- Lohagaranews24 - https://lohagaranews24.com -

ই-পাসপোর্টের যুগে চট্টগ্রাম, কাল থেকে প্রদান শুরু

নিউজ ডেক্স : একজন মুক্তিযোদ্ধার হাতে পাসপোর্ট তুলে দেয়ার মাধ্যমে আগামীকাল রোববার সর্বাধুনিক ইলেকট্রনিক পাসপোর্টের যুগে প্রবেশ করছে চট্টগ্রাম। বিশ্বের ১১৯ নম্বর দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট চালু করেছে। ঢাকায় ই-পাসপোর্ট দেয়া শুরু হলেও চট্টগ্রামে শুরু হচ্ছে কাল থেকে। পাঁচ বছর এবং দশ বছর মেয়াদের দুই ধরনের ই-পাসপোর্ট দেয়া হচ্ছে। তবে কাল চট্টগ্রামে পাঁচটি ১০ বছর মেয়াদী ই-পাসপোর্ট সংশ্লিষ্টদের হাতে তুলে দেয়া হবে।

বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, দেশে বর্তমানে প্রায় দুই কোটি মানুষের হাতে পাসপোর্ট রয়েছে। বিভিন্ন পাসপোর্ট অফিসে প্রতিদিন গড়ে পঁচিশ হাজার মানুষ নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করে। তবে বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে বায়োমেট্রিক কার্যক্রম অনেকটা বন্ধ রয়েছে। সীমিতভাবে কিছু কর্মকাণ্ড চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বায়োমেট্রিকসহ পাসপোর্টের আবেদন প্রসেসিং পুরোদমে শুরু করা সম্ভব হবে না। একই মেশিনে প্রত্যেক আবেদনকারীর আঙুলের ছাপ (ফ্রিঙ্গার প্রিন্ট), সিগনেচার এবং চোখের মণির ছবি (আইরিশ) তোলা করোনা সংক্রমণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে বায়োমেট্রিক কার্যক্রম সীমিত রাখা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, হাতে লেখা নাম-ঠিকানা এবং গাম দিয়ে সেঁটে দেয়া ছবির পাসপোর্ট নিয়ে মানুষ বছরের পর বছর বিদেশে গেছেন। পরবর্তীতে ছবি লেমিনেটিং করা পাসপোর্ট চালু করা হয়। বিশ্বে ১৯৮০ সালের পরে চালু হয় এমআরপি বা মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট। অবশ্য উন্নত বিশ্বে চালু করার ত্রিশ বছর পরে ২০১০ সালে বাংলাদেশে এমআরপি চালু হয়। দেশে যখন এমআরপি চালু করা হয়, তখন উন্নত বিশ্বের নাগরিকেরা ই-পাসপোর্ট ব্যবহার শুরু করেছেন। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে ২০০৮ সাল থেকে ই-পাসপোর্ট চলে আসছে। বর্তমানে ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডাসহ পৃথিবীর ১১৮টি দেশে ইলেকট্রনিক্স পাসপোর্ট বা ই-পাসপোর্টের চল রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট চালুর কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৬ সালে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ২০২০ সালের মধ্যে ই-পাসপোর্ট চালুর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জার্মানি সফরে যান। ওই বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি জার্মানির সরকারি প্রতিষ্ঠান ভেরিডোস জেএমবিএইচের সঙ্গে ই-পাসপোর্টের ব্যাপারে সমঝোতা স্মারক এবং পরবর্তীতে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির ধারাবাহিকতায় বেশ কয়েক দফা তারিখ পিছিয়ে কিছুদিন আগে বহুল প্রত্যাশার ই-পাসপোর্ট চালু করা হয়। শুরুতে ঢাকায় সীমিতভাবে দেয়া হলেও চট্টগ্রামে কালই প্রথম সর্বাধুনিক এই পাসপোর্ট পেতে যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের পরিচালক মো. আবু সাইদ বলেন, আগামীকাল ই-পাসপোর্ট প্রদান করা হবে। কাল সকালে নগরীর ডবলমুরিং থানাধীন পাঠানটুলীর নজির ভান্ডার লেইনের মুক্তিযাদ্ধা জাহেদ আহমেদের হাতে ই-পাসপোর্ট তুলে দেয়া হবে। একই সাথে শীর্ষ একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড কমান্ডের ডিজি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভীর মাজহার সিদ্দিকীর এবং অপর তিনজন নাগরিকের হাতে ই-পাসপোর্ট তুলে দেয়া হবে।

চট্টগ্রামে আজ দেয়া প্রতিটি পাসপোর্টের মেয়াদ দশ বছর। দেশে এই প্রথম দশ বছর মেয়াদের পাসপোর্ট দেয়া হচ্ছে। অবশ্য ৫ বছর মেয়াদের ই-পাসপোর্টও রয়েছে। পৃষ্ঠাসংখ্যাও হবে দুই ধরনের। এক ধরনের বইতে ৪৮ পৃষ্ঠা, অপর ধরনের বইয়ে থাকবে ৬৪ পৃষ্ঠা। পাসপোর্টের ফি-ও নতুন করে নির্ধারণ করা হয়েছে। ৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্টের জন্য পাঁচ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ৪ হাজার ২৫ টাকা, ৬৪ পৃষ্ঠার ফি ৫ হাজার ৭৫০ টাকা। অপরদিকে ১০ বছর মেয়াদের ৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্টের জন্য ফি ৬ হাজার ৩২৫ টাকা, ৬৪ পৃষ্ঠার জন্য ফি ৮ হাজার ৫০ টাকা। এই ফি’র সাথে বাড়তি ফি যোগ করে জরুরি এবং অতি জরুরি পাসপোর্ট নেয়ার সুযোগ থাকবে। তবে করোনাকালে এসব সুবিধা কার্যকর হবে না।

সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, ই-পাসপোর্ট চালু হলেও এমআরপি প্রদান এখন বন্ধ হচ্ছে না। দুই ধরনের পাসপোর্টই চালু থাকবে। বিদ্যমান ফি দিয়ে এমআরপি পাওয়া যাবে। আবেদনকারীর আবেদনের ভিত্তিতে ই-পাসপোর্ট এবং এমআরপি প্রদানের বিষয়টি নির্ধারিত হবে।

ই-পাসপোর্টে ৩৮ ধরনের নিরাপত্তা ফিচার থাকবে। বর্তমানে এমআরপি ডেটাবেইসে যেসব তথ্য আছে তা ই-পাসপোর্টে স্থানান্তর করা হবে। এছাড়া চোখের মণির ছবি ও দশ আঙুলের ছাপ থাকবে। ই-পাসপোর্টের জন্য দেশের ইমিগ্রেশনগুলোতে ই-গেট স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে একজন কর্মকর্তা বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুরোদমে ই-পাসপোর্ট প্রদান শুরু হবে। ই-পাসপোর্ট চালুর সাথে সাথে দশ বছর মেয়াদের পাসপোর্ট চালু করায় সাধারণ মানুষের কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। সরকারেরও পাসপোর্ট বই ছাপানো এবং আমদানিখাতে বিপুল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। ই-পাসপোর্ট দেশের ইমেজ বৃদ্ধি এবং বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে যাত্রীদের হয়রানির অবসান ঘটাবে। দৈনিক আজাদী