- Lohagaranews24 - http://lohagaranews24.com -

শান্তিতে নোবেল পেল ডব্লিউএফপি

আন্তর্জাতিক ডেক্স : সংঘাত ও যুদ্ধকবলিত এলাকাগুলোতে ক্ষুধা নিরসনে অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরুপ এ বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেল জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি বা ডব্লিউএফপি।

শুক্রবার নরওয়ের স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩ টা) রাজধানী অসলো থেকে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি এবারের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করে।

নোবেল কমিটি বলছে, ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াই, শান্তি প্রতিষ্ঠায় যুদ্ধ-সংঘাত কবলিত এলাকার পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং যুদ্ধ ও সংঘাতের অস্ত্র হিসেবে ক্ষুধাকে ব্যবহার রোধ করতে চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করার জন্য ক্ষুধার বিরুদ্ধে অব্যাহত লড়াই প্রচেষ্টার স্বীকৃতিস্বরুপ সংস্থাটিকে এবার শান্তিতে নোবেল দেয়া হলো।

আরও বলেছে, ২০২০ সালের নোবেল বিজয়ী বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি খাদ্য সুরক্ষাকে শান্তির উপকরণ হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বহুপাক্ষিক সহযোগিতায় মূল ভূমিকা পালন করেছে এবং যুদ্ধ ও সংঘাতের অস্ত্র হিসাবে ক্ষুধার ব্যবহারকে মোকাবেলায় জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে একত্রিত করার জন্য জোরালো অবদান রেখেছে।

নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির চেয়ারম্যন বেরিট রেইস- অ্যান্ডারসন শান্তিতে নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণা করে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সংহতি ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতার প্রয়োজন আগের তুলনায় আরও স্পষ্ট ও দৃশ্যমান হওয়া প্রয়োজন।’

সংগঠন ও সংস্থার মধ্যে সর্বোচ্চ তিনবার নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছে আন্তর্জাতিক রেডক্রস। ১৯১৭, ১৯৪৪ ও ১৯৬৩ সালে রেডক্রসকে শান্তিতে নোবেল দেয়া হয়। এ ছাড়া ১৯৫৪ ও ১৯৮১ সালে শান্তিতে নোবেল পেয়ে এ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি জাতিসংঘের খাদ্য সহায়তা সংক্রান্ত সংস্থা। এটি ক্ষুধা ও খাদ্য নিরাপত্তার সাথে জড়িত বিশ্বের বৃহত্তম সংস্থা। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির নিজস্ব তথ্যমতে সংস্থাটি প্রতি বছর ৮৮টি দেশে ৯৭ কোটি মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেয়। সংস্থাটির সদর দফতর রোমে অবস্থিত। সারা বিশ্বে এর ৮০টিরও বেশি শাখা আছে।

নোবেল পুরস্কারের অর্থমূল্য এখন এক কোটি সুইডিশ ক্রোন; যা প্রায় ১১ লাখ মার্কিন ডলার অর্থাৎ বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯ কোটি ৩২ লাখ টাকারও বেশি। আগামী ১০ ডিসেম্বর নরওয়ের রাজধানী অসলোতে পুরস্কার প্রদান করা হবে।

২০১৯ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার পান ইথিওপিয়ার সংস্কারপন্থী প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ। মূলত দুই দশক ধরে প্রতিবেশী ইরিত্রিয়ার সঙ্গে চলা যুদ্ধের অবসান ও দেশটির মধ্যে জাতিগত সংঘাত নিরসনের ইথিওপিয়ার আমূল সংস্করের কারিগর হিসেবে তাকে শান্তিতে নোবেল দেয়া হয়।

বিজয়ী বাছাইয়ের কাজে নিয়োজিত কমিটিতে কয়েক বছরের বিতর্ক এবং যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনার পর সাহিত্যে চলতি বছরের নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন মার্কিন কবি লুইস গ্লুক। গতকাল বৃহস্পতিবার সুইডেনের স্থানীয় সময় দুপুর ১টায় সুইডিশ একাডেমি বিশ্বের সম্মানজনক এ পুরস্কারের বিজয়ীর নাম ঘোষণা করে।

