- Lohagaranews24 - https://lohagaranews24.com -

দৃষ্টিভঙ্গি বদলান, দেশ করোনা মুক্ত হবে!

মুহাম্মদ আবদুল খালেক : করোনা’র থাবায় বিশ্ব কিংকর্তব্যবিমূঢ়। চিকিৎসক এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা হতবিহ্বল দিশেহারা। সামাজিক দুরত্ব, হাত ধোয়া, মুখে মাস্ক পরা এবং ঘরে থাকা ইত্যাদি ব্যবস্থাপত্র দিয়ে বিশেষজ্ঞরা ক্লান্ত। মানুষ আজ বড়োই একা। প্রতিটি বাসা-বাড়ি যেন জীবন্ত কবর। কেন? এই দশা! মানুষত আশরাফুল মাখলুকাত।

পবিত্র কোরানে আল্লাহ বলেন, ‘আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি সুন্দরতম অবকাঠামোয় (সূরা ত্বীন)’। অন্যত্র আল্লাহ আরো বলেন, ‘ হে মানুষ তোমাদের কর্মের প্রতিক্রিয়াতেই জলে-স্থলে বিপর্যয় ও বালা মুসিবত ছড়িয়ে পড়ে (সূরা রূম ৪১)’। সুন্দর এবং সৃষ্টির সেরা মানুষগুলো আজ জলে-স্থলে নানা অপকর্ম অনৈতিক অন্যায় অমানবিক কাজ করে বিশ্বকে অস্থির ও বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এমনকি জন্ত-জানোয়ারের আবাসস্থলকেও বিপদজনক করে ফেলা হয়েছে। দেখা গেছে কখনো কখনো হাতি, বাঘ, বিষাক্ত সাপ ও বিভিন্ন প্রজাতির পশু-পাখিরা লোকালয়ে চলে আসে। মানুষ আজ পাহাড় ও গাছ খেকো হয়ে গেছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ দূষিত হয়ে গেছে। করোনা মানুষের কৃত কর্মের ফসল। আমরা সুযোগ পেলেই অপরাধ করি। জন্তু-জানোয়াররা খাবার গ্রহণের পূর্বে গন্ধ নিয়ে দেখে, খাবারটা খাওয়া যাবে কিনা? আমরা আজ এই বিবেচনা-অনুভূতি পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছি। ‘আরো চাই’-যার হবে হোক; যেভাবেই হোক, অন্যের সম্পদ দখল করছি। বঞ্চিত ও অত্যাচারিত মানুষের দীর্ঘশ্বাসে বিশ্ব আক্রান্ত ও অস্থির। অন্যদিকে অনৈতিক উপার্জনে মানুষ মনুষ্যত্ব হারিয়ে ফেলছে। অনৈতিক উপার্জনে পরিবারে অকল্যাণ ও অভিশাপ নেমে আসে এবং পাশাপাশি অজানা ভয়, টেনশন, দুশ্চিন্তাসহ রোগ-ব্যাধী শরীরে বাসা বাধে। সুতরাং আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে ভেতর থেকে। এমন কোনদিন নেই আমরা হরেক রকম পাপাচারে লিপ্ত হচ্ছি না। শিক্ষিত, অশিক্ষিত, ধার্মিক-অধার্মিক প্রত্যেকেই যার যার অবস্থানে দুর্নীতিবাজ। প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে আল্লাহ পাকের এবং ধর্মীয় গ্রন্থের অবমাননা করছি। অনেকের কাছে ধর্ম যেন আজ অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার।

