- Lohagaranews24 - https://lohagaranews24.com -

আলোকিত নারীনেত্রী রিজিয়া রেজা চৌধুরী

24899714_1718663111529990_3450178441195727505_n

এম. এ. খালেক : বিশ্বব্যাপী চট্টগ্রামের খ্যাতি এবং ঐতিহাসিকের লেখনীতে চট্টগ্রাম বর্ণাঢ্য-বর্ণিল জ্যোতিমাখা। শিক্ষা-দীক্ষা, সভ্যতা-সংস্কৃতি ও শিল্প-সাহিত্যের বিকাশে আর সমৃদ্ধিতে চট্টগ্রাম’র ভূমিকা বাংলাদেশের শীর্ষে। আর দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলা দেশের ইতিহাসের পাতায় উজ্জ্বল-রঙিন। বিশেষ করে ধর্মীয় শিক্ষা আর ব্যবসা-বাণিজ্যের উত্তরণে-প্রসারে সাতকানিয়ার অবদান ও সুনাম সাত সমুদ্র তের নদীর ওপারে পর্যন্ত ছড়িয়ে। এখানে কতো শতো জ্ঞানী-ধ্যানী সাধক আর প্রজ্ঞাবান’র জন্ম। ধন্য আর গর্বিত এই মাটি আর দেশ।

উপজেলার চরতি ইউনিয়ন ঐতিহ্যঘেরা অঞ্চল। সম্ভ্রান্ত আলেম পরিবারে ১৯৮০ সালে রিজিয়া রেজা চৌধুরী জন্মগ্রহণ করেন। প্রাক-প্রাথমিক পাঠ পারিবারিক পরিমন্ডলে। শিক্ষার গোড়াতেই চমক। পুকুরিয়া আনসারুল উলুম মাদ্রাসা হতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ। আলোকিত এই নারীনেত্রী ১৯৯৪ সালে চট্টগ্রামস্থ সলিমা সিরাজ মহিলা ডিগ্রি মাদ্রাসা হতে স্টারমার্ক অর্জন করে দাখিল ও ১৯৯৬ সালে কৃতিত্বের সাথে আলিম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। তারপর ১৯৯৮ সালে ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম দারুল উলুম কামিল বিশ্ববিদ্যালয় হতে ফাজিল ও ২০০০ সালে কামিল (মাস্টার্স) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণি লাভ করেন। তিনি চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় হতে আরবী ভাষা ও সাহিত্যে ডিপ্লোমা কোর্সও সম্পন্ন করেন।

রিজিয়া রেজা চৌধুরী প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, ভাষাবিদ, সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, মেধাবী বক্তা, চট্টগ্রাম- ১৫ আসনের সাংসদ ও আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশন’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভী’র সাথে ঐক্যে-যুগলে-বিশুদ্ধ উচ্চারণে, মুখোমুখি শপথে, সন্ধিতে, সুরে-ছন্দে-তালে স্থির এবং সুদৃঢ় সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন- নিয়তি ও রিযিকের টানে। শুরু হলো দাম্পত্য জীবন। ২ মেয়ে আর ১ ছেলে তাকে মা বলে ডাকে। তিনি সফল ও সার্থক মা। তাঁর বড়ো মেয়ে কৃতিত্বের সাথে ম্যাকানিক্যাল এন্ড ক্যামিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং’এ পড়ালেখা করছে, মেঝ ছেলে ‘ও লেভেল’ পরীক্ষার্থী এবং ছোট মেয়ে ইংলিশ মিডিয়মে ৩য় শ্রেণিতে পড়ালেখা করছে।

রিজিয়া রেজা চৌধুরী মমতাময়ী। চারপাশের পরিবেশ, সমাজ ও পরিবারে তিনি দৃষ্টি দিলেন। পিছিয়ে পড়া নারীদের দুঃখ-দুর্দশা, অভাব-অনটন লাঘবে তিনি এগিয়ে এলেন। পারিবারিক শতো ব্যস্ততার মাঝেও তিনি ছুঁটে চলেন গ্রাম হতে গ্রামে, পাড়ায়- মহল্লায় এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। বিচিত্র ও বৈচিত্রপূর্ণ অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। তিনি পৃথিবীর অনেক দেশ-জাতির যাপিত জীবনকে কাছ হতে দেখেছেন। সঞ্চয় করেছেন বিচিত্র অভিজ্ঞতা। তিনি একান্তভাবে বিশ্বাস করেন, ‘কথা নয় কাজ এবং কর্মই ধর্ম’। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে তিনি ভারত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, কাতার, কুয়েত, সৌদিআরব, দুবাই, আমেরিকা ও বেলজিয়ামসহ আরো অনেক দেশ সফর করেছেন।

সাতকানিয়া- লোহাগাড়ার নারী সমাজকে শিক্ষা-দীক্ষায় এবং সৃজনশীল কর্মে প্রতিষ্ঠিত করতে অহর্নিশ কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, ‘নারীদেরকে পেছনে রেখে বা অবহেলা করে সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন বাস্তবায়ন অসম্ভব’। গতো ২০১৭ সালের ৯ ডিসেম্বর সাতকানিয়া উপজেলা প্রশাসন নারী শিক্ষা ও জাগরণে অসামান্য অবদান রাখায় তাঁকে ‘জয়িতা’ পুরস্কারে ভূষিত করেন। তিনি অগণিত নারীর আশ্রয়স্থল। সমাজ উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কর্মকান্ডে তিনি জড়িত। বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেও তিনি দলমত নির্বিশেষে সকলের কাছে শ্রদ্ধেয় ও সুপ্রিয় হয়ে ওঠেছেন।

সমাজ সংস্কার ও উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডকে গতিশীল রাখতে তিনি সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করলেন। বিভিন্ন সমাজ উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে মুগ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবে মনোনীত করেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশের রাজনীতির অঙ্গনে আলোকিত রাজনীতিক। অত্যন্ত বিচক্ষণতা, দক্ষতা ও যোগ্যতার সাথে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড বাস্তবায়নে তিনি বিশেষ অবদান রেখে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে লোহাগাড়া-সাতকানিয়ার শিক্ষিত ও সচেতনমহল রিজিয়া রেজা চৌধুরীকে আগামীতে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনে সাংসদ হিসেবে দেখতে চায়।

রিজিয়া রেজা চৌধুরী একজন দক্ষ সংগঠক, নির্লোভ সমাজকর্মী ও কর্মবীর, সাহসী রাজনীতিবিদ এবং আলোকিত নারীনেত্রী। তাঁর উল্লেখযোগ্য সৃজনশীল ও গতিশীল সামাজিক কর্মগুলো হচ্ছে- ১) আন্তর্জাতিক এনজিও আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশন’র নারী ও শিশু বিভাগের দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে গ্রামীণ অশিক্ষিত অবহেলিত নারীদেরকে সফলভাবে সচেতন করে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে। ২) বর্তমানে তিনি আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব সফলতার সাথে পালন করছেন। তাঁর নেতৃত্বে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কুয়েত পল্লী, আমিরাত পল্লী ও নদভী পল্লী নির্মাণ করে গৃহহীন মানুষদের পুনর্বাসন করা হয়েছে এবং ওইসব পল্লীর নারীদের কর্মমুখী বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। ৩) তিনি ঐতিহ্যবাহী নারী সংগঠন ‘বাংলাদেশ মহিলা সমিতি (বাওয়া)’, লেডিস ক্লাব, সাতকানিয়া- লোহাগাড়া মহিলা উন্নয়ন ফোরাম ও সাতকানিয়া- লোহাগাড়া সামাজিক ব্যাধি প্রতিরোধ ফোরামসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা এবং সুচারুভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এসব সংগঠনের মাধ্যমে তিনি নারী ও শিশু নির্যাতন, বাল্যবিবাহ, মাদক, জঙ্গীবাদ ও ইভটিজিং প্রতিরোধে অনন্য ভূমিকা রাখছেন। ৪) তিনি শিক্ষা, শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দরদী একজন নারীনেত্রী। লোহাগাড়ায় নারী ও শিশু শিক্ষা উন্নয়নে ‘জনকল্যাণ শিক্ষা কমপ্লেক্স’ প্রতিষ্ঠা করেন। শিক্ষার পরিবেশ সমুন্নত রাখতে লোহাগাড়া উপজেলার পুটিবিলা উচ্চ বিদ্যালয় ও গৌড়স্থান উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তাছাড়াও তিনি সাতকানিয়া আল হেলাল ডিগ্রি কলেজের গভর্নিং বডি’র সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন এবং ২০১৭ সালে এই কলেজটি উপজেলার শ্রেষ্ঠ কলেজ হিসেবে নির্বাচিত হয়। ৫) তিনি রহিমা খাতুন ছিন্নমূল শিশু শিখন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। যেখানে ৮৫টি স্কুলে ৩০০০ শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে এবং ১০০ জন শিক্ষক কর্মরত আছেন। ৬) সম্প্রতি তাঁর তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের পুনর্বাসন উপলক্ষে প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। ৭) তাঁর নেতৃত্বে লোহাগাড়া উপজেলার পুটিবিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের দ্বারা ২০ হাজার গাছের চারা রোপন করা হয় এবং এজন্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক জাতীয় পুরস্কার প্রদান করা হয়।

সততা, নিষ্ঠা, মমতা-যোগ্যতায় ও মেধা-মননে রিজিয়া রেজা চৌধুরী অসাধারণ ও অপূর্ব। গ্রাম হতে শহর, শহর হতে রাজধানী সর্বত্র তাঁর সফল পদচারণা। তিনি ব্যক্তি হতে ব্যক্তিত্বে উন্নীত। তিনি একজন আদর্শ রাজনীতিবিদ। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ বুকে ধারণ করে আলোকিত নারীনেত্রী ও সংগঠক রিজিয়া রেজা চৌধুরী সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন।