- Lohagaranews24 - https://lohagaranews24.com -

কে হচ্ছেন চসিক প্রশাসক!

নিউজ ডেক্স : কে হচ্ছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রশাসক? বিষয়টি নিয়ে নগরজুড়ে আছে নানা গুঞ্জন। কেউ বলছেন, কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়া হবে। আবার কেউ রাজনৈতিক কোনো নেতাকে নিয়োগ দেয়ার কথাও বলছেন। অবশ্য আইন অনুযায়ী উভয়ের যেকোনো একজনকে নিয়োগ দেয়ার সুযোগ আছে।

তবে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী। গুঞ্জন আছে, সরকারি কোনো কর্মকর্তাকে প্রশাসক পদে নিয়োগ দেয়ার সম্ভাবনা বেশি। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে কর্মরতদের মধ্যে অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে এজন্য বাছাই করা হতে পারে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার পদটিসহ সরকারি সংস্থাটিতে পাঁচটি শীর্ষ পদ আছে। এর মধ্যে তিনজন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক, উন্নয়ন, রাজস্ব) এবং একজন স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক। স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালকের পদটি বর্তমানে শূন্য। তিনজন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের মধ্যে অতিরিক্ত সচিব মর্যাদায় আছেন শংকর রঞ্জন সাহা। তিনি অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) হিসেবে ২০১৫ সাল থেকে কর্মরত আছেন। এছাড়া বাকি অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারগণ (উন্নয়ন ও সার্বিক) হচ্ছেন যুগ্মসচিব পদমর্যাদার। ফলে পদাধিকার বলে শংকর রঞ্জন সাহাকে প্রশাসক নিয়োগের গুঞ্জন আছে। প্রশাসক নিয়োগ সংক্রান্ত কারণে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নির্দেশে সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা তার সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিচ্ছে বলে জানা গেছে। অবশ্য চসিকে সর্বশেষ নির্বাচিত মেয়র দায়িত্ব গ্রহণ না করা পর্যন্ত ১৯৯৩ সালের ২১ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯৪ সালের ১০ মার্চ পর্যন্ত প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তৎকালীন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ওমর ফারুক।

এদিকে রাজনৈতিক কোনো ব্যক্তিকেও প্রশাসক নিয়োগের গুঞ্জন আছে। সেক্ষেত্রে বর্তমান মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীনকে প্রশাসক করা হতে পারে বলে বেশি আলোচনা হচ্ছে। চসিকের চলমান কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং করোনা পরিস্থিতিতে মাঠ পর্যায়ে সক্রিয় থাকার পুরষ্কার হিসেবে তাঁর নিয়োগের সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করছেন অনেকে। এছাড়া প্রশাসক পদে নিয়োগ পেতে নগর আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরীর অনুসারীদের অনেকে ইতোমধ্যে তদবির করছেন বলে জানা গেছে।

প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, যেহেতু ৫ আগস্ট বর্তমান পর্ষদের মেয়াদ শেষ হবে, তাই এর আগেই সিদ্ধান্ত হবে। তবে কোরবানের আগে নাকি পরে হবে তার দিনক্ষণ এখনই বলা সম্ভব হবে না। সরকারি কর্মকর্তা নাকি রাজনৈতিক কাউকে নিয়োগ করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটাও এখন বলা যাবে না। যখন সিদ্ধান্ত নেব তখন এটা স্পষ্ট হবে। চট্টগ্রামের একজন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার, যিনি সরকারের অতিরিক্ত সচিব, তাকে নিয়োগ করা হচ্ছে-এমন গুঞ্জন প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, এরকম কথাগুলোর সঙ্গে আমি পরিচিত না। কে আসবে তার সম্পর্কে এখন আমার জানা নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, কে দায়িত্ব পাচ্ছে তা এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কেউ জানেন না। কবে নাগাদ প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো তো সময় আছে। তবে ৫ আগস্টের আগে প্রকাশ হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।

তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী যদি কোনো সিটি কর্পোরেশনের মেয়াদ শেষ হয়, তাহলে ওখানে প্রশাসক নিয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি প্রশাসককে সহযোগিতা করার জন্য একটা পরিষদও গঠন করা যেতে পারে। রাজনৈতিক কর্মীর বাইরে সরকারি কোনো কর্মকর্তাকে প্রশাসকের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে-মাঠ পর্যায়ের এমন গুঞ্জন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কিন্তু কী-পোস্ট বসে আছি এবং এ বিষয়ে শুনিনি।

সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন বলেন, আপাতত আমি প্রশাসক নিয়ে ভাবছি না। আইন অনুযায়ী ৫ আগস্ট পর্যন্ত আমার মেয়াদ আছে। ততদিন পর্যন্ত আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাব। এরপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটাই মেনে নেব।

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, স্থানীয় সরকার আইনের ২৫ ধারায় বলা আছে, প্রজাতন্ত্রের কোনো কর্মচারী অথবা সরকার যাকে উপযুক্ত মনে করেন তাকে প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারেন। অর্থাৎ সরকারের কাছে দুটো অপশনই আছে। এক্ষেত্রে দুটো উদাহরণও আছে। ঢাকায় সরকারি কর্মকর্তাকে দেয়া হয়েছিল এবং ময়মনসিংহে রাজনৈতিক ব্যক্তিকে দেয়া হয়েছিল। এখন চট্টগ্রামে সরকার যেটা ভালো মনে করবেন সেটাই কার্যকর করবেন। এ বিষয়টা সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রীর ওপর নির্ভর করছে।

উল্লেখ্য, চসিকের বর্তমান তথা পঞ্চম পর্ষদের নির্বাচন হয়েছিল ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল। এতে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম নাছির উদ্দীন। ৬ মে শপথ নেন তিনি। তবে আইনি বাধ্যকতার কারণে সাথে সাথে দায়িত্ব গ্রহণ করেননি। ওই বছরের ২৬ জুলাই দায়িত্ব নেন। ৬ আগস্ট প্রথম সাধারণ সভা করেন। ওই হিসেবে আগামী ৫ আগস্ট মেয়াদ শেষ হবে।

স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) অ্যাক্ট-২০০৯ এর ৩৪ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কর্পোরেশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববতী ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। ওই হিসেবে আগামী ৫ আগস্টের পূর্বে নির্বাচন করার আইনি বাধ্যবাধকতা ছিল। গত ২৯ মার্চ এ নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ২১ মার্চ নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেছিল ইসি। সর্বশেষ ১৬ জুলাই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে ৫ আগস্টের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব নয় বলে জানিয়েছিল ইসি।

এদিকে মেয়াদ শেষ হলে সিটি কর্পোরেশন পরিচালনায় প্রশাসক নিয়োগের বিষয়ে স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) অ্যাক্ট সংশোধিত-২০১১ এ বলা আছে, একজন উপযুক্ত ব্যক্তি বা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ দেয়া যাবে। অবশ্য স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন)-২০০৯ অ্যাক্টের ৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী, মেয়াদ শেষ হলেও নির্বাচন পরবর্তী নতুন পরিষদের প্রথম সাধারণ সভা পর্যন্ত বর্তমান পর্ষদের দায়িত্ব পালন করার সুযোগ আছে।

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ জানিয়েছেন, সরকার চাইলে পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান নির্বাচিত পর্ষদের দায়িত্ব পালনের সুযোগ আছে। দৈনিক আজাদী