- Lohagaranews24 - https://lohagaranews24.com -

উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প মাদকের আবাস্তলে পরিনত

image-217-1514284647
কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া : মাদকের আগ্রাসন এখন রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক মাদক ব্যবসা দিন দিন বেড়ে চলছে। রোহিঙ্গাদের হাতে হাতে ইয়াবা। নির্বিঘ্নে ইয়াবার চালান পাচার করছে রোহিঙ্গারা। ইয়াবার চালান নিয়ে ধরাও পড়ছে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী রাতদিন রোহিঙ্গাদের কবল থেকে ইয়াবা উদ্ধার করছে। প্রতিনিয়ত ক্যাম্প সমূহে চলছে র্যাব ও পুলিশের অভিযান। বিশাল এ রোহিঙ্গা গোষ্টি নিয়ন্ত্রণে বিপাকে পড়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ইয়াবার করালগ্রাসে পড়ে ধ্বংসের মুখোমুখি হচ্ছে দেশের যুব সমাজ। যুব সমাজকে এ বিপর্যয় থেকে রক্ষায় শংকিত হয়ে পড়েছে সচেতন মহল।
২৫ আগষ্ট পরবর্তী গত ৫ মাসে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে অবস্থান নিয়েছে লাখ লাখ রোহিঙ্গা। তাদের পদভারে ঝিমিয়ে পড়েছে উখিয়া-টেকনাফবাসীর জীবনযাত্রা। রোহিঙ্গাদের কারণে বর্তমানে সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে স্থানীয় মানুষ। অবশ্যই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসার পর শংকিত হয়ে পড়েছিল উখিয়া-টেকনাফের মানুষের পাশাপাশি কক্সবাজারবাসী। সচেতন মহলের পক্ষ থেকে দাবী উঠছিল রোহিঙ্গারা স্থানীয় মানুষের জন্য বিপদ। যেখানে রোহিঙ্গা সেখানে নানা সমস্যা। রোহিঙ্গাদের হাতে হাতে মাদক। মিয়ানমার থেকে আসার সময় তাদের বোঝাইকৃত ভারে ইয়াবা নিয়ে আসে। সরকারের সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তাঁর বক্তব্যে বারবার বলে আসছিল রোহিঙ্গারা আসার সময় মাদক ও অস্ত্র আনছে কিনা দেখতে হবে। সেতুমন্ত্রীর এ বক্তব্য অমূলক নয়।
অবশ্যই রোহিঙ্গা ক্যাম্প সমূহে মাদকের ভয়াবহতার কথা স্বীকার করে উখিয়া থানার ওসি (তদন্ত) মাকসুদুল আলম বলেছেন, এখন রোহিঙ্গারা সবার জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদের হাতে হাতে ইয়াবা। প্রশাসন তাদেরকে আইনের আওতায় এনে ইয়াবা পাচার রোধ ও মাদক থেকে দূরে রাখতে সব ধরণের চেষ্টা চালালেও মাদক মুক্ত করা কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়েছে।
রোহিঙ্গাদের কারণে উখিয়া-টেকনাফে অচল অবস্থার সৃষ্টি হলেও এ নিয়ে কারো মাথাব্যাথা নেই। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন তাদের দেখভাল করে আসছে। আর রোহিঙ্গাদের মাত্রাতিরিক্ত ত্রাণ সামগ্রী দিয়ে আসছে দেশী-বিদেশী এনজিওরা। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসে তারা শুধু খেয়ে শুয়ে নানা অপরাধে জড়াচ্ছে। তাদের মাথায় ঢুকছে বাংলাদেশে বসে কিভাবে টাকার মালিক হওয়া যায়। এখন নেমে পড়েছে মাদক ব্যবসায়। ভুরি ভুরি মাদকের চালান নিয়ে সড়ক পথে দেশে বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। আইন-কানুনকে ভয় করে না অক্ষরজ্ঞানহীন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ।
কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প মাদকের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি মাদকের ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়ছে ১৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। মাদকের সাথে জড়িত রোহিঙ্গারা কোন কিছুকে তোয়াক্ষা করে না। নিজেরাই মাদক তৈরী করে আসছে রোহিঙ্গাদের একটি শ্রেণী। তাদের রয়েছে পুরোনো অভ্যাস, নকল টাকা তৈরির অভিজ্ঞতা। মাঝে মধ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে ধরা পড়ে মাদক তৈরির কারখানা। এখন নতুন করে অহরহ ইয়াবা পাওয়া যাচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। এসব ইয়াবা বাংলাদেশের যুব সমাজের হাতে তুলে দিতে যাচ্ছে। আর দেশের সর্বত্রে সহজলভ্য হচ্ছে ইয়াবা।
এদিকে গত ২৯ জানুয়ারি উখিয়ার উপজেলা মহুরীপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইয়াবা ও নগদ টাকাসহ ৩ রোহিঙ্গাকে আটক করে র্যাব-৭। আটককৃতরা হলো বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ব্লক-বি-৯১ এর দ্বীন ইসলামের পুত্র মোঃ মঞ্জুর রহমান (২০), ব্লক ডি-৩ এর নজির আহমদের পুত্র মোঃ ইউনুছ (৩২), ব্লক বি-৯১ এর শহিদুল্লাহ’র পুত্র মোঃ আজিজুল্লাহ (৩২)।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে উখিয়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব ও পালংখালী ইউ.পি চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাদক, অস্ত্র, পতিতাবৃত্তি থেকে শুরু করে এমন কোন অপরাধ কর্মকান্ড নেই যা প্রতিদিন ঘটছে না। পুরো পালংখালী ইউনিয়নের ৩৫ হাজার স্থানীয় জনগোষ্টি প্রতিনিয়ত আতংক উৎকণ্ঠায় বসবাস করছে। এ থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় রোহিঙ্গাদের দ্রুত স্বদেশে প্রত্যাবাসন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উখিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাইলাউ মারমা বলেন, অধিকাংশ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ইয়াবা বহনকারী হিসেবে কাজ করছে। সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবা বহন করে নিয়ে এসে তারা সারা দেশে পাচারের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হচ্ছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাদকের ছড়াছড়ির বিষয়ে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জ (উপ-সচিব) রেজাউল করিম বলেছেন, রোহিঙ্গাদের অপরাধ প্রবণতা নতুন কিছু নয়। ইতিপূর্বেও মাদক, জাল নোট ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড এবং অস্ত্র তৈরির সাথে জড়িত রোহিঙ্গারা। তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করে রাখা প্রশাসনের জন্য দু:সাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। একসাথে এতো রোহিঙ্গার কর্মকান্ড, গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ রাখতে প্রতিনিয়ত ক্যাম্প প্রশাসনকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সর্বোপরি এরা ইয়াবা কারবারের সাথে জড়িত এটার প্রমাণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তারা নিয়মিত ধরা পড়ছে।