ডিএনএ সম্পাদনায় ক্রিসপার বা ক্যাস-৯ নামের নতুন একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য এ বছর রসায়নে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ফ্রান্সের ইমানুয়েল শরপেনটির ও যুক্তরাষ্ট্রের জেনিফার এ দোনা। গত বুধবার রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস ওই তিন রসায়নবিদের নাম ঘোষণা করে।

WFP.jpg

কৃষ্ণ গহ্বর সম্পর্কে নতুন আবিষ্কারের গবেষণায় পদার্থে নোবেল পেয়েছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানী রজার পেনরোস, মার্কিন জ্যোতির্বিদ রেইনহার্ড গেঞ্জেল ও জার্মান পদার্থবিদ আন্দ্রিয়া ঘেজতিন বিজ্ঞানী। গত মঙ্গলবার রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি এ বছরের পদার্থে নোবেলজয়ীদের নাম ঘোষণা করে।

গত সোমবার হেপাটাইটিস সি ভাইরাস আবিষ্কার এবং এর চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য মার্কিন বিজ্ঞানী হার্ভে জে আল্টার ও চার্লস এম রাইস এবং ব্রিটিশ বিজ্ঞানী মাইকেল হাউটন দুই মার্কিন বিজ্ঞানীকে চিকিৎসায় নোবেল জয়ী হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়।

ডিনামাইট আবিষ্কারক আলফ্রেড নোবেল ৩ কোটি ১০ লাখ ক্রোনার রেখে গিয়েছিলেন, আজকের বাজারে যা প্রায় ১৮০ কোটি ক্রোনের সমান। তার রেখে যাওয়া ওই অর্থ দিয়েই ১৯০১ সাল থেকে মর্যাদাপূর্ণ এ নোবেল পুরস্কারের প্রচলন করা হয়। এতদিন এ নোবেল পুরস্কারের অর্থমূল্য ছিল ৯০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার।

আলফ্রেড নোবেলের উপার্জিত অর্থ দিয়ে ১৯০১ সালে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাবিজ্ঞান, সাহিত্য ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কারে গোড়াপত্তন ঘটে। ১৯৬৮ সালে এ তালিকায় যুক্ত হয় অর্থনীতি। আগামী ১২ অক্টোবর অর্থনীতিতে এ বছরের নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে।

পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা এবং অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী বা বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে দ্য রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স। দ্য রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি থেকে সাহিত্য এবং নরওয়ের রাজধানী অসলো থেকে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী কিংবা বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়।

পত্রিকা পড়ার গল্প

Posted By admin On In দেশ-বিদেশের সংবাদ,ব্রেকিং নিউজ,শীর্ষ সংবাদ | No Comments

নিউজ ডেক্স : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছেলেবেলার স্মৃতি থেকে কীভাবে সংবাদপত্র তার দৈনন্দিন জীবনের একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হয়ে উঠেছে এবং বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রভাবে শৈশব থেকেই কীভাবে তিনি অভ্যাসটি বিকশিত করেছিলেন, তা নিয়ে একটি নিবন্ধ লিখেছেন। নিবন্ধটি সংক্ষিপ্ত আকারে ইতোপূর্বে একটি টিভি চ্যানেলের বিশেষ সংস্করণে প্রকাশিত হয়েছিল।

নিবন্ধটি নিচে দেয়া হলো-

এক

ভোরে ঘুম থেকে উঠে একে একে সকলে জড়ো হতাম মায়ের শোবার ঘরে। হাতে চায়ের পেয়ালা, বিছানার উপর ছড়ানো-ছিটানো খবরের কাগজ… একজনের পর আরেকজন, এক-একটা খবর পড়ছে আর অন্যেরা মন দিয়ে শুনছে বা মতামত দিচ্ছে। কখনও কখনও তর্কও চলছে– কাগজে কী লিখল বা কী বার্তা দিতে চাচ্ছে? যার যার চিন্তা থেকে মতামত দিয়ে যাচ্ছে। এমনিভাবে জমে উঠছে সকালের চায়ের আসর আর খবরের কাগজ পড়া।

আমাদের দিনটা এভাবেই শুরু হতো। অন্তত ঘণ্টা তিনেক এভাবেই চলতো। আব্বা প্রস্তুত হয়ে যেতেন। আমরাও স্কুলের জন্য তৈরি হতাম। আব্বার অফিস এক মিনিটও এদিক-সেদিক হওয়ার জো নেই। সময়ানুবর্তিতা তার কাছে থেকেই আমরা পেয়েছি। সংবাদপত্র পড়া ও বিভিন্ন মতামত দেয়া দেখে আব্বা একদিন বললেন: ‘বলতো, কে কোন খবরটা বেশি মন দিয়ে পড়?’

