
নিউজ ডেক্স : শ্রীলঙ্কার বেহাল দশা ও চীনের লকডাউন দেশের গার্মেন্টস খাতকে সংকটে ফেলছে। সাংহাইতে করোনা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হওয়ায় ৯ দিনের লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এতে বিভিন্ন গার্মেন্টস কারখানার বিপুল পরিমাণ কাঁচামাল ও স্যাম্পল আটকা পড়েছে। অপরদিকে কলম্বো বন্দরে দেখা দেয়া জাহাজ ও কন্টেনার জটে আটকা পড়েছে বিপুল পরিমাণ পণ্য। ফলে দেশে কাঁচামাল আমদানি যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি তৈরি পোশাক রপ্তানিও বিঘ্নিত হচ্ছে। করোনা পরবর্তী ঘুরে দাঁড়ানো গার্মেন্টস খাত বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আবার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
জানা যায়, চীনে করোনা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি ঘটেছে। তবে চীনের অতি সতর্কতা পরিস্থিতিকে আরো সংকটাপন্ন করে তুলছে। কোথাও এক-দুজন রোগী পেলেও চীন স্থানীয়ভাবে তাৎক্ষণিক লকডাউন ঘোষণা করছে। এতে করে চীনের অনেক জায়গা বর্তমানে লকডাউনের মধ্যে রয়েছে। করোনা পরিস্থিতির বিস্তার ঘটায় সাংহাইতে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এতে করে বিশ্বের ব্যস্ততম সাংহাই বন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি শিল্প কারখানার উৎপাদন ও পণ্য পরিবহনও ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের বেশিরভাগ কাঁচামাল ও স্যাম্পল আমদানি হয় সাংহাই থেকে। সাংহাই বন্দর হয়ে প্রচুর পণ্য আসে দেশে। লকডাউনের কারণে সাংহাই থেকে পণ্য আসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। অপরদিকে বিমানযোগে স্যাম্পল আনার ক্ষেত্রেও দীর্ঘ সময় লাগছে। আগে সর্বোচ্চ ৫ দিনের মধ্যে চীন থেকে স্যাম্পল কিংবা কাঁচামাল দেশে আসত। করোনার বিস্তার ও লকডাউনের কারণে এখন গড়ে ১৫ দিন সময় লাগছে। নির্দিষ্ট সময়ে স্যাম্পল ও কাঁচামাল না পাওয়ায় বিভিন্ন গার্মেন্টস কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
একাধিক গার্মেন্টস ব্যবসায়ী বলেন, চীন হচ্ছে বিশ্বের কারখানা। গার্মেন্টস সেক্টরের বিপুল পরিমাণ পণ্য চীন থেকে আনা হয়। সাংহাই হয়ে এসব পণ্য বাংলাদেশে আসে। বর্তমানে লকডাউনের কারণে মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে। স্যাম্পল নিয়ে বিপদে পড়ার কথা উল্লেখ করে তারা বলেন, সাংহাই থেকে বিভিন্ন কাঁচামাল আমদানি করা হয়। জিপার, বোতাম কিংবা হুক জাতীয় বিভিন্ন পণ্য আমরা চীন থেকে আনি। এসব পণ্য ছোট হলেও পুরো উৎপাদন প্রক্রিয়া ওই পণ্যের ওপর নির্ভরশীল। পুরো শার্ট বা টি-শার্ট সেলাই করে যদি বোতাম লাগাতে না পারি, প্যান্ট সেলাই করে যদি জিপার লাগানো সম্ভব না হয়, তাহলে পণ্য রপ্তানি করা সম্ভব নয়। সাংহাইয়ের লকডাউনের কারণে বর্তমানে দেশের অসংখ্য গার্মেন্টস কারখানা এই সংকটে পড়েছে। আবার সঠিক সময়ে কাঁচামাল না আসায় গার্মেন্টসগুলোতে পণ্য উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। এতে সঠিক সময়ে রপ্তানি পণ্য জাহাজিকরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। অনেক গার্মেন্টস মালিক সময়মতো পণ্য তৈরি করতে না পারায় অর্ডার বাতিলের ঝুঁকিতে রয়েছেন।

বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, চীনের সাংহাইতে লকডাউন আমাদের গার্মেন্টস সেক্টরে বড় সংকট তৈরি করেছে। স্যাম্পল ও কাঁচামাল আমদানিতে সময় লাগছে, যা আমাদের স্বাভাবিক উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যাহত করছে। ব্যাহত করছে পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি কার্যক্রম। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করা দেশের গার্মেন্টস খাতে চীনের পরিস্থিতি নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে। তিনি বলেন, আমাদের গার্মেন্টস খাত প্রায় পুরোটাই চীনের ওপর নির্ভরশীল। এখন চীন যদি ভালো না থাকে তাহলে আমাদের ভালো থাকা কঠিন হয়ে যাবে।
এদিকে, চীনের সাংহাই পরিস্থিতিতে সংকটে পড়া গার্মেন্টস খাতে মহাসংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে শ্রীলঙ্কা পরিস্থিতি। কলম্বো বন্দরে জাহাজ ও কন্টেনার জট বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে সংকট তৈরি করছে। বাংলাদেশ থেকে পণ্য গিয়ে আটকা পড়ছে কলম্বো বন্দরে। নির্ধারিত সময়ে ইউরোপ-আমেরিকার মাদার ভ্যাসেল ধরতে না পারায় অনেক পণ্যবাহী কন্টেনার সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছছে না। একইভাবে কাঁচামালবাহী কন্টেনার সময়মতো আসছে না চট্টগ্রাম বন্দরে। শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সংকট থাকবে বলে আশঙ্কা গার্মেন্টস সংশ্লিষ্টদের।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেনার ফিডার ভ্যাসেলের মাধ্যমে সিঙ্গাপুর, কলম্বো ও মালয়েশিয়ার পেনাং বন্দর হয়ে বিশ্বের নানা গন্তব্যে পৌঁছে। একইভাবে বিশ্বের নানা দেশ থেকে আসা পণ্যবাহী কন্টেনারও উক্ত ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্ট হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে। ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্টের যেকোনো একটিতে সমস্যা দেখা দিলে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হয়। -আজাদী প্রতিবেদন