- Lohagaranews24 - https://lohagaranews24.com -

চট্টগ্রামের গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই, নেয়া হচ্ছে দ্বিগুণ ভাড়া

নিউজ ডেক্স : বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব এড়াতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী পরিবহন করার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। এজন্যে অর্ধেক যাত্রী বহনের পাশাপাশি ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির নির্দেশনা দেয় মন্ত্রণালয়। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই চট্টগ্রামের গণপরিবহনগুলোতে। বিআরটিএ নির্দেশিত রোড পারমিটের যাত্রী সংখ্যা অনুপাতের চেয়ে বেশি যাত্রী বহন করলেও বর্ধিত ৬০ শতাংশ থেকে দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।

করোনা প্রাদুর্ভাবের এই সময়ে নগরের জনজীবন প্রায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে জানিয়ে গণপরিবহনের বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। সচেতন মহল বলছে, করোনাকালের সুযোগ দিয়ে বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী যাত্রীবাহী বাস, মিনিবাস ও কিছু ছোট গাড়ির ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এখন হয় স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে পালন করা হোক, অন্যথা গাড়ির বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার করে নেওয়া হোক।

রোববার চট্টগ্রামের বিভিন্ন রুটে যাতায়াতকারী যাত্রী ও গাড়ির শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নগরীর বিভিন্ন রুটে চলাকালী লোকাল বাস সার্ভিসগুলোতে ৬০ শতাংশ বর্ধিত না নিয়ে সরাসরি দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছে যাত্রীদের কাছ থেকে। ১০নং রুটে চলাচলকারী বাসগুলো বহদ্দারহাট থেকে আগ্রাবাদ যাওয়া পর্যন্ত ভাড়া আগে ৯ টাকার স্থলে বর্তমানে নেওয়া হচ্ছে ১৮ টাকা। আবার একই গাড়িতে যারা দাঁড়িয়ে চড়েন তাদের কাছ থেকে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হয়। তাছাড়া উঠানামা ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ১০ টাকা করে। ওই রুটে চলাচলকারী মেট্রোপ্রভাতী সার্ভিসে আগে বহদ্দারহাট থেকে আগ্রাবাদ পর্যন্ত ২০ টাকা ভাড়া নিত, এখন নিচ্ছে ৩৩টাকা। কিন্তু সিটিং সার্ভিসের কথা বলে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে আগে থেকেই অধিক ভাড়া নিচ্ছে পরিবেহন সার্ভিসটি।

৪নং রুটে চলাচলকারী লেগুনাগুলোতেও বাসের মতো দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এসব লেগুনা গাড়ির মধ্যে একপাসে দুইটি ও অন্যপাসে এক সিটের আসন রয়েছে। একসিটের আসনগুলো বাদে দুই সিটের আসনগুলোতে একজন করে যাত্রী নেওয়া হয়। এতে আগে যেখানে ২০-২২ জন যাত্রী নেওয়া হতো, এখন ১৩-১৮ জন। অথচ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে দ্বিগুণ। এসব গাড়িতেও দুই তিন জন যাত্রী দাঁড়িয়ে নেওয়া হয়। অন্যদিকে ১নং রুটে বহদ্দারহাট থেকে আন্দরকিল্লা পর্যন্ত ৬ টাকা ভাড়ার স্থলে ১০টাকা নেওয়া হচ্ছে।

আবার আমতল থেকে বহদ্দারহাটগামী টেম্পুগুলো আমতল ও আন্দরকিল্লা থেকে বহদ্দার থেটে ১৫টাকা ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এসব টেম্পুতে আগে ভেতরে ১০ জন, সামনে চালকের দুইপাশে ২ জন নেওয়া হতো। এখন চালকের দুইপাশে দুইজন এবং ভেতরে ৬ জন নেওয়া হচ্ছে। আবার দাঁড়িয়েও যাত্রী নেয় এসব টেম্পু।

