- Lohagaranews24 - https://lohagaranews24.com -

আতঙ্ক তৈরি ও প্রচার পেতেই পুলিশের ওপর হামলা করে জঙ্গিরা

monirul-20200120134308 1

নিউজ ডেক্স : গত বছরে পুলিশের ওপর আচমকা যে হামলাগুলো হয়েছিল, তার মূল উদ্দেশ্য আতঙ্ক তৈরি করা ও প্রচার পাওয়া ছিল বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, পুলিশের ওপর হামলা প্রতীকী হলেও এর মূল উদ্দেশ্য আতঙ্ক সৃষ্টি করা। আর যেহেতু জঙ্গিবাদের নেটওয়ার্ক ভেঙে দিতে পুলিশের তৎপরতা বেশি, তাই আতঙ্ক তৈরিতে পুলিশের ওপর টার্গেট করে হামলার চেষ্টা করেছে জঙ্গিরা।

মনিরুল ইসলাম বলেন, জঙ্গিরা সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মাধ্যমে চায় প্রচার। পুলিশের ওপর হামলা করলে প্রচারটা বেশি পাওয়া যায়। তাছাড়া পুলিশের ওপর হামলা করলে জনমনে ভয়-ভীতিটা বেশি সৃষ্টি হবে। কারণ পুলিশ জনগণকে নিরাপত্তা দেবে। সেখানে পুলিশেই যদি অরক্ষিত হয় তাহলে জনগণকে কীভাবে নিরাপত্তা দেবে। এই জায়গায় তারা পুলিশের ওপর হামলার টার্গেট করেছিল। তাছাড়া হলি আর্টিসান হামলার পরে পুলিশের যে সক্ষমতা বেড়েছে, জঙ্গিদের যে নেটওয়ার্কিং গড়ে উঠেছিল তা বিপর্যস্ত-দুর্বল করে দেয়ার কাজটি পুলিশই করেছিল। সেজন্য তারা পুলিশকেই টার্গেট করেছে।

গত বছর রাজধানীর গুলিস্তান, মালিবাগ, সাইন্সল্যাব, পল্টন ও খামারবাড়িতে পুলিশের ওপর চালানো হামলার সাথে জড়িত দুজনকে রোববার রাতে আটকের পর সোমবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মনিরুল। ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

রোববার যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা হলেন, মো. জামাল উদ্দিন রফিক ও মো. আনোয়ার হোসেন।

মনিরুল বলেন, গত বছর যে হামলাগুলো হয়েছে তার প্রত্যেকটির মূলপরিকল্পনাকারী রফিক। তিনি নিজে চারটিতে সরাসরি অংশ নেন। আর আনোয়ার সবগুলোতে নেপথ্যে থেকে সহযোগিতা করেন এবং একটিতে সরাসরি অংশ নেন।

মনিরুল ইসলাম বলেন, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় এর আগে দুই দফায় চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন, ফরিদ উদ্দিন রুমি, আব্দুল্লাহ আজমীর, মেহেদি হাসান তামিম ও মিশুক খান। এদের মধ্যে তিনজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, ওই ঘটনাগুলোর তদন্তে ও স্বীকারোক্তিতে উঠে আসে হামলার পরিকল্পনাকারী রফিক। আর সহযোগী হিসেবে উঠে আসে আনোয়ারের নাম।

রফিক ও আনোয়ার কালো পোশাক পরে খেলনা অস্ত্র, সুইসাইডাল ভেস্ট পরে বিভিন্ন উগ্রবাদী কথাবার্তা সম্বলিত একটি ভিডিও ক্লিপ অনলাইনে প্রচার করেছিল। ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেখা যায় চারজনের মধ্যে ফরিদ উদ্দিন রুমি, আব্দুল্লাহ আজমীরের সাথে এই গ্রেফতার রফিক ও আনোয়ার অংশ নিয়েছিল। ওই ভিডিও ক্লিপে অংশ নেয়া এই দুজনসহ সবাই গ্রেফতার রয়েছে। পুলিশের মনোবল ভেঙে দেয়াসহ তাদের উগ্রবাদী সংগঠনের সক্ষমতা ও রিক্রুটমেন্ট ত্বরান্বিত করার মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যে অনলাইনে ভিডিও ক্লিপ প্রচার করেছিল তারা।

মনিরুল ইসলাম বলেন, জামাল উদ্দিন রফিক পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। তিনি চাকরির পাশাপাশি আউটসোর্সিংয়ের কাজ করেছে। সেখান থেকে অর্জিত আয়ে ছোট সেল গঠন করে জঙ্গিবাদী কার্যক্রমের রসদ সংগ্রহে ব্যয় করে। গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের তক্কা মোড়ে রফিকের বাসায় অভিযান পরিচালনা করে বোমা তৈরির কারখানার সন্ধান, বোমাসহ বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকদ্রব্য, লিকুইড জব্দ করা হয়েছিল। এসব কিনতে অর্থের সংস্থান মূলত রফিকের।

রফিকের ভাই ফরিদ উদ্দিন রুমি। কুয়েটে পড়াশোনার সময় সে প্রথমে আনসার আল ইসলামের পক্ষে লেখালেখি করেছে। পরে প্রকৃত জেহাদি মনে করে নব্য জেএমবিতে যোগ দেয়। এরপর সে তার ভাই রুমিকেও প্রভাবিত করে জঙ্গিবাদে জড়ায়। এরআগে যে দুজন গ্রেফতার হয়েছে তারাও রফিকের সার্কেলের ইঞ্জিনিয়ার।