরপর তাও ফেরৎ এবং… অনলাইন শপের প্রতারণা!’ শিরোনামে প্রায় একই ধরণের প্রতারণার গল্প ছাপা হয়েছিল কালের কণ্ঠ অনলাইনে। অভিযুক্ত ফেসবুক পেইজ সর্বস্ব প্রতিষ্ঠনটির নাম ছিল ‘China Fashion BD†Z E-Commerce Mela’। চট্টগ্রামের এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পদস্থ কর্মকর্তা সোহেল সাখাওয়াতকে পছন্দের ব্লেজারের বদলে নিম্নমানের জ্যাকেট পাঠিয়ে এবং পরে বদলে দেয়ার কথা বলে সেই জ্যাকেটও ফেরত নিয়েছে। কিন্তু পণ্য কিংবা টাকা কোনোটাই আর ফেরত দেয়নি।