- Lohagaranews24 - https://lohagaranews24.com -

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পরিচালনায় নিয়োগ করা হবে প্রশাসক

নিউজ ডেক্স : বর্তমান পর্ষদের মেয়াদ শেষে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) পরিচালনায় প্রশাসক নিয়োগ করা হবে। নিয়োগকৃত প্রশাসককে সহযোগিতার জন্য আলাদা একটি পরিষদও গঠন করা হবে। এ বিষয়ে শীঘ্রই সার্কুলার জারি করবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

তবে প্রশাসক হিসেবে মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীনকে নিয়োগ করা হবে, নাকি অন্য কেউ? তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী। অবশ্য আইনগতভাবে প্রজাতন্ত্রে কর্মরত প্রথম শ্রেণির যেকোনো কর্মকর্তা অথবা উপযুক্ত যেকোনো ব্যক্তিকেই প্রশাসক নিয়োগের সুযোগ আছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চসিকের বর্তমান পর্ষদের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৫ আগস্ট। এ সময়ের মধ্যে স্থগিত হওয়া নির্বাচন করা সম্ভব হবে না বলে গতকাল মঙ্গলবার চিঠি দিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) জানিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে। গত ২৯ মার্চ এ নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। করোনা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় ২১ মার্চ নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেছিল ইসি।

এদিকে নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় প্রশ্ন উঠে অন্তর্বর্তীকালীন তথা পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত সময়ে সিটি কর্পোরেশন কিভাবে পরিচালিত হবে? এক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসক নিয়োগ করা হবে নাকি বর্তমান পর্ষদের মেয়াদ বাড়ানো হবে সেটাই ছিল প্রশ্ন। তবে বর্তমান পর্ষদের মেয়াদ বাড়ানোর গুঞ্জন ছিল বেশি। এক্ষেত্রে বলা হচ্ছিল, করোনা পরিস্থিতির কারণেই নির্বাচন স্থগিত হয়। আবার করোনাকালীন এই সময়ে মাঠ পর্যায়ে সার্বক্ষণিকভাবে থেকে দায়িত্ব পালন করেন মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন। এক্ষেত্রে প্রশংসাও কুড়ান তিনি। তাই অন্তত করোনাকালীন কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষায় অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্যও বর্তমান পর্ষদের মেয়াদ বাড়ানোর গুঞ্জণ ওঠে। প্রশাসক নিয়োগ করা হলেও বর্তমান মেয়রকেই সেখানে নিয়োগ করা হচ্ছে কিনা সেটা নিয়েও আছে আলোচনা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ৫ আগস্টের আগে নির্বাচন করা সম্ভব হবে কি না সেটা জানতে চেয়ে আমরা নির্বাচন কমিশনকে একটি পত্র দিয়েছিলাম। তারা ফেরত পত্রে আমাদের জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে এসময়ের মধ্যে আর নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। এখন সিটি কর্পোরেশন আইনে বলা আছে, যদি কোন সিটি কর্পোরেশনের মেয়াদ শেষ হয় তাহলে ওখানে প্রশাসক নিয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি প্রশাসককে সহযোগিতা করার জন্য একটা পরিষদও গঠন করা যেতে পারে। এখন আমরা আইন মোতাবেক আগাচ্ছি। মেয়াদোর্ত্তীণ হওয়ার আগেই প্রশাসক নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। বর্তমান মেয়রকে প্রশাসক নিয়োগের সম্ভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা সম্পূর্ণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ওপর নির্ভর করবে। আইনে বলা আছে, যে প্রশাসক নিয়োগ করা হবে সেখানে সরকারি কর্মকর্তাও হতে পারেন এবং কোন ব্যক্তিকেও মনোনয়ন দেয়া যাবে। এখন প্রশাসক নিয়োগের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী যেভাবে নির্দেশনা দেন সেভাবে কাজ করবো।

এদিকে গতকাল ইসির উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণজনিত কারণে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত চলতি বছরের ২৯ মার্চ নির্ধারিত চট্টগাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন ২১ মার্চ জারি করা প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে স্থগিত করা হয়েছিল। বর্তমানেও করোনার প্রাদুর্ভাব অব্যাহত থাকায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং অতিবৃষ্টি ও পাহাড় ধসের আশঙ্কা বিবেচনায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়াদকালের মধ্যে অর্থাৎ এ বছরের ৫ আগস্টের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হবে না।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান তথা পঞ্চম পর্ষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল। এতে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম নাছির উদ্দীন। পরবর্তীতে ৬ মে শপথ নেন তিনি। তবে আইনি বাধ্যকতার কারণে সাথে সাথে দায়িত্বগ্রহণ করেননি। ওই বছরের ২৬ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্বগ্রহণ করেন তিনি এবং ৬ আগস্ট প্রথম সাধারণ সভা করেন। ওই হিসেবে আগামী ৫ আগস্ট মেয়াদ শেষ হবে।

