Home | অন্যান্য সংবাদ | ঋণমুক্তি ও রিজিক লাভের ৩ আমল

ঋণমুক্তি ও রিজিক লাভের ৩ আমল

ধর্ম ডেস্ক : আয়-উপার্জন ও রিজিক এক সুতোয় বাধা। মহামারি করোনার পরিপ্রেক্ষিতে একদিকে মানুষ আয়-উপার্জনহীন হয়ে জীবিকা সংগ্রহে অসহায় পড়ছে। অন্যদিকে প্রয়োজনীয় আয়-উপাজর্ন না থাকায় খাবার ও প্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে মানুষ অহরহ ঋণগ্রস্ত হচ্ছে।

মানুষের রিজিকের জিম্মাদার মহান আল্লাহ তাআল। আল্লাহর উপর ভরসা করে জীবিকা সংগ্রহের যথাযথ চেষ্টা-প্রচেষ্টা করলে তিনি বান্দাকে উত্তম জীবিকা দান করবেন। বিশ্ব নন্দিত ইসলামিক স্কলার ড. আয়েজ আল-কারনি হালাল রিজিক ও ঋণ মুক্তিতে ৩টি আমলের কথা তুলে ধরেছেন।

শুধু তা-ই নয় তিনি উক্ত আমলগুলোর ব্যপারে জোর তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যদি কেউ তার পরামর্শগুলোর উপর আমল করে সে নিশ্চিত রিজিক লাভ করবে এবং ঋণ থেকে মুক্তি পাবে।

আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তিকে ধারণাতীত স্থান থেকে রিজিক দান করবেন। এমন উপায়ে সমস্যার সমাধান করবেন, যা কোনো মানুষ চিন্তাও করেনি। আর তাহলো-
– যথাসময়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা।
– বাবা-মা প্রতি যথাযথ হক আদায় করা।
– বেশি পরিমাণ ইস্তিগফার করা।

এই ৩টি আমলে মহান আল্লাহ নিজ দায়িত্বে রিজিক দান ও ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করে দেবেন। তাছাড়া কুরআনুল কারিমে এ কথাই আল্লাহ তাআলা ঘোষণা দেন-
‘অতপর বলেছি, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দেবেন, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্য উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্য নদীনালা প্রবাহিত করবেন। [ সুরা নুহ : আয়াত ১০-১২)

এ আয়াতগুলো মহান আল্লাহ বান্দাকে একটি আমল করার মাধ্যমে রিজিক, সন্তান-সন্তুতি, ধন-সম্পদসহ অনেক নেয়ামত দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। শর্ত শুধু একটি, আর তাহলো- বেশি বেশি ইসতেগফার করা। আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। সে আলোকে ছোট-বড় কয়েকটি ইসতেগফার ও তা পড়ার নিয়ম তুলে ধরা হলো-
– أَستَغْفِرُ اللهَ
উচ্চারণ : ‘আস্তাগফিরুল্লাহ।’
অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

নিয়ম : প্রতি ওয়াক্ত ফরজ নামাজের সালাম ফেরানোর পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ইসতেগফারটি ৩ বার পড়তেন।’ (মিশকাত)

– أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ
উচ্চারণ : ‘আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি।’
অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর দিকেই ফিরে আসছি।

নিয়ম : এ ইসতেগফারটি প্রতিদিন ৭০/১০০ বার পড়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিদিন ৭০ বারের অধিক তাওবাহ ও ইসতেগফার করতেন।’ (বুখারি)

– رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ (أنْتَ) التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ
উচ্চারণ : ‘রাব্বিগ্ ফিরলি ওয়া তুব আলাইয়্যা ইন্নাকা (আংতাত) তাওয়্যাবুর রাহিম।’
অর্থ : ‘হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তাওবাহ কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি মহান তাওবা কবুলকারী করুণাময়।’

নিয়ম : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে বসে এক বৈঠকেই এই দোয়া ১০০ বার পড়েছেন।’ (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)

– أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ
উচ্চারণ : ‘আস্‌তাগফিরুল্লা হাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলায়হি।’
অর্থ : ‘আমি ওই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো মাবুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছেই (তাওবাহ করে) ফিরে আসি।’

নিয়ম : দিনের যে কোনো ইবাদত-বন্দেগি তথা ক্ষমা প্রার্থনার সময় এভাবে তাওবাহ-ইসতেগফার করা। হাদিসে এসেছে- এভাবে তাওবাহ-ইসতেগফার করলে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেবেন, যদিও সে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়নকারী হয়।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি, মিশকাত)

– সাইয়েদুল ইসতেগফার পড়া
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আংতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আংতা খালাক্কতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহ্দিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু আউজুবিকা মিন শাররি মা সানাতু আবুউলাকা বিনিমাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউলাকা বিজাম্বি ফাগ্ফিরলি ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমিই আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই বান্দা আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নেয়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গোনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। কারন তুমি ছাড়া কেউ গোনাহ ক্ষমা করতে পারবে না।’

নিয়ম : সকালে ও সন্ধ্যায় এ ইসতেগফার করা। ফজর ও মাগরিবের নামাজের পর এ ইসতেগফার পড়তে ভুল না করা। কেননা হাদিসে এসেছে- যে ব্যক্তি এ ইসতেগফার সকালে পড়ে আর সন্ধ্যার আগে মারা যায় কিংবা সন্ধ্যায় পড়ে সকাল হওয়ার আগে মারা যায়, তবে সে জান্নাতে যাবে।’ (বুখারি)

এ ছাড়াও হাদিসে বর্ণিত ঋণ মুক্তির দোয়াও করা যেতে পারে। আর তাহলো-
– হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চিন্তাযুক্ত অবস্থায় এই দোয়া পড়তেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَ أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَ أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَ أَعُوذُ بِكَ مِن ضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল আজযি ওয়ালকাসালি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আউজুবিকা মিন দ্বালায়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিঝাল।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।’ (বুখারি, মুসলিম ও মিশকাত)

– اللَّهُمَّ اكْفِنِي بِحَلاَلِكَ عَنْ حَرَامِكَ، وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكِ عَمَّنْ سِوَاكَ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাকফিনি বিহালালিকা আন হারামিকা ওয়া আগনিনী বিফাদ্বলিকা আম্মান সিওয়াক।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আপনার হালালের সাহায্যে হারাম থেকে বাঁচান। এবং আপনার অনুগ্রহ দ্বারা আপনি ব্যতিত অন্যের মুখাপেক্ষিতা থেকে বাঁচান।’ (তিরমিজি, মিশকাত)

ফজিলত : যদি কেউ পাহাড় পরিমাণ দেনার চাপেও থাকে তবে উক্ত দোয়ার ওসিলায় মহান আল্লাহ তাআলা তা পরিশোধ করার সামর্থ্য দেবেন বলে হাদিসে বর্ণিত রয়েছে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বিশ্ব-বিখ্যাত দাঈ ড. আয়াজ আল-কারনির উল্লেখিত ৩টি আমল করার মাধ্যমে কুরআন-সুন্নাহ নির্দেশিত আমলের যথাযথ বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। উত্তম রিজিক ও ঋণগ্রস্ত থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!