ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | কক্সবাজারে রেল যাবে দেড়বছর পর, ৭২ শতাংশ কাজ সম্পন্ন 

কক্সবাজারে রেল যাবে দেড়বছর পর, ৭২ শতাংশ কাজ সম্পন্ন 

নিউজ ডেক্স : কক্সবাজারে রেল যাবে আরো অন্তত দেড়বছর পর। এবছরের শেষ নাগাদ রেলপথ চালুর কথা থাকলেও প্রত্যাশিত হারে কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব না হওয়ায় বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে রেলের কাজ। এখনো পর্যন্ত এ মেগাপ্রকল্পের কাজ বাকি আরো ২৮ ভাগ। এ কাজ শেষ হলেই ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ চালু হবে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন।

প্রকল্প কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রেল মন্ত্রণালয়। কিন্তু ইতোমধ্যে প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে মাত্র ৭২ শতাংশ। বাকি কাজ শেষ হলেই ঢাকা থেকে ট্রেনে কক্সবাজারে যাওয়ার স্বপ্নপূরণ হবে।

প্রকল্প কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ পর্যন্ত দোহাজারী-কক্সবাজার ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছিল ৬৯ শতাংশ। আর জুন পর্যন্ত গত ৩ মাসে অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৩ শতাংশ। এভাবে ধীর গতিতে প্রকল্পের কাজ চললে সম্পূর্ণ কাজ শেষ হতে আরো ২৮ মাস বা ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। এছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়ে যেতে পারে।

তবে গত তিন মাস ধরে ধীর গতির কাজের জন্য বৃষ্টিপাতকে দায়ী করেন প্রকল্প পরিচালক মুফিজুর রহমান। তিনি বলেন, গত দুই মাস ধরে বৃষ্টির কারণে প্রত্যাশিত হারে কাজের অগ্রগতি হয়নি। তবে বর্ষা শেষে কাজের গতি বাড়ানো হবে এবং ২০২৩ সালের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ করা হবে। এই লক্ষ্যমাত্রা নিয়েই এগোচ্ছে রেল মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত আরো ২ বছর বাড়ানো হয়েছে।

প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি জানান, ইতোমধ্যে কক্সবাজার সদর, রামু, ঈদগাঁও, চকরিয়া ও হারবাং এলাকা পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। রেললাইন স্থাপনের পাশাপাশি চলছে সিগন্যালিং তার টানার কাজ। আর এতে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে বৃষ্টি।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, চকরিয়া থেকে কক্সবাজার অংশে ২০টি সেতুর মধ্যে ১৯টির কাজই শেষ হয়েছে। দোহাজারী-চকরিয়া অংশে ১৯টি সেতুর মধ্যে সাঙ্গু নদীর ওপর একটি, মাতামুহুরী নদীর ওপর দুটি এবং বাঁকখালী নদীর ওপর একটি বড় রেলসেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলোর নির্মাণ কাজও চলমান রয়েছে। কক্সবাজারের আইকনিক স্টেশনসহ সব মিলিয়ে নয়টি স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ডুলাহাজারা রেল স্টেশনের কাজ শেষ হয়েছে। দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, হারবাং, চকরিয়া, ঈদগাঁও, রামু ও কক্সবাজার রেল স্টেশন নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। একই সঙ্গে আইকনিক স্টেশন, ছোট-বড় সেতু, কালভার্ট, লেভেল ক্রসিং ও হাইওয়ে ক্রসিংয়ের নির্মাণ কাজও এগিয়ে চলছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে শহরতলীর ঝিলংজা ইউনিয়নের হাজিপাড়া এলাকায় ২৯ একর জমির ওপর নির্মাণাধীন আইকনিক রেল স্টেশন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, ঝিনুকের আদলে সেখানে নির্মাণ করা হচ্ছে আইকনিক রেল স্টেশন। ১ লাখ ৮২ হাজার বর্গফুট আয়তনের ছয়তলা বিশিষ্ট আইকনিক রেল স্টেশন ভবনটির কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। আইকনিক ভবন ঘেঁষে নির্মাণ করা হচ্ছে রেলওয়ের প্ল্যাটফর্ম। আর এর পাশেই গড়ে তোলা হচ্ছে রেলওয়ের আবাসিক এলাকা। এখানে আটটি ভবনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এ স্টেশনে আবাসিক হোটেলের পাশাপাশি ক্যান্টিন, লকার সার্ভিস, গাড়ি পার্কিংসহ আরো নানা সুবিধা রাখা হচ্ছে। এ স্টেশন দিয়ে দৈনিক ৪৬ হাজার মানুষ আসা-যাওয়া করতে পারবেন।

প্রসঙ্গত ২০১০ সালের ৬ জুলাই ‘চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের ঘুমধুম সীমান্ত পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার। প্রকল্পের অধীনে দোহাজারী থেকে কক্সবাজারের রামু পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার এবং রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত ২৯ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের কথা ছিল। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারে রেললাইন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। এর প্রায় ৮ বছর পর ২০১৮ সালে ডুয়েল গেজ ও সিঙ্গেল ট্র্যাকের রেললাইন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তবে মিয়ানমার সরকারের সম্মতি না থাকায় রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত দ্বিতীয় ধাপের ২৯ কিলোমিটার রেললাইনের কাজ আপাতত বন্ধ রাখা হয়।

সূত্র জানায়, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ রেললাইন নির্মাণের ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। পরে ২০১৬ সালে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করা হলে এর প্রাক্কলিত ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকায়। আর এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকার। -আজাদী প্রতিবেদন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!