- Lohagaranews24 - https://lohagaranews24.com -

চট্টগ্রামে বিদেশগামীদের ভোগান্তি বাড়বে

নিউজ ডেক্স : বিদেশ যেতে কোভিড নেগেটিভ সনদ নেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিমানবন্দরে এই সনদ দেখিয়ে প্রবেশ করে পরবর্তী কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। আগামী ২৩ জুলাই থেকে করোনা পরীক্ষার সনদ ছাড়া কাউকে বিদেশ যেতে দেয়া হবে না। চট্টগ্রামে এই দায়িত্ব শুধুমাত্র ফৌজদারহাটস্থ বিআইটিআইডিকে দেয়া হয়েছে।

একটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়ায় লক্ষাধিক প্রবাসীসহ বিদেশগামী হাজার হাজার মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। একইসাথে স্বাভাবিক কার্যক্রমের বাইরে বিদেশগামী সুস্থ মানুষদের করোনা পরীক্ষা করতে গিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠান ফৌজদারহাটস্থ বিআইটিআইডিকে বাড়তি চাপের মুখে পড়তে হবে। বিদেশগামীদের নমুনা পরীক্ষার জন্য জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে চালু করা একটিমাত্র রেজিস্ট্রেশন বুথ দিয়ে কতটুকু সামাল দেয়া যাবে তা নিয়ে সংশয় ব্যক্ত করা হয়েছে। সাহেদ-সাবরিনার প্রতারণার জের ধরে দেশের কয়েক লাখ মানুষকে নয়া এই ভোগান্তির শিকার হবে বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।

তবে করোনা পরীক্ষায় সংকট না হলেও বিশেষ একটি সিদ্ধান্ত বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করছে। দেশের সরকারি বেসরকারি পঞ্চাশটিরও বেশি ল্যাবে করোনা পরীক্ষা করা হয়। বিদেশগামীদের জন্য দেশের ১৬টি ল্যাবের রিপোর্টই গ্রহণ করা হবে। এর বাইরে কোন রিপোর্ট বিমানবন্দরে গ্রহণযোগ্য হবে না। উক্ত ল্যাবের মধ্যে চট্টগ্রামে রয়েছে একটি মাত্র ল্যাব। চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় ১৫ লক্ষাধিক প্রবাসী রয়েছে। এদের মধ্যে লক্ষাধিক প্রবাসী করোনার আগে দেশে এসে আটকা পড়েছেন। তাঁরা নিজেদের কর্মস্থলে ফেরার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। একইসাথে চট্টগ্রাম থেকে প্রতি মাসে পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি মানুষ বিশ্বের নানা দেশে ভ্রমণ করতে যান। এদের অনেকেই ব্যবসা বাণিজ্য এবং চিকিৎসার মতো জরুরি প্রয়োজনে বিদেশ যান। বেড়াতেও যান বহু মানুষ। সরকারি উক্ত সিদ্ধান্ত বিপুল সংখ্যক মানুষকে সংকটে ফেলেছে। গ্রাম-গঞ্জের বহু লোকের পক্ষে নমুনা দিয়ে রিপোর্ট সংগ্রহ করে বিদেশ যাওয়া একটি অগ্নিপরীক্ষার মতো। চট্টগ্রামে ফৌজদারহাটস্থ বিআইটিআইডি ছাড়াও ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়, চমেক হাসপাতাল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি ক্লিনিক-হাসপাতালের মধ্যে ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল ও শেভরন নমুনা পরীক্ষা করে। চট্টগ্রাম নগরীসহ গ্রামগঞ্জের বিভিন্নস্থানে রয়েছে নমুনা সংগ্রহের বুথ। কিন্তু বিদ্যমান সুবিধার পুরোটা ব্যবহার না করে শুধুমাত্র জেনারেল হাসপাতালে একটি বুথে নমুনা সংগ্রহ এবং বিআইটিআইডির একটি মাত্র ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করে প্রাপ্ত রিপোর্ট নিয়েই বিদেশগামীদের ভ্রমণ করতে হবে।