এদিকে স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) অ্যাক্ট-২০০৯ এর ৩৪ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কর্পোরেশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববতী ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। ওই হিসেবে আগামী ৫ আগস্টের পূর্বে নির্বাচন করার আইনি বাধ্যবাধকতা ছিল।

এদিকে মেয়াদ শেষ হলে সিটি কর্পোরেশন পরিচালনায় প্রশাসক নিয়োগের বিষয়ে স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) অ্যাক্ট-২০০৯ এর ২৫ নং অনুচ্ছেদে নির্দেশনা আছে। এতে বলা হয়েছে, ‘সিটি কর্পোরেশন গঠিত না হওয়া পর্যন্ত কার্যাবলী সম্পাদনের উদ্দেশ্যে একজন উপযুক্ত প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ প্রদান করা যাবে। সরকার প্রয়োজনবোধে, যথাযথ বলে বিবেচিত হয় এমন সংখ্যক সদস্য সমন্বয়ে গঠিত কমিটিকে প্রশাসকের কর্ম সম্পাদনে সহায়তা প্রদানের জন্য নিয়োগ করতে পারবে। প্রশাসক এবং কমিটির সদস্যবৃন্দ (যদি থাকে) যথাক্রমে মেয়র ও কাউন্সিলরের ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব পালন করবে। অবশ্য ২০১১ সালে আইনটির একই অনুচ্ছেদের একটি ধারা সংশোধন করা হয়। এতে বলা হয়, ‘একজন উপযুক্ত ব্যক্তি বা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ দেয়া যাবে।’ অর্থাৎ সংশোধন করে সরকারি কর্মকর্তার বাইরে যে কোন ব্যক্তিকেও প্রশাসক নিয়োগ করা যাবে। তবে নিযুক্ত প্রশাসক কোনভাবেই একের অধিক বার বা ১৮০ দিনের অধিক সময়কাল দায়িত্বে থাকতে পারবে না বলে স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) অ্যাক্ট-২০০৯ এ উল্লেখ আছে।

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ জানিয়েছেন, পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান নির্বাচিত পর্ষদের দায়িত্ব পালনের সুযোগ আছে। সেখানে আইনি কোন বাধাও নেই। তিনি বলেন, এখন যেহেতু অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তাই সরকার হয়তো সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন দিতে চাইবে না। নির্বাচন পিছনোর একটা সার্কুলার হয়তো আসবে। সরকার নির্বাচন কমিশনকে বলবে এবং নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পেছাবে। কিন্তু কথা হচ্ছে, সিটি কর্পোরেশন চলবে কিভাবে? এক্ষেত্রে দুটো দিক আছে। প্রথমত প্রশাসক নিয়োগ দেয়া। দ্বিতীয়ত বর্তমান যে পর্ষদ আছে তারা পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যাওয়া। এখন প্রশাসক নিয়োগ হওয়াটা খুব বেশি সামনে আসবে বলে মনে হয় না। কারণ, অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সম্পূর্ণ একটা নির্বাচিত কাউন্সিল আছে তাদের জায়গায় অনির্বাচিত প্রশাসক দিয়ে হয়তো হঠাৎ করে প্রয়োজনীয় কাজগুলো করতে পারবে না। বাধার সম্মুখীন হবে। তিন-চার মাসের জন্য প্রশাসক দিয়ে ভালো সুফল পাওয়ার সম্ভাবনা কম। সেকারণে হয়তো সরকার দ্বিতীয় পথটাই বেছে নিতে পারে। অর্থাৎ এখন যারা আছে তাদের কাজ চালিয়ে যেতে বলবে। সেক্ষেত্রে আইনি বাধাও নেই।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, ১৮৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম পৌরসভা কালের বির্বতনে ‘চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন’ হয়ে ১৯৮৯ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে রূপান্তরিত হয়। গত ১৫৭ বছরের বিভিন্ন সময়ে ২৪ জন প্রশাসক এখানে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ নির্বাচিত মেয়র দায়িত্ব গ্রহণ না করা পর্যন্ত ১৯৯৩ সালের ২১ ডিসেম্বর ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৪ সালের ১০ মার্চ পর্যন্ত প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তৎকালীন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ওমর ফারুক। দৈনিক আজাদী