আমরা খুব হকচকিয়ে গেলাম। কেউ কোনো কথা বলতে পারি না। আমি, কামাল, জামাল, রেহানা, খোকা কাকা, জেনী সকলকেই সেখানে। এমনকি ছোট্ট রাসেলও আমাদের সাথে। তবে, সে পড়ে না, কাগজ কেড়ে নেয়ার জন্য ব্যস্ত থাকে।

আমরা কিছু বলতে পারছি না দেখে আব্বা নিজেই বলে দিলেন– কে কোন খবরটা নিয়ে আমরা বেশি আগ্রহী। আমারা তো হতবাক। আব্বা এত খেয়াল করেন! মা সংবাদপত্রের ভিতরের ছোট ছোট খবরগুলো, বিশেষ করে সামাজিক বিষয়গুলো বেশি পড়তেন। আর কোথায় কী ঘটনা ঘটছে তা-ও দেখতেন। কামাল স্পোর্টসের খবর বেশি দেখতো। জামালও মোটামুটি তাই। আমি সাহিত্যের পাতা, আর সিনেমার সংবাদ নিয়ে ব্যস্ত হতাম। এভাবে একেকজনের একেক দিকে আগ্রহ।

খুব ছোটবেলা থেকেই কাগজের প্রতি রেহানার একটা আলাদা আকর্ষণ ছিল। আব্বা ওকে কোলে নিয়ে বারান্দায় চা খেতেন আর কাগজ পড়তেন। কাগজ দেখলেই রেহানা তা নিয়ে টানাটানি শুরু করতো– নিজেই পড়বে– এমনটা তার ভাব ছিল। এর পর ধানমন্ডির বাড়িতে যখন আমরা চলে আসি, তখন আমাদের সাথে সাথে ওরও কাগজ পড়া শুরু হয়। যখন একটু বড় হলো, তখন তো তার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে খবর পড়ার অভ্যাস হলো। ওর দৃষ্টি থেকে কোনো খবরই এড়াতো না, তা সিনেমার খবর হোক বা অন্য কিছু। আর ছোটদের পাতায় অনেক গল্প, কবিতা, কুইজ থাকতো। রেহানা সেগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে পড়তো।

এখন রেহানা লন্ডনে থাকে। সেখানে সে অনলাইনে নিয়মিত দেশের পত্রপত্রিকা পড়ে। শুধু যে পড়ে তাই না, কোথায়ও কোনো মানুষের দুঃখ-কষ্টের খবর দেখতে পেলে সাথে সাথে আমাকে মেসেজ পাঠায়– অমুককে সাহায্য কর, এখানে কেন এ ঘটনা ঘটলো, ব্যবস্থা নাও…। উদাহরণ দিচ্ছি। এই তো করোনাভাইরাসের মহামারির সময়েরই ঘটনা। একজন ভিক্ষুক ভিক্ষা করে টাকা জমিয়েছিলেন ঘর বানাবেন বলে। কিন্তু করোনাভাইরাসের মহামারি শুরু হওয়ায় ওই ভিক্ষুক তার সব জমানো টাকা দান করে দেন করোনাভাইরাস রোগীদের চিকিৎসার জন্য। খবরের কাগজে এই মহানুভবতার খবর রেহানার মনকে দারুণভাবে নাড়া দেয়। আমাকে সাথে সাথে সে বিষয়টা জানায়। আমরা তার জন্য ঘর তৈরি করে দিয়েছি। এভাবে এ পর্যন্ত অনেক মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি শুধুমাত্র আমার ছোট্ট বোনটির উদার মানবিক গুণাবলীর জন্য, ওর খবরের কাগজ পড়ার অভ্যাসের কারণে। সুদূর প্রবাসে থেকেও প্রতিনিয়ত সে দেশের মানুষের কথা ভাবে। পত্রিকায় পাতা থেকে খবর সংগ্রহ করে মানুষের সেবা করে।

