- Lohagaranews24 - https://lohagaranews24.com -

টিকা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছে

নিউজ ডেক্স : ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার টিকার সরবরাহ সংকটে টিকাদান কার্যক্রম নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। এর মাঝে বিভিন্ন উদ্যোগে টিকা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছে। রাশিয়ার তৈরি করোনাভাইরাসের টিকার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দ্রুততম সময়ে চীনের উৎপাদিত টিকা চেয়েছে বাংলাদেশ। টিকা উৎপাদনে চীনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ নিতে বাংলাদেশ আগ্রহী বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

তবে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন জানান, চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে টিকা আনার উদ্যোগ চলছে। তবে প্রক্রিয়া শেষে টিকা আসতে দুই সপ্তাহ সময় লাগবে। এর আগে দেশে কোথাও থেকে টিকা আসছে না। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।

রাশিয়ার টিকা অনুমোদন : রাশিয়ার তৈরি করোনার টিকা ‘স্পুৎনিক-ভি’ আমদানি ও জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিল বাংলাদেশ সরকার। আগামী মে মাসে এই টিকার ৪০ লাখ ডোজ বাংলাদেশে আসবে বলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন।

গতকাল তিনি বলেন, গত ২৪ এপ্রিল এই টিকা ব্যবহারের অনুমোদনের জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে আবেদন করা হয়েছিল। পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি কমিটির সভায় আজ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সভায় এ টিকার সবকিছু পুক্সখানুপুক্সখভাবে আলোচনা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল রিপোর্ট, ফেইজ ওয়ান, ফেইজ-টু, ফেইজ থ্রির রিপোর্ট এগুলো ইভাল্যুয়েশন করা হয়েছে। আমরা আজ এই টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিলাম। এখন এটা বাংলাদেশে আমদানি ও ব্যবহারে কোনো বাধা রইল না। আশা করছি মে মাসের মধ্যেই আমরা এই টিকা পেয়ে যাব।

‘স্পুৎনিক-ভি’ হলো করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় টিকা, যা বাংলাদেশে মানুষের ওপর প্রয়োগের অনুমোদন দেওয়া হলো। এর আগে গত ৮ জানুয়ারি ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার টিকা আমদানি ও জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছিল সরকার। সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি টিকা কোভিশিল্ড দিয়েই ফেব্রুয়ারিতে দেশে গণ টিকাদান শুরু হয়। তবে সামপ্রতিক সময়ে সরবরাহ সংকটে নতুন চালান না পাওয়ায় অন্য উৎস থেকে টিকা আনার জন্য উদ্যোগী হয় সরকার। তার অংশ হিসেবেই বাংলাদেশে ‘স্পুৎনিক-ভি’ প্রয়োগের অনুমতি দেওয়া হলো। এই টিকা এখনও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায়।

মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন, রাশিয়ার এই টিকাও দুই ডোজ নিতে হয়। প্রথম ডোজ দেওয়ার ২১ দিন পর দ্বিতীয় ডোজ। টিকা সংরক্ষণ করতে হয় ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায়। মস্কোর গামালিয়া ইনস্টিটিউটের তৈরি করা ওই টিকা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ৯১ শতাংশ কার্যকারিতা দেখিয়েছে। তিনি বলেন, আমরা দেখতে পেয়েছি, এদের এফিক্যাসি স্ট্যান্ডার্ড ভালো। এই টিকার সেইফটি মার্জিনও ভালো। সার্বিক বিবেচনা করে আমাদের দেশে, সারা বিশ্বে যে মহামারী চলছে সে বিবেচনায় রেখেই আমরা এই টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছি।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম ডোজ দেওয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে স্পুৎনিক টিকা দেওয়া যাবে কিনা জানতে চাইলে ঔষধ প্রশাসনের মহাপরিচালক বলেন, এ বিষয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে, ন্যাশনাল ইমিউনাইজেশন টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজারি গ্রুপ, তারা সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হলো যারা অক্সফোর্ডের টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তারা দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে অক্সফোর্ডের টিকাই নেবেন।

তিনি জানান, স্পুৎনিক টিকা আমদানি করা হবে সরকারিভাবে। এ বিষয়ে সরকারের একটি কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটির মাধ্যমে সরকারি পর্যায়ে যোগাযোগ করে কত পরিমাণ আসবে, কত দাম হবে তা নির্ধারণ করে আমদানি করা হবে। দাম কী হবে তা ঠিক করবে সরকারের ওই কমিটি।