যুগে যুগে আল্লাহ পাক অগণিত নবী-রাসুলদের মাধ্যমে মানুষকে সতর্ক করেছেন। বিশ্বাসীরা আজাব-গজব থেকে মুক্ত ছিলো। আর অবিশ্বাসীদেরকে ভয়াবহ গজব দিয়ে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরানের সূরা হাক্কা (৪-৮), সূরা কামার, সূরা আহকাফ, সূরা আনকাবুত (৩৬-৩৭, ৩৯-৪০), সূরা শু’আরা (১৮৫-১৮৭) সহ অনেক সূরায় অবিশ্বাসীদের ভয়াবহ পরিণতির কথা উল্লেখ রয়েছে। যেমন আদ সম্প্রদায়কে ৭ দিন ৮ রাতের প্রলয়ঙ্করী ঝড় দিয়ে, সামুদ সম্প্রদায়কে প্রচন্ড আওয়াজ দিয়ে, লূত সম্প্রদায়কে কংকর ঝড় দিয়ে, ফেরাউনকে পানিতে ডুবিয়ে, মাদিয়ানবাসীদেরকে ভয়াবহ ভূমিকম্প দিয়ে, আইকাবাসীকে কালো অন্ধকার দিয়ে এবং কোন সম্প্রদায়ের অবিশ্বাসীদেরকে প্রবল বৃষ্টি, পঙ্গপাল, উকুন ও অগ্নি বৃষ্টি দিয়ে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। অপরাধের মাত্রা যখনই বেড়ে মানবতার বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে তখনই আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে গজব নেমে এসেছে। অন্যদিকে মুক্তির আশ্বাসও কিন্তু পবিত্র কোরানের সূরা তাহরিমে (৮) রয়েছে। আমরা যদি আন্তরিকভাবে ভেতর থেকে দৃষ্টিভঙ্গি বদলিয়ে তওবা অর্থাৎ প্রত্যাবর্তন করি তাহলে আল্লাহপাক ক্ষমা ও পাপমোচন করবেন এবং করোনা মুক্ত করবেন। তখন দৃঢ় বিশ্বাসে বলতে পারবো, ‘দেশ করোনা মুক্ত হবেই’। আমাদেরকে আল্লাহ পাকের কাছে অবশ্যই আত্মসমর্পন করতে হবে। সমর্পিত হতে পারলেই আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে ক্ষমা ও মহা পুরস্কারের ঘোষণা রয়েছে পবিত্র কোরানে (সূরা আহজাব -৩৫)। অন্যথায় করোনার চেয়েও ভয়াবহ বালা-মুসিবত আসতে পারে।

করোনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিটা বদলিয়ে ফেলি। জীবিত-মৃত অবস্থায় কিভাবে আপনজন দূরে সরে যায় নিমিষে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মহান প্রভু সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই- ‘আর কখনো অন্যায় কিংবা দুর্নীতি করবো না’। তাছাড়াও রাষ্ট্রীয়ভাবে সমর্পিত দিবস পালনের ঘোষণা আসা অতীব প্রয়োজন। দেশের সকল জনগণ বাসা-বাড়ি হতে বের হয়ে রাস্তায় কিংবা মাঠে ময়দানে আসবে (সামাজিক দূরত্ব মেনে)। নিজ নিজ ধর্মীয় গুরুদের নিয়ে একই সময়ে সম্মিলিতভাবে মহান প্রভুর দরবারে নিজেকে সমর্পিত করে ক্ষমা প্রার্থনা করবো। সেই সমর্পিত দিবসে নারী, শিশু, পুরুষ সকলেই আসবে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার বিনীত আবেদন, ‘আপনি সেই সমর্পিত দিবসের নেতৃত্ব এবং নির্দেশনা দিবেন।’

আসুন, একটু ভাবুন! ভেতর থেকে নিজেকে বদলাই। মহান প্রভূর কাছে সমর্পিত হয়ে প্রত্যাবর্তনের প্রত্যয় গ্রহণ করি। নিশ্চয় মহান প্রভূ আল্লাহ পাক আমাদেরকে ক্ষমা এবং করোনামুক্ত করবেন।

লেখক : সম্পাদক, LohagaraNews24.com ও অধ্যাপক, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, আধুনগর ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা, লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম।