- Lohagaranews24 - https://lohagaranews24.com -

ইলমে দ্বীনের খেদমতে অনন্য ব্যক্তিত্ব মাওলানা আবুল ওয়াফা শামসী (র:)

মাওলানা আবুল ওয়াফা শামসী (র:)

মাওলানা আবুল ওয়াফা শামসী (র:)

____ড. মুহাম্মদ ওয়ালী উল্লাহ মঈন____

দ্বীনি শিক্ষার গুরুত্ব: আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানবজাতি ফেরেশতা তথা সমগ্র সৃষ্টিজগতের শ্রেষ্ঠ আসনে সমাসীন। মানুষের এই শ্রেষ্ঠত্ব একমাত্র তার জ্ঞান দ্বারা প্রমাণিত। আল-কুরআনে আল্লাহ রাবক্ষুল আলামীন দুনিয়ার সকল জ্ঞানের প্রতি গুরুত্ব প্রদান করেছেন। হযরত আদম (আ.)কে সৃষ্টি করে আল্লাহ তা‘আলা সাধারণভাবে দুনিয়ার সবকিছুর নাম শিক্ষা দিয়েছিলেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَعَلَّمَ آدَمَ الْأَسْمَاءَ كُلَّهَا অর্থ: ‘আল্লাহ আদমকে সবকিছুর নাম শিক্ষা দিয়েছেন।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত-৩১)
রাসূল (সা.) এর উপর প্রথম অবতীর্ণ অহীও ছিল শিক্ষা বিষয়ক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
اِقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ.
অর্থ: ‘পড়–ন হে রাসূল, আপনার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। (সূরা আলাক, আয়াত-১)
ফেরেশতাদের উপর নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য আল্লাহ তা‘আলা আদম (আ.)কে জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন। এভাবে সমস্ত নবী-রাসূলকে আসমানী জ্ঞান দিয়ে তাদের যুগে শ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে প্রমাণ করেছেন। বিশ্বে একমাত্র আসমানী জ্ঞানই একটি পরিপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থার রূপরেখা বাস্তবায়ন করতে পারে। মানুষের ধর্ম-কর্ম, পার্থিব-অপার্থিব, আধ্যাত্মিক ও বৈষয়িক সবকিছুই দ্বীনি শিক্ষার মাধ্যমে অর্জন করা যায়। ইসলাম যেমন ব্যাপক ও পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা, তেমনি ইসলামী শিক্ষাও পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা ব্যবস্থা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
اَلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا-
অর্থ: ‘আমি আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন মনোনীত করলাম।’ (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত-৩)
বর্তমান বিশ্বে তথাকথিত পাশ্চাত্য শিক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা মানুষ শিক্ষিত হচ্ছে বটে; কিন্তু এ শিক্ষা দ্বারা সত্যিকারের মানবতাবোধ ও অন্যায়ের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হচ্ছে না। কাজেই এ শিক্ষা দ্বারা কাঙ্খিত মানব কল্যাণ সাধিত হচ্ছে না। আজ পৃথিবীতে অশান্তির দাবানল জ্বলছে। দেশে দেশে, জাতিতে জাতিতে বিদ্বেষ, ধনী-গরীবের মধ্যে সীমাহীন বৈষম্য, শোষণ-বঞ্ছনায় জর্জরিত বিপন্ন মানবতা, মরণাস্ত্রের বিপজ্জনক মহড়া, এসবই আল্লাহর প্রতি আনুগত্যহীন শিক্ষার কুফল ও কুপ্রভাব। মুসলিম সমাজ তথা গোটা বিশ্বে শান্তি, নিরাপত্তা, মনবতাবোধ ও মানবতার বিকাশ সাধনের জন্য দ্বীনি শিক্ষা ব্যবস্থা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। দ্বীনি শিক্ষা ছাড়া পরিপূর্ণ মুমিন হওয়া অসম্ভব।

বাংলা, পাক-ভারত উপমহাদেশে শৈশবে দ্বীনি শিক্ষা তথা মক্তব ব্যবস্থার ইতিহাস অনেক পুরনো এবং খুবই ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধশালী, এখানে মুসলিম সমাজ গড়ে উঠার সাথে সাথে প্রতিটি জনপদে গড়ে উঠেছিল মসজিদ, মাদরাসা ও মক্তব। দ্বীনি শিক্ষার প্রাথমিক এই কেন্দ্র থেকে মুসলিম শিশুরা ইসলামী শিক্ষার প্রথম আলো পেত।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ-
অর্থ: ‘হযরত আনাস বিন মালেক (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, প্রত্যেক মুসলিমের উপর বিদ্যার্জন অত্যাবশ্যক।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, উলামাদের ফযিলত এবং জ্ঞান অন্বেষণে উৎসাহ প্রদান অধ্যায়, হাদীস নং ২২৪)
এ ফরয আদায়ের জন্য সমাজ, সরকার ও রাষ্ট্র ছিল তৎপর। এক সময় এ দ্বীনি শিক্ষা কেন্দ্রগুলো চলত সরকারি অর্থানুকূল্যে। সারা বাংলার মোট জমির চার ভাগের একভাগ ওয়াকফ ছিল মসজিদ, মাদরাসা ও মক্তব্যের জন্য।
কিন্তু চরম পরিতাপের বিষয় মুসলমানরা ইংরেজ বেনিয়াদের হাতে স্বাধীনতা হারিয়ে সবদিক দিয়ে দেউলিয়া হয়ে পড়ল। ইংরেজরা চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে জমিদারী প্রথা চালু করে। ফলে সমস্ত ওয়াকফ সম্পত্তি জমিদারদের দখলে চলে যায়। মুসলিম সমাজের দ্বীনি শিক্ষার ধারা আস্তে আস্তে ভেঙ্গে পড়তে থাকে। দু’শ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন বৈরিতা ও চরম অবহেলার মধ্যেও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের নিজস্ব দানে ও সরকারের আংশিক সহযোগিতায় দ্বীনি শিক্ষা ব্যবস্থা টিকে আছে।
ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকে মসজিদ কেন্দ্রিক দ্বীনি শিক্ষা ব্যবস্থা এত বেশি উন্নত ও কার্যকরী ছিল যে, এর অনুকরণে পাশ্চাত্যের দেশসমূহে শুরু হয় চার্চ স্কুল। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে চার্চ স্কুলের শিক্ষা পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। আমাদের দেশের মুসলিম অভিজাত ব্যক্তিদের ছেলে মেয়েদের চার্চ স্কুলে পাঠাতে সংকোচবোধ করার কারণে গীর্জাকেন্দ্রিক স্কুলগুলোকে চার্চ স্কুল না বলে মিশনারী স্কুল বলা হতো। আজ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়া কিন্ডার গার্টেন পূর্বতন চার্চ বা মিশনারী শিক্ষা ব্যবস্থার একটি উন্নততর ধাপ। আধুনিক এ শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে মুসলমানদের ঈমানী চেতনায় উদ্দীপ্ত সকাল বেলার দ্বীনি শিক্ষা ব্যবস্থা আজ বন্ধ হওয়ার উপক্রম। মুসলিম নারী-পুরুষের বিরাট একটি অংশ দ্বীনি শিক্ষা বঞ্চিত হওয়ায় সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে এক ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে এসেছে। ঘুষ, সুদ, দুর্নীতি, প্রতারণা, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, সন্ত্রাসসহ নৈতিক চরিত্রের চরম অবক্ষয় ঘটেছে। শিশু মনে নৈতিকতার বীজ বপন না করে শুধু থানা-পুলিশ, কোর্ট-আদালতের ভয় দেখিয়ে আইন-শৃংখলার উন্নয়ন, দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি দূরীকরণ ও নৈতিকতার অবক্ষয় রোধ করা সম্ভব নয়। এ অবস্থায় মানব সম্পদের উন্নয়ন ও জাতির অগ্রগতির স্বার্থে দ্বীনি শিক্ষা অর্জন আমাদের অপরিহার্য কর্তব্য।
শিশুদের মন কাদামাটির মত কোমল। এ সময় তাদেরকে যেমন খুশি তেমন করে গড়ে তোলা যায়। তাই শৈশবকালীন শিক্ষা সম্পর্কে জনৈক মনীষী বলেন,
اَلسَّعْىُ فِى الطِّفْلِ كَنَقْشِ الْحَجَرِ وَالسَّعْىُ فِى الشُّيُوْخِ كِكِتَابَةِ الْمَاءِ
অর্থ: ‘শৈশবের চেষ্টা সাধনা পাথরে খোদিত নকশার ন্যায়। আর বার্ধক্যে চেষ্টা সাধনা পানির উপর লিখনের ন্যায়।’
আমাদের জাতিসত্তাকে সৎ-সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন সোনার মানুষ ও সুনাগরিক। আর সেই সোনার মানুষ ও সুনাগরিক গড়ে তোলার কারখানা হলো আমাদের ঐতিহ্যবাহী হাজার বছরের গড়ে উঠা দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাদরাসা। এর বিকল্প যতই খোঁজা হবে, জাতি হিসেবে আমরা ততই দেউলিয়া হবো-পতনের দিকে এগিয়ে যাবো।

দ্বীনি শিক্ষার মশাল মাওলনা আবুল ওয়াফা শামসী (র:)
যুগে যুগে মানুষের মাঝে দ্বীনি দিপশিখা প্রজ্জলন ও আলোর পথ প্রদর্শনের জন্য মহান আল্লাহ তা’আলার একান্তই ইচ্ছায় রসুল (স.) এর ওয়ারিশ হিসেবে পৃথিবীতে আগমন করেন ক্ষণজন্মা বিদগ্ধ আলিমগণ। পার্বত্য আবহ ও নিরবতায় আচ্ছন্ন নিরেট খাঁটি সবুজের সমারোহে ঢাকা অখ্যাত একটি ভূখন্ডে লোহাগাড়া চরম্বা ইউনিয়নের রাজঘাটা গ্রামে অলিয়ে কামেল গারাঙ্গিয়া বড় হুজুর (র:) এর প্রথম সারির খলিফা পীরে মোকাম্মেল হযরত মাওলানা আবদুস সালাম (র:) এর ঔরসে জন্ম নেন প্রখ্যাত মুহাদ্দিস, মুজাদ্দিদে যমান আলহাজ্ব শাহ মাওলানা আবুল ওয়াফা শামসী (র:)। ১৯৪২ সালে একটি শুভক্ষণে তিনি পৃথিবীর আলোর মুখ দেখেন। তাঁর মাতা মুসাম্মৎ রফিউল খাইর অত্যন্ত মহিয়সী ও বিদুষীনি মহিলা ছিলেন। শৈশবে দ্বীনি শিক্ষা ও প্রাথমিক পাঠ শেষে তিনি চট্টগ্রামের বিখ্যাত ইলমী মারকায পটিয়ার প্রসিদ্ধ আল জামেয়াতুল আরাবিয়্যা (জিরি মাদরাসা) থেকে ১৯৬৫ সাল মোতাবেক ১৩৮৫ হিজরীতে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেন। হাদিস শিক্ষার সর্বোচ্চ সনদ লাভের পর নিজের জীবনকে বিলিয়ে দেন ইলমী ময়দানের সীমাহীন সাগরে। টাঙ্গাইলের করটিয়া আলীয়া মাদরাসায় দীর্ঘদিন ইলমে হাদিসের আলোর বিতরণের পর তিনি চট্টগ্রাম মিয়াখাঁন নগর মুজাহেরুল উলুম মাদরাসায় মুহাদ্দিস হিসেবে যোগদান করেন। তাঁর দক্ষতা, বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতায় মুগ্ধ হয়ে মাজলীসে শুরা (পরিচালনা পর্ষদ) এক বছর পর তাঁকে মাদরাসার নির্বঅহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্বভার প্রদান করেন। দীর্ঘ ১৯ বছর এ গুরুদায়িত্ব পালনের পর ১৯৮৮ সালের দিকে তিনি পশ্চিম পটিয়ার ঐহিত্যবাহী ইলমে হাদীসের দরসগাহ শাহমীরপুর মাদরাসার প্রধান পরিচালকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তাঁর পরিচালনায় মাদরাসাগুলো শিক্ষা, প্রশাসন ও অবকাঠামোগতভাবে প্রভূত উন্নতি সাধন করে। দুনিয়ায় তাঁর এ পথ চলায় অর্জনের চেয়ে বিসর্জনে ছিল ভরপুর। নিজের প্রাপ্তির চেয়ে সমাজকে গড়ার এক ঐকান্তিক ইচ্ছা তাঁকে ভিতরে বাহিরে আন্দোলিত করত। কর্মজীবনে হাজারো আলেম তৈরি করে সমাজে প্রজ্বলন করেছেন দ্বীনি আলোর মশাল।

জীবনের শেষপ্রান্তে এসে তাঁর জন্মভূমি অজপাড়া গাঁয়ের পিছিয়ে পড়া মানবতাকে দ্বীনের সঠিক দিশা দানের জন্য ১৯৯৩ সালের ৩১ মার্চ জামিয়া কুরআনিয়া দারুল উলুম ওসমানাবাদ মাদরাসার ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। শূণ্য থেকে বালুকণা তেকে বিশাল মরুভূমি গড়া ও বিন্দুপানি থেকে সীমাহীন সমুদ্র সাজানোর এক অনন্য কারিশমা আল্লাহ তা’আলা তাঁকে দান করেছিলেন। রাজঘাটা গ্রামের তাঁর পৈতৃক ভূমিতে ধানের চারা গজানোর উর্বর জায়গাতে কুরআন সুন্নাহর বীজ বুননের মধ্য দিয়ে ইলমী জগতে অসামান্য অবদান তাঁকে চিরস্মরণীয় করে রাখবে। যে অনুন্নত গ্রামে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি মক্তব পরিচালনা করা কঠিন সেখানে জামিয়া কুরআনিয়া দারুল উলুম ওসমানাবাদ খ্যাত দাওরায়ে হাদীসের (মাস্টার্স) দরস ইলমী ইতিহাসে এক মাইল ফলক।

ধর্মপ্রাণ মুসলিম জনতার একান্ত অনুদানে পরিচালিত ইলমী মারকাযগুলোর অগ্রযাত্রার স্বার্থে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র ভ্রমণ করেছেন। সৌদি আরব, সংযুক্ত আর আমিরাত, ওমান, মালয়েশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর প্রভৃতি দেশে তিনি সফর করেন।

পারিবারিকভাবে তিনি ইলমে ত্বরিকতের আধ্যাত্বিকতার ছোঁয়ায় প্রভাবিত ছিলেন। তার পিতা মুজাদ্দেদীয়া ত্বরিকতের একজন একনিষ্ঠ খাদেম, কামিল মুজাদ্দিদ ও মুহাক্কীক আলেম ছিলেন। রুহানী জগতে তাঁর বিচরণের স্বীকৃতিস্বরূপ আল জামেয়াতুল ইসলামিয়া পটিয়ার সাবেক মহাপরিচালক হাজী মাওলানা মুহাম্মদ ইউনুচ (র:) তাঁকে ত্বরিকতের খিলাফত প্রদান করেন। আধ্যাত্বিক উৎকর্ষসাধনের উচ্চ শিখরে অবস্থান করায় পাকিস্তানের প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন মাওলানা আজীমুল হক হালীমি, পটিয়া মাদরাসার প্রখ্যাত মুহাদ্দীস মাওলানা আলী আহমদ বোয়ালভী (র:), টেকনাফ হ্নীলা মাদরাসার ছদর ছাহেব (র:) গারাঙ্গিয়ার খলিফা আলেমে দ্বীন কলাউজানের মাওলানা আহমদ কবীর সহ অনেকেই তাঁকে চার ত্বরিকার খিলাফত প্রদান করেন।

একজন আলেম হিসেবে অনিন্দ্য সৌন্দর্য্যরে রূপকার এই প্রখ্যাত মনিষী পারিবারিক জীবনের সাত সন্তানের জনক। তাঁর তিন ছেলে মাওলানা আবদুন নূর, হাফেজ মাওলানা আবদুল কাইয়ুম ও মাওলানা আবদুল আহাদকে তিনি যথাযথ আলেম হিসেবে গড়ে তুলেন। চার মেয়েকেই বিদগ্ধ আলেমগণের নিকট পাত্রস্থ করেন। তাঁর শ্বশুর হাকীম নূরুল হক আরবী কধুরখিল, বোয়ালখালীর অধিবাসী হলেও আন্দরকিল্লাহ কেন্দ্রীক তাঁর জীবন অতিবাহিত হয়। ফলে হাকীম সাহেবের অফিস ছিল প্রখ্যাত আলেমগণের একটি নিরাপদ ঠিকানা।

সর্বস্তরের মানুষের মাঝে গ্রহণযোগ্যতার এক অনন্য গুণে গুণান্বিত ছিলেন। মাওলানা আবুল ওয়াফা শামসী (র:)। দ্বীনের দিকে সাধারণ মানুষকে বিমোহিত করার অজানা কৌশল ও সম্মোহনী শক্তি ছিল তাঁর প্রতি আল্লাহ তা’আলার এক অনবদ্য দান। দক্ষিণ চট্টগ্রামের এই বর্ষীয়ান আলেম মাদরাসা জগতে অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। তাঁর ব্যক্তিত্বের মাঝে লুকায়িত ছিল সুন্নাতী আবহ। দ্বীনি বাগান সাজানোর একজন নিপুণ কারিগর ছিলেন তিনি। অনন্য মেহমানদারীর মাধ্যমে মানুষের হৃদয়বিবলিত করার একটি বিশাল চিত্ত তাঁর হৃদয়মাঝে বিরাজমান ছিল।

নতুন প্রজন্মের জন্য দৃষ্টান্তস্থাপনকারী আধুনিক চিন্তু-চেতনায় সমৃদ্ধ বিদগ্ধ আলেম হিসেবে তিনি সুখ্যাতি অর্জন করেন। আজ তিনি আমাদের মাঝে বেঁচে নেই কিন্তু রেখে গেছেন অমর কীর্তি, যেগুলো তাঁকে কিয়ামত পর্যন্ত স্মরণীয় করে রাখবে। গত ৭ আগস্ট ২০১৮, ২৪ জিলক্বদ, ১৪৩৯ হিজরী রোজ মঙ্গলবার সকাল ৮:১৫ মিনিটে তাঁর প্রতিষ্ঠিত মাদরাসায় মৃত্যু বরণ করেন। তাঁর বয়স ছিল আনুমানিক ৭৭ বছর। একইদিন বাদে আছর তাঁর জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর ওসিয়ত অনুযায়ী পটিয়ার হাজী ইউনুছ (র:) এর শাহজাদা মাওলানা জাহেদুল্লাহ জানাযায় ইমামতি করেন। তিনি মরহুম শামসী (র:) একজন সুযোগ্য খলিফা। তাঁর প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা প্রাঙ্গনে তাঁকে সমাহিত করা হয়।

তাঁর জানাযায় অংশ নেন চট্টগ্রাম-১৫ এর সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী। চট্টগ্রাম জামেয়া আরাবিয়া জিরির মুহতামিম মাওলানা শাহ মুহাম্মদ তৈয়ব, হাটহাজারী মাদরাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস, পাকিস্তান করাচী নিউ টাউন মাদাসার সাবেক প্রধান মুফতী মাওলানা আবদুস সালাম চাটগামী, জামেয়া পটিয়ার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা আমিনুল হক, চট্টগ্রাম জামেয়া মুজাহেরুল উলুম মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা লোকমান হাকীম, চুনতী হাকিমিয়া কমিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা হাফিজুল হক নিজামী, প্রধান মুহাদ্দিস মাওলানা শাহে আলম, পতেঙ্গা ইসলামিয়া ফাযিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আবু ছালেহ ছলিমুল্লাহ লোহাগাড়া ইসলামিয়া মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা মাহমুদুল হক। গারাঙ্গিয়া আলিয়া মাদরাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা আবদুল মালেক, হাটহাজারী মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা ফোরকান সাতকানভী, রামু জোয়ারিয়ানালা মাদরাসার পরিচালক মাওলানা হাফেজ আবদুল হক, আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশনের সাবেক মহাসচিব মাওলানা মমতাজুর রহমান, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম এর বিদেশ বিভাগের পরিচালক মাওলানা মুহাম্মদ কামাল উদ্দীন, নয়া দিগন্তের লোহাগাড়া প্রতিনিধি আরাফাত হোছাইন বিপ্লব প্রমুখ। এছাড়াও হাজার হাজার জনতা তাঁর জানাযায় অংশগ্রহণ করেন।

লেখক : অধ্যাপক, চট্টগ্রাম সরকারী মডেল কলেজ, খুলশী, চট্টগ্রাম।