- Lohagaranews24 - https://lohagaranews24.com -

দিনে জন্ম নিচ্ছে ১২ শিশু

Rohinga-6-630x510

নিউজ ডেক্স : মিয়ানমারে সহিংসতার জেরে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা পরিবারগুলোতে গত এক মাসে ৩৫০টি শিশু জন্ম নিয়েছে। গড়ে প্রতিদিন জন্ম নিচ্ছে ১২টি করে শিশু।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কক্সবাজারের সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে এমন তথ্য জানানো হয়েছে। এর বাইরে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধান ছাড়া স্থানীয়ভাবে আরও শিশু জন্ম নিচ্ছে, যার সঠিক তথ্য প্রশাসনের কাছে নেই। অস্থায়ী ক্যাম্পগুলোতে ঘরে ঘরে আছে একজন করে গর্ভবতী নারী। প্রায় ৭০ হাজার গর্ভবতী মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসেছে এমন তথ্য আছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কাছে।
এত নবজাতক এবং প্রসূতির স্বাস্থ্যঝুঁকি যাতে সৃষ্টি না হয়, তা ঠিক রাখাই এখন কক্সবাজারের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের কাছে প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এ পর্যন্ত জন্ম নেওয়া নবজাতকের মধ্যে মাত্র একটি শিশু ছাড়া আর কোন মৃত্যুর তথ্য নেই স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে। গড়ে প্রতিদিন জন্ম নিচ্ছে ১২টি করে শিশু
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আব্দুস সালাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি শুক্রবার উচ্চপর্যায়ে যে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি তাতে ২৫ আগস্ট থেকে রোহিঙ্গা আসা শুরু হওয়ার পর এই পর্যন্ত ৩৫০টি শিশুর জন্ম হয়েছে বলে তথ্য দেওয়া হয়েছে। গড়ে প্রতিদিন ১২টি করে শিশু জন্মের বিষয় আমার নোটিশে এসেছে। এর বাইরে স্থানীয়ভাবে অথবা ধাত্রীর মাধ্যমে ডেলিভারি হচ্ছে, যেগুলো আমার নোটিশে আসেনি। এছাড়া প্রায় ৬০-৭০ হাজার গর্ভবতী রোহিঙ্গা নারী আছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।’
বৃহস্পতিবার দুপুরে উখিয়া উপজেলার কুতুপালং কমিউনিটি ক্লিনিক ও নারীবান্ধব সেবাকেন্দ্রে একটি ছেলেশিশুর জন্ম দেন মিয়ানমারের মংডু জেলার পোয়াখালী থেকে আসা রেজিয়া বেগম। একদিন আগে রেজিয়ার বোন মাবিয়াও একই সেবাকেন্দ্রে জন্ম দিয়েছেন একটি ছেলেশিশু।
উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বৃহস্পতিবার দুপুরে মিয়ানমারের মংডু জেলার কাউয়ারবিল থেকে আসা জান্নাত আরা একইসঙ্গে দুই সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। এর আগে সকালে একটি ছেলেশিশুর জন্ম দেন মিয়ানমারের মংডু জেলার নারিবিল থেকে আসা হাবিবা।
প্রতিদিন বিভিন্ন অস্থায়ী কেন্দ্রে, কমিউনিটি ক্লিনিকে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, বিভিন্ন এনজিওর ক্যাম্পে, আদ্‌-দ্বীন হাসপাতালের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এবং কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নবজাতকের জন্ম দিচ্ছেন রোহিঙ্গা নারীরা। প্রতিটি রোহিঙ্গা পরিবারে রয়েছে নবজাতক
উখিয়ার কুতুপালং কমিউনিটি ক্লিনিক ও নারীবান্ধব সেবাকেন্দ্রের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার অজিত বড়ুয়া বলেন, প্রতিদিন ২০০-২৫০ রোহিঙ্গা রোগী এখানে আসছে। এর মধ্যে প্রতিদিন ২৫-৩০ জন গর্ভবতী আসছে।
উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র স্টাফ নার্স হাবিবা জান্নাত জানান, গত এক মাসে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৪ জন রোহিঙ্গা নারী ১৫টি সন্তান প্রসব করেছেন।
রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা সেবায় উখিয়া উপজেলায় খোলা ২১টি ক্যাম্পের মধ্যে বালুখালী, কুতুপালং, রেজিস্টার্ড রোহিঙ্গা হেলথ ক্যাম্প এবং এমএসএফ ক্লিনিকে ডেলিভারির সুবিধা আছে। এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও ডেলিভারি করা হচ্ছে।
উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ৬টি জায়গায় আমরা ডেলিভারির ব্যবস্থা রেখেছি। ২৫ আগস্টের পর থেকে ৭০ জনের মতো ডেলিভারি হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৩ জন, বালুখালীতে ১১ জন, পালংখালীতে ৪ জন, রোহিঙ্গা হেলথ ইউনিটে ২৬ জন এবং এমএসএফ ক্লিনিকে ৬ জনের ডেলিভারি হয়েছে। নারী-শিশুদের স্বাস্থ্য ঠিক রাখাটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ ।
টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অধীনে খোলা অস্থায়ী ক্যাম্পগুলোতে অবশ্য ডেলিভারির সুবিধা নেই। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং হ্নীলা ইউনিয়নে তিনটি কমিউনিটি ক্লিনিকে রোহিঙ্গা নারীদের প্রসব করানো হচ্ছে।
২৫ আগস্টের পর থেকে টেকনাফে ১৭৫ জন রোহিঙ্গা নারী সন্তান জন্ম দিয়েছেন বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা.সুমন বড়ুয়া।
এদিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. শাহীন আব্দুর রহমান চৌধুরী বলেন, হাসপাতালে ২৫ আগস্টের পর থেকে ২১ জন রোহিঙ্গা নারীর ডেলিভারি হয়েছে। সবগুলোই নরমাল ডেলিভারি। -সুপ্রভাত বাংলাদেশ