বাংলাদেশে এই টিকা উৎপাদনের কোনো সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে কথাবার্তা চলছে। বাংলাদেশে পপুলার, ইনসেপ্টা এবং হেলথকেয়ার টিকা তৈরি করতে পারে। ইনসেপ্টা রাশিয়ার সঙ্গে এরই মধ্যে কথাবার্তা শুরু করেছে। তারা বলেছে আমাদের দেশে টিকা তৈরি করা যায় কিনা। টেকনোলজি ট্রান্সফারও হতে পারে, আবার বাল্ক এনে ফিলার ফিনিশও হতে পারে। কিনে এনেও হতে পারে। ইনশাআল্লাহ আমাদের দেশেই এই ভ্যাকসিন তৈরি হবে।

শুধু স্পুৎনিক নয়, আরও কয়েকটি দেশের সঙ্গে টিকা নিয়ে কথা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, চীনের সিনোফার্মার টিকার অনুমোদনের ব্যাপারেও আমরা কাজ করছি। আমরা হয়ত খুব শিগগির এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসতে পারব।

কেনা টিকার বাইরে কোভ্যাক্সের আওতায় ফাইজারের এক লাখ ডোজ টিকা মে মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে দেশে পৌঁছাবে বলে সরকার আশা করছে। এছাড়া চীনের সিনোফার্ম বাংলাদেশকে ৫ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে দিচ্ছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম জানিয়েছেন।

চীনের কাছে দ্রুততম সময়ে টিকা চায় : চীনের কাছে দ্রুততম সময়ে টিকা চাওয়া হয়েছে এবং তারা সহায়তা দেওয়ার কথা জানিয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। গতকাল নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এ তথ্য জানান।

টিকা নিয়ে চীনের উদ্যোগে ছয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন যোগ দেন। গতকাল দুপুরে ভার্চুয়ালি এ বৈঠক হয়। এতে বাংলাদেশ, চীন, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা যোগ দেন। বৈঠক নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের অবহিত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

মোমেন জানান, বৈঠকে চীন ও দক্ষিণ এশিয়ার সমন্বয়ে কোভিড ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল ফ্যাসিলিটি গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যাদের প্রয়োজন হবে এখান থেকে মেডিক্যাল সাপোর্ট নেবে। তিনি বলেন, চীনের অভিজ্ঞতার আলোকে পোস্টকোভিড দারিদ্র্য দূরীকরণ সেন্টার গঠন হবে। গ্রামীণ জনপদে ব্যবসা বাড়াতে ই-কমার্স স্প্রেড করানোর প্রোগ্রাম করা হবে যেন গ্রামের লোকের ব্যবসাও ভালো থাকে।

তিনি বলেন, ডব্লিউএইচওর অনুমোদন ছাড়া কোনো টিকা নিলে বাংলাদেশ ইমার্জেন্সি ভিত্তিতে প্রয়োজনে অনুমতি দেবে। আমেরিকা অ্যাস্ট্রোজেনেকার কিছু টিকা বিক্রি করবে। আমরা সেটা আনারও চেষ্টা করব। এছাড়া ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে বাকি টিকা আনার বিষয়ে। অন্য দেশগুলো থেকে টিকা আনার বিষয়েও প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়ে রেখেছেন। আমরা জনগণের মঙ্গলের জন্য যেখান থেকে আগে পাব, সেখান থেকেই টিকা নিয়ে আসব।

বৈঠকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে রোহিঙ্গা ইস্যু তুলে ধরে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠানের অনুরোধ করা হয়েছে। তিনি ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, বৈঠকে চীনা উদ্যোগে যোগ দেওয়ার জন্য ভারতকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তারা চাইলেই এই উদ্যোগে যোগ দিতে পারেন।

টিকা উৎপাদনে যৌথ উদ্যোগ নিতে আগ্রহী বাংলাদেশ : করোনার টিকা সম্পর্কে গবেষণা ও উৎপাদনে চীনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ নিতে বাংলাদেশের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। গতকাল বঙ্গভবনে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেঙ্গহি সাক্ষাতে এলে এ কথা বলেন রাষ্ট্রপতি। বঙ্গভবন প্রেস উইং এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এ সাক্ষাতের কথা জানায়।

করোনা মহামারি মোকাবিলায় দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশ এ ব্যাপারে একসঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। করোনার ভ্যাকসিন সম্পর্কে গবেষণা ও উৎপাদনে যৌথ উদ্যোগ নিতেও আগ্রহী বাংলাদেশ।

চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারি মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সার্বিক সহযোগিতা করতে আগ্রহী চীন। তিনি বলেন, চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে কৌশলগত সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে চীন। এছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানেও চীন কাজ করে যাচ্ছে।

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীনের সহযোগিতা প্রত্যাশা করে রাষ্ট্রপতি বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক খুবই ভালো। এ সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরাতে চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন চীন এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।