- Lohagaranews24 - https://lohagaranews24.com -

কক্সবাজার সৈকতে হকারের উৎপাতে অতিষ্ঠ পর্যটক

Coxs-Pic1-6-11-18-1-800x440

নিউজ ডেক্স : ঝিনুকের মালা কিনবেন? ভাই ডিম খাবেন? গান শুনবেন? মাথা ম্যাসাজ করবেন? সিগারেট-চা-কফি খাবেন? কলা খাবেন? ঝাল মুড়ি খাবেন? মিষ্টি পান আছে ভাই খাবেন-এ ধরনের নানা প্রশ্নে তথা হকারদের উৎপাতে অতিষ্ট কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে আসা পর্যটকরা। হকারদের এমন প্রশ্নের বারবার সম্মুখীন হয়ে পর্যটকরা পড়ছে বিড়ম্বনায়। সৈকতের কোথাও স্বস্তি মিলছে না পর্যটকদের। শান্তির পরিবেশে বসাও দায় হয়ে গেছে পর্যটকদের। হকারদের বিরক্ত কর দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলছে। নাগরিক যান্ত্রিকতার চাপ ছেড়ে একটু স্বস্তি ও একান্তে সময় কাটাতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে এসেও স্বস্তিতে নেই পর্যটকরা। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে প্রবেশ মুখে পর্যটকরা প্রথমে শিকার হন ফটোগ্রাফারদের। কয়েকশ’ ফটোগ্রাফার ক্যামেরা হাতে সাগর পাড়ের লাবনী পয়েন্ট, সি গাল পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট ও

কলাতলী পয়েন্টে দাঁড়িয়ে থাকেন। কোনো পর্যটক আসলেই তাদের ঘিরে ধরে ছবি তোলার জন্য রীতিমতো চাপ প্রয়োগ করেন। এ সব ফটোগ্রাফারের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে বালিয়াড়িতে নামলেই শুরু হয় নানা ধরনের হকারদের যন্ত্রণা।

সৈকতে নামার সঙ্গে সঙ্গে যোগ হয়েছে ভিক্ষুক ও বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে প্রতারকদের দৌরাত্ম্য। সুযোগ বুঝে পর্যটকদের মালামালও চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে এই হকাররা।

সৈকতে এসব ভ্রাম্যমান হকার ও গান এবং মাথা ম্যাসাজের একটি দলের কারণে পর্যটকরাসহ সকলেই বিড়ম্বনায় থাকায় বিষয়টি স্বীকার করেছেন ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারি পুলিশ সুপার ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন- আসলেই তাদের দমন করা যাচ্ছে না। আমরা অনেক চেষ্টা করে যাচ্ছি। একদিকে দমন করলে অন্যদিকে নেমে পড়ে সৈকতে। তাদের কারণে অনেক পর্যটক অতিষ্ট। অনেক সময় তারা বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। পর্যটকের মালামাল হাতিয়েও নেন সুযোগ বুঝে।
তিনি আরও বলেন, তাদের দমন করতে হলে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। সবার মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকদের হকার বিড়ম্বনা দমনে আরো উদ্যোগী হয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।

এছাড়া সিদ্ধ ডিম, চা, সিগারেট, চিপস, পান, কলা, ডাব, বাদাম ঝালমুড়ি, ঝিনুক-শামুক ও নকল মুক্তাসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে কেনার জন্য জোরাজুরি করে হকাররা পর্যটকদের বিড়ম্বনায় ফেলে দিচ্ছে। সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের এ ধরনের বিড়ম্বনা দিয়ে বেড়াচ্ছে শত শত ভ্রাম্যমাণ হকার বা ফেরিওয়ালা।

সৈকতে বেড়াতে আসা অনেক পর্যটকরা সৈকতে ভাসমান হকারদের হাতে লাঞ্ছিত হচ্ছেন নিয়মিত। এসব কারণে কক্সবাজার সৈকতের বেড়াতে আসা ভ্রমণ পিপাসুরা অনেকটাই বিরক্ত। লাঞ্ছিত হয়ে ইতোমধ্যে অনেক পর্যটক পর্যটন তথ্য ও পর্যটন সেলে অভিযোগও দায়ের করেছেন।
অভিযোগ রয়েছে, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে হকারদের রয়েছে স্থানীয় একটি বিশাল চক্র। আশপাশের কিছু চিহ্নিত ছিনতাইকারী ও চোর এসব চক্রের নিয়ন্ত্রণ করে। এতে রয়েছে মহিলা চক্র। চক্রগুলো অল্প বয়সী ছেলে মেয়েদের হকার বানিয়ে বিভিন্ন পণ্য বিক্রির জন্য সৈকতে নামিয়ে দেয়। খাদ্যের সঙ্গে নেশা জাতীয় দ্রব্য খাইয়ে পর্যটকদের জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যায় এ হকার চক্র। আবার গান শোনানোর কথা বলে পর্যটককে ঘুম পাড়িয়ে সর্বস্ব নিয়ে যাচ্ছে। গান শোনানো ও মাথা ম্যাসাজের আড়ালে অনেক পর্যটকের মালামাল চুরি হওয়ার ঘটনার রয়েছে সৈকতে।

আব্দু রশিদ নামে সৈকতের এক চেয়ার ছাতা ব্যবসায়ী বলেন, চেয়ারে কোনো পর্যটক বসতে পারেনা। কোনো পর্যটক বসা মাত্রই হকাররা দৌড়ে এসে ঘিরে ধরে। এক মিনিটে তিনজন মতো হকার আসে। এতে পর্যটকরা খুবই বিরক্তবোধ করেন। পর্যটকরা না চাইলেও তারা জোরাজুরি করে।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা আনোয়ার হোসেন চৌধুরী নামে এক পর্যটক জানিয়েছেন, বিচে নেমে চেয়ারে বসার পর থেকে ২০ মিনিটের ব্যবধানে ১৪/১৫ জন হকার এসে পণ্য কেনার জন্য জোরাজুরি করে। ৫ মিনিটের জন্যও নিরিবিলিতে বসা যায় না। ঢাকায় জ্যামে পড়লে হকাররা যেভাবে ঘিরে ধরে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতেও ঠিক একই অবস্থা। নতুন বউ নিয়ে কক্সবাজারে হানিমুনে এসেই এমন বিড়ম্বনায় পড়েছি। তাদের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে শেষ পর্যন্ত হোটেলে ফিরে গিয়েছি।

সূত্র : দৈনিক পূর্বকোণ