- Lohagaranews24 - https://lohagaranews24.com -

গ্রামীণফোনকে ২ হাজার কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ

gp-btrc-20191124094232

নিউজ ডেক্স : টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) দাবি করা পাওনা ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকার মধ্যে দুই হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করতে নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

যদি এ টাকা পরিশোধ করা না হয়, তাহলে প্রায় ১২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা আদায়ের ওপর হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে বলেও আদেশ দেন আপিল বিভাগ।

টাকা পরিশোধের সময়সীমা বিষয়ে বিটিআরসির আইনজীবী খন্দকার রেজা-ই-রাকিব বলেন, ‘দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ টাকা পরিশোধ করতে আপিল বিভাগ নির্দেশ দিয়েছেন।’

তবে গ্রামীণফোনের আইনজীবী মেহেদী হাসান চৌধুরী বলেন, ‘আজ থেকে তিন মাসের মধ্যে এ টাকা পরিশোধ করতে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।’

রোববার (২৪ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে সাত সদস্যের বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আদালতে আজ গ্রামীণফোনের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন ও আইনজীবী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। তাদের সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার মেহেদী হাসান চৌধুরী। অন্যদিকে, বিটিআরসির পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মাহবুবে আলম ও আইনজীবী ব্যারিস্টার খন্দকার রেজা-ই-রাকিব।

পরে গ্রামীণফোনের আইনজীবী ব্যারিস্টার মেহেদী হাসান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুই হাজার কোটি টাকা না দিলে তিন মাস পরে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হয়ে যাবে। আমরা আদেশ পাওয়ার পরে ক্লায়েন্টের (গ্রামীণফোন) সঙ্গে আলাপ করব, রিভিউ করব কি না দেখা হবে। তিন মাস সময় আছে। আর এক মাসের মধ্যে রিভিউ করার জন্য সুযোগ আছে।’

বিটিআরসির আইনজীবী ব্যারিস্টার খন্দকার রেজা-ই-রাকিব বলেন, ‘বিটিআরসির যে পাওনা ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা, এর মধ্যে তারা (গ্রামীণফোন) যদি দুই হাজার কোটি টাকা এখন না দেন, তাহলে হাইকোর্ট থেকে যে নিষেধাজ্ঞা নিয়েছিল সেটা ভ্যাকেট (প্রত্যাহার) হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, ‘এর অর্থ হলো এখন গ্রামীণফোনকে দুই হাজার কোটি টাকা দিতে হবে। তারা যদি না দেয় তাহলে বিটিআরসি যেকোনো অ্যাকশন নিতে আইনগত আর কোনো বাধা থাকবে না। আদেশের অনুলিপি পেলে বিস্তারিত জানা যাবে। এখন (কথা) হচ্ছে, হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে, যদি তারা দুই হাজার কোটি টাকা দেয় ‘

অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘এটা তো ফাইনাল সেটেলমেন্ট না। এখন দুই হাজার কোটি টাকা দিলে পরবর্তীতে যদি দেখা যায়, মামলায় বিটিআরসি আরও বেশি টাকা পায় তাহলে দেবে। সুতরাং আমরা আপাতত সন্তুষ্ট। এটা তো ফাইনাল না। আমরা সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা চেয়েছি। এটা নিয়ে কোর্টে মামলা চলছে। হাইকোর্টেও আছে। ওই মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার পরে জানা যাবে বিটিআরসি আর কত টাকা পাবে বা পাবে কি না।’

এর আগে গত ১৭ অক্টোবর হাইকোর্টের বিচারপতি এ কে এম আবদুল হাকিম ও বিচারপতি ফাতেমা নজীবের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ গ্রামীণফোনের কাছে বিটিআরসির প্রায় ১২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা দাবি আদায়ের ওপর দুমাসের অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা দেন। পরে গ্রামীণফোনের কাছে ওই টাকা দাবি আদায়ের ওপর হাইকোর্টের দুমাসের অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা স্থগিত চেয়ে বিটিআরসি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করেন।

গত ১৪ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শুনানিতে অর্থমন্ত্রী ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর সঙ্গে সমঝোতা বৈঠকের প্রস্তাবনা অনুযায়ী ২০০ কোটি টাকা পর্যায়ক্রমে বিটিআরসিকে দিতে সম্মতির কথা জানায় গ্রামীণফোন। তবে, এর বিরোধিতা করে বিটিআরসির আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতকে বলেন, ‘গ্রামীণফোনের কাছ থেকে বিটিআরসির পাওনা আদায়ের ওপর হাইকোর্টের দেয়া নিষেধাজ্ঞা আমরা স্থগিত চাই।’

এর আগে গত ৩ অক্টোবর অর্থমন্ত্রী ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর সঙ্গে গ্রামীণফোনের এক সমঝোতা বৈঠকে পাঁচটি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। প্রস্তাবগুলো হলো-

১. দুই পক্ষ একটি কমিটি গঠন করে পাওনা পরীক্ষা অথবা পরীক্ষার পদ্ধতি বের করবে।

২. বিটিআরসি লাইসেন্স বাতিলের কারণ দর্শানোর নোটিশ ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে। অন্যদিকে অপারেটররা মামলা প্রত্যাহারের পদক্ষেপ নেবে।

৩. অর্থমন্ত্রী, টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী, এনবিআর ও বিটিআরসির চেয়ারম্যান কমিটির কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে রাখবেন।

৪. কমিটি গঠন ও কমিটির কাজ শুরুর আগে আগামী সাত দিনের মধ্যে গ্রামীণফোন ১০০ কোটি ও পরের এক মাসের মধ্যে ১০০ কোটি টাকা বিটিআরসিকে দেবে। রবি দেবে দুই দফায় ৫০ কোটি টাকা।

৫. এসব প্রস্তাব দুই অপারেটর তাদের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পর্যালোচনা ও অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করবে।