৬ ও ৭নং রুটের বাসগুলো দ্বিগুনের চেয়েও বেশি ভাড়া আদায় করছে বলে যাত্রীদের। আগ্রাবাদ থেকে কোতোয়ালী ও লালদীঘি পাড় পর্যন্ত আগে যেখানে ৭ টাকা ভাড়া নেওয়া হতো এখন আদায় করা হচ্ছে ১৫ টাকা। প্রশান্ত বড়ুয়া নামের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মজীবী বলেন, ৬, ৭ নং রুটে নৈরাজ্য চলছে। ৭ টাকা ভাড়া নিচ্ছে ১৫ টাকা করে। অফিস ছুটির সময়ে দাঁড়িয়েও যাত্রী নেয় বাসগুলো। এখানে স্বাস্থ্যবিধির অযুহাতে লোকজনের পকেট কাটছে এসব বাস।

সবচেয়ে বেশি নৈরাজ্য নতুন ব্রিজ-নিউমার্কেট পর্যন্ত ১৭নং রুটের টেম্পুগুলোতে। বিআরটিএ থেকে ৬ জন যাত্রী বহনের অনুমোদন রয়েছে টেম্পুগুলোর। স্বাভাবিক সময়ে এসব টেম্পুর বিআরটিএ নির্ধারিত ৮টাকার ভাড়া স্থলে নিত ১০টাকা। করোনাকালীন এ সুযোগে টেম্পুগুলোতে ৭ জন করে যাত্রী বহন করলেও ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ২০টাকা করে। নিউ মার্কেট এলাকার দোকান কর্মচারী আবির উদ্দিন বলেন, ‘নতুন ব্রিজ থেকে নিউ মার্কেট পর্যন্ত আগে ১০টাকা ভাড়া নিত, এখন নিচ্ছে ২০ টাকা। এখানে কোন প্রতিবাদ করা যায় না। যাত্রীদের কোন কথায় কান দেয় না গাড়ির চালকরা। নতুন ব্রিজ এলাকায় টেম্পু শ্রমিকদের বড় সিন্ডিকেট রয়েছে। ভাড়া নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে যাত্রীদের হেনস্তা করা হয়।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ রোধে একটি স্বাস্থ্যবিধি মানানোর ক্ষেত্রে পরিবহনের ক্ষতি লাঘবে ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দেয় সরকার। অনেকক্ষেত্রে দ্বিগুন ভাড়াও নেওয়া হচ্ছে। একিন্তু পরিবহনগুলো স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। এতে যাত্রীরা হয়রানির শিকার হচ্ছে। বেশি ভাড়া দিয়ে আর্থিকভাবে, শারিরীকভাবে এবং সংক্রমিক হওয়ার ঝুঁকিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন যাত্রীরা। এজন্য অচিরেই স্বাস্থ্যবিধি কড়াকড়ির জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে পদক্ষেপ নিতে হবে, অন্যথা পরিবহন ভাড়া পূর্বের নিয়মে ফিরিয়ে নেওয়ার পদক্ষেপ নিতে হবে।’

বিআরটিএ চট্টগ্রামের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট লুৎফুর রহমান বলেন, ‘আমরা অভিযানে গিয়ে অনেক গণপরিবহনের স্বাস্থ্যবিধি না মানার চিত্র দেখতে পাচ্ছি। বিশেষ করে পোশাককর্মী বহনকারী গাড়িগুলোতে প্রত্যেক সিটেই যাত্রী বহন করা হচ্ছে। আবার সাধারণ রুটের পরিবহনগুলোতে দাঁড়িয়ে যাত্রী নেওয়ারও প্রবণতা দেখেছি। অনেকস্থানে টেম্পুতেও দাঁড়িয়ে যাত্রী নেওয়া হচ্ছে। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী পরিবহন নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছি। যারা স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিচ্ছি। দৈনিক আজাদী