চট্টগ্রাম বিআইটিআইডিতে দুইটি মেশিনে দৈনিক সর্বোচ্চ তিনশ’ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করতে পারে। করোনাকালের স্বাভাবিক সময়ে প্রতিষ্ঠানটিকে ভয়াবহ রকমের জট সামাল দিতে হয়েছে। অবশ্য বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে কোন জট নেই। একদিনের মধ্যে করোনা রোগী কিংবা উপসর্গ আছে এমন রোগীদের রিপোর্ট প্রদান সম্ভব হচ্ছে। স্বাভাবিক এই কার্যক্রমে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক বিদেশগামী মানুষের রিপোর্ট তৈরি করতে হলে প্রতিষ্ঠানটিকে আবারো ভয়াবহ রকমের চাপে পড়তে হবে।

এবিষয়ে গতকাল বিআইটিআইডি ল্যাব প্রধান ডা. শাকিল আহমেদ বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠান এটি। সরকারি সিদ্ধান্ত আমরা বাস্তবায়ন করবো। জেলা সিভিল সার্জন অফিস থেকে আমাদের নমুনা পাঠালে জরুরি ভিত্তিতে তা করে দেয়ার চেষ্টা করবো। তবে কতটুকু চাপ সামাল দিতে পারবো তা এখন বলা সম্ভব নয়।

সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, আমাদের অফিসে বিদেশগামীদের পাসপোর্ট টিকেট দেখে রেজিস্ট্রেশন করবো। এরপর নমুনা সংগ্রহের জন্য জেনারেল হাসপাতালে পাঠাবো। ওখানে নমুনা দিয়ে উনি চলে যাবেন। আমরা নমুনা বিআইটিআইডিতে পাঠাবো। রিপোর্ট আসলে আমরা রিপোর্ট প্রদান করবো। তিনি বলেন, আপাতত জেনারেল হাসপাতালের একটি বুথেই নমুনা সংগ্রহ করা হবে। চাপ বাড়লে সরকারি সিদ্ধান্তে বুথ বাড়ানো হতে পারে। আপাতত এটিই সিদ্ধান্ত।

বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন একাধিক বিদেশগামী। গতকাল নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা বলেন, বিদেশ যেতে কোভিড সনদ লাগবে ঠিক আছে, কিন্তু তা শুধুমাত্র একটি প্রতিষ্ঠানেই পরীক্ষা করতে হবে তার কি মানে আছে? চট্টগ্রামে আরো সরকারি প্রতিষ্ঠান আছে। বেসরকারি মানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল কিংবা শেভরন কিছু টাকার জন্য কোভিড রিপোর্ট নিয়ে অনিয়ম করবে বলে মনে হয় না। তাই বিদেশগামীদের করোনা পরীক্ষায় অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি মানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়িত্ব দেয়া যেতো। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়িত্ব না দিলেও নমুনা পরীক্ষার ব্যাপারটি বিকেন্দ্রিকরণ করার সুযোগ রয়েছে।

তাঁরা বলেন, রাউজান, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া কিংবা মীরসরাই থেকে নমুনা পরীক্ষার জন্য মানুষকে শহরের সিভিল সার্জন অফিসে আসতে হবে। অথচ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নমুনা সংগ্রহের সুযোগ রয়েছে। ওখান থেকে নমুনা নিয়ে তা পরীক্ষা করে রিপোর্ট প্রদান করা হলে মানুষের ভোগান্তি কিছুটা কমতো।

এবিষয়ে চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য প্রশাসনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা গতকাল বলেন, বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। দেশের ভাবমূর্তির সাথে জড়িত। ইতোমধ্যে আমাদের দেশের ভাবমূর্তি নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই সরকার আর কোন রিক্স নিতে চাচ্ছে না। বিদেশগামীদের রিপোর্ট যাতে শতভাগ অথেনটিক হয় সেজন্যই বিশেষ এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তবে তিনি নমুনা সংগ্রহের ব্যাপারটি আরো বিস্তৃত করা যায় কিনা তা ভেবে দেখা দরকার বলে স্বীকার করেন। দৈনিক আজাদী