- Lohagaranews24 - https://lohagaranews24.com -

পেকুয়ায় কাঠ ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা

নিউজ ডেক্স : পেকুয়ায় পাহাড়ি এলাকায় অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গভীর রাতে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করার পর কুপিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেছে সন্ত্রাসীরা। নিহত ব্যক্তির নাম নেজাম উদ্দিন (৪২)। তিনি উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের পূর্ব ভারওয়াখালী এলাকার ছবির আহমদের পুত্র। জানা যায়, গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে পূর্ব ভারওয়াখালী এলাকার দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহতের স্ত্রী শারমিন বেগম শামিনা বলেন, “আমার স্বামী কাঠের ব্যবসা করেন। তিনি প্রতিদিনের মতোই ঘটনার রাতে পাহাড়ে তার নিজস্ব গাছ পাহারা দিতে গিয়েছিলেন কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে আমার স্বামীকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আসা বারবাকিয়া ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ও ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য পুলিশের খাতায় ফেরারী আসমি বনদস্যু জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী গভীর রাতে আমার স্বামীর উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া গুলি চালিয়ে আমার স্বামীকে হত্যা করে।”

তিনি জানান, পরে তার স্বামীর মাথায় দা দিয়ে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় জোবায়ের আহমদ নামের আরো এক ব্যক্তি আহত হলেও তার আহত হওয়ার বিষয়টি আইনী জটিলতার ভয়ে সম্পূর্ণ গোপন রাখছেন তার স্বজনরা। পেকুয়া থানার উপ-পরিদর্শক সাইফুর রহমান বলেন, “নিহতের বুকে ও বুকের দুই পাশে গুলির চিহ্ন রয়েছে এবং মাথায় দায়ের কোপের আঘাত রয়েছে।”

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, বনদস্যু জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে খুন, ধর্ষণ, মারামারি, বন সহ ৩০টির অধিক মামলা রয়েছে। একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে কিন্তু সরকারি দলের রাজনীতির ছত্রছায়ায় তিনি এলাকায় যাবতীয় অপকর্ম করে বেড়ালেও তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস করে না কেউ। তিনি কথায় কথায় এভাবে মানুষকে খুন করে বসেন। তার ভাই ডাকাত আলমগীর ২০২০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর তার নববধূ সালমাকে পিঠিয়ে হত্যা করলেও পুলিশ তাকে কিছুই করতে পারেনি। ঐ মামলায় বনদস্যু জাহাঙ্গীরও আসামি।

জানা যায়, জাহাঙ্গীর আলম বারবাকিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যানের পদও ভাগিয়ে নেন অস্ত্রের জোরে। একই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতিও তিনি। এলাকায় তার একটি ‘শক্তিশালী সন্ত্রাসী বাহিনী’ রয়েছে বলেও জানা গেছে।

এ বিষয়ে বক্তব্য নেয়ার জন্য জাহাঙ্গীর আলমের মোবাইল ফোনে অনেকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। বারবাকিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা বদিউল আলম জিহাদীর কাছে তার বিষয়ে মন্তব্য চাইলে তিনিও কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি। তবে স্থানীয় বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, নিহত নেজাম উদ্দিন একসময় বনদস্যু জাহাঙ্গীর আলমের সহযোগী ছিলেন।

পরবর্তীতে তার পক্ষ ত্যাগ করে তিনি বিদেশে পাড়ি জমান। দীর্ঘদিন পর তিনি আবারো দেশে এসে গাছের ব্যবসা শুরু করেন। এতেই পাহাড়ি এলাকায় নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গুরু-শিষ্যের মধ্যে দ্বন্দ্বের শুরু।

সর্বশেষ ঘটনার দিন জাহাঙ্গীর বাহিনীর আবুল কালামের সাথে কথা কাটাকাটির জের ধরেই গভীর রাতে খুন হন নেজাম উদ্দিন। এদিকে আজ শনিবার (২৪ এপ্রিল) সকালে পেকুয়া-চকরিয়া সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) তফিকুল আলমের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

এ ব্যাপারে পেকুয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কানন সরকার বলেন, “নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী শারমিন বেগম শামিনা ৮ জনকে আসামি করে থানায় একটি এজাহার দিয়েছেন। এটি মামলা হিসেবে রেকর্ডের কাজ চলমান রয়েছে।”

হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এখনো বিষয়টি তদন্তাধীন তবে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে আমরা তথ্য পেয়েছি।” আজাদী অনলাইন