দুই

আমার ও কামালের ছোটবেলা কেটেছে টুঙ্গিপাড়ায় গ্রামের বাড়িতে। সেকালে ঢাকা থেকে টুঙ্গিপাড়ায় যেতে সময় লাগতো দুুই রাত একদিন। অর্থাৎ সন্ধ্যার স্টিমারে চড়লে পরের দিন স্টিমারে কাটাতে হতো। এরপর শেষ রাতে স্টিমার পাটগাতি স্টেশনে থামতো। সেখান থেকে নৌকার দুই-আড়াই ঘণ্টার নদীপথ পেরিয়ে টুঙ্গিপাড়া গ্রামে পৌঁছানো যেতো।

কাজেই সেখানে কাগজ পৌঁছাত অনিয়মিতভাবে। তখন কাগজ বা পত্রিকা পড়া কাকে বলে তা শিখতে পারিনি। তবে একখানা কাগজ আসতো আমাদের বাড়িতে। তা পড়ায় বড়দের যে প্রচণ্ড আগ্রহ তা দেখতাম।

ঢাকায় আমরা আসি ১৯৫৪ সালে। তখন রাজনৈতিক অনেক চড়াই-উৎড়াই চলছে। আব্বাকে তো আমরা পেতামই না। তিনি প্রদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। আবার মন্ত্রিত্বও পেলেন। তিনি এত ব্যস্ত থাকতেন যে গভীর রাতে ফিরতেন। আমরা তখন ঘুমিয়ে পড়তাম। সকালে উঠে আমি আর কামাল স্কুলে চলে যেতাম। মাঝেমধ্যে যখন দুপুরে খেতে আসতেন, তখন আব্বার দেখা পেতাম। ওই সময়টুকুই আমাদের কাছে ভীষণ মূল্যবান ছিল। আব্বার আদর-ভালবাসা অল্প সময়ের জন্য পেলেও আমাদের জন্য ছিল তা অনেক পাওয়া।

বাংলার মানুষের জন্য তিনি নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন। তার জীবনের সবটুকু সময়ই যেন বাংলার দুঃখী মানুষের জন্য নিবেদিত ছিল। এর পরই কারাগারে বন্দি তিনি। বাইরে থাকলে মানুষের ভিড়ে আমরা খুব কমই আব্বাকে কাছে পেতাম। আর কারাগারে যখন বন্দি থাকতেন তখন ১৫ দিনে মাত্র এক ঘণ্টার জন্য দেখা পেতাম। এইতো ছিল আমাদের জীবন!

আমার মা আমাদের সব দুঃখ ভুলিয়ে দিতেন তার স্নেহ ভালবাসা দিয়ে। আর আমার দাদা-দাদি ও চাচা শেখ আবু নাসের– আমাদের সব আবদার তারা মেটাতেন। যা প্রয়োজন তিনিই এনে দিতেন। আর আব্বার ফুফাতো ভাই– খোকা কাকা– সব সময় আমাদের সাথে থাকতেন। আমাদের স্কুলে নেয়া, আব্বার বিরুদ্ধে পাকিস্তানি সরকার যে মামলা দিত তার জন্য আইনজীবীদের বাড়ি যাওয়া– সবই মা’র সাথে সাথে থেকে খোকা কাকা সহযোগিতা করতেন।

তবে আমার মা পড়াশেখা করতে পছন্দ করতেন। আমার দাদা বাড়িতে নানা ধরনের পত্রিকা রাখতেন। আব্বার লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে দাদার পত্রিকা কেনা ও পড়ার কথা উল্লেখ আছে। তখন থেকেই আব্বার পত্রিকা পড়ার অভ্যাস। আর আমরা তার কাছ থেকেই পত্রিকা পড়তে শিখেছি।

পত্রিকার সঙ্গে আব্বার একটা আত্মিক যোগসূত্র ছিল। আব্বা যখন কলকাতায় পড়ালেখা করছিলেন, তখনই একটা পত্রিকা প্রকাশের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। জনাব হাশেম এ পত্রিকার তত্ত্বাবধান করতেন এবং তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করতেন। পত্রিকাটির প্রচারের কাজে আব্বা যুক্ত ছিলেন। ‘মিল্লাত’ ও ‘ইত্তেহাদ’ নামে ২টি পত্রিকাও প্রকাশিত হয়েছিল। সেগুলোর সঙ্গেও আব্বা জড়িত ছিলেন। ১৯৫৭ সালে ‘নতুন দিন’ নামে আরেকটি পত্রিকার সঙ্গে আব্বা সম্পৃক্ত হন। কবি লুৎফর রহমান জুলফিকার ছিলেন এর সম্পাদক।

পাকিস্তান সৃষ্টির পর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর আর্থিক সহায়তায় ‘ইত্তেফাক’ পত্রিকা প্রকাশিত হয়। তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া এ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। এ পত্রিকার সঙ্গেও আব্বা সংযুক্ত ছিলেন এবং কাজ করেছেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর আব্বা ১৯৫৭ সালে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। সংগঠনকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার জন্য তিনি মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়ে সংগঠনের কাজে মনোনিবেশ করেন। ১৯৫৮ সালে মার্শাল ল জারি করে আইয়ুব খান। আব্বা গ্রেফতার হন। ১৯৬০ সালের ১৭ ডিসেম্বর তিনি মুক্তি পান।

মুক্তি পেয়ে তিনি আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি শুরু করেন। কারণ, এ সময় তার রাজনীতি করার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। এমনকি ঢাকার বাইরে যেতে গেলেও থানায় খবর দিয়ে যেতে হতো, গোয়েন্দা সংস্থাকে জানিয়ে যেতে হতো। তবে আমাদের জন্য সে সময়টা আব্বাকে কাছে পাওয়ার এক বিরল সুযোগ এনে দেয়। খুব ভোরে উঠে আব্বার সাথে প্রাতঃভ্রমণে বের হতাম। আমরা তখন সেগুনবাগিচার একটি বাড়িতে থাকতাম। রমনা পার্ক তখন তৈরি হচ্ছে। ৭৬ নম্বর সেগুনবাগিচার সেই বাসা থেকে হেঁটে পার্কে যেতাম। সেখানে একটা ছোট চিড়িয়াখানা ছিল। কয়েকটা হরিণ, ময়ূর পাখিসহ কিছু জীবজন্তু ছিল তাতে। বাসায় ফিরে এসে আব্বা চা ও খবরের কাগজ নিয়ে বসতেন। মা ও আব্বা মিলে কাগজ পড়তেন। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন।

ইত্তেফাক পত্রিকার ‘কচিকাঁচার আসর’ নামে ছোটদের একটা অংশ প্রতি সপ্তাহে বের হতো। সেখানে জালাল আহমেদ নামে একজন ‘জাপানের চিঠি’ বলে একটা লেখা লিখতেন। ধাঁধাঁর আসর ছিল। আমি ধাঁধাঁর আসরে মাঝেমধ্যে ধাঁধাঁর জবাব দিতাম। কখনও কখনও মিলাতেও পারতাম। পত্রিকাগুলোতে তখন সাহিত্যের পাতা থাকতো। বারান্দায় বসে চা ও কাগজ পড়া প্রতিদিনের কাজ ছিল। আমার মা খুব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে কাগজ পড়তেন। দুপুরে খাবার খেয়ে মা পত্রিকা ও ডাকবাক্সের চিঠিপত্র নিয়ে বসতেন। আমাদের বাসায় নিয়মিত ‘বেগম’ পত্রিকা রাখা হতো। ন্যাশনাল ‘জিওগ্রাফি’, ‘লাইফ’ এবং ‘রিডার্স ডাইজেস্ট’– কোনোটা সাপ্তাহিক, কোনোটা মাসিক আবার কোনোটা বা ত্রৈমাসিক– এই পত্রিকাগুলো রাখা হতো। ‘সমকাল’ সাহিত্য পত্রিকাও বাসায় রাখা হতো। মা খুব পছন্দ করতেন। ‘বেগম’ ও ‘সমকাল’– এ দুটোর লেখা মায়ের খুব পছন্দ ছিল।

সে সময়ে সাপ্তাহিক ‘বাংলার বাণী’ নামে একটা পত্রিকা প্রকাশ করা শুরু করলেন আব্বা। সেগুনবাগিচায় একটা জায়গা নিয়ে সেখানে একটা ট্রেড মেশিন বসানো হলো। যেখান থেকে ‘বাংলার বাণী’ প্রকাশিত হতো। মণি ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় পড়তেন। তাকেই কাগজের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। ১৯৬২ সালে আব্বা আবার গ্রেফতার হন। আমরা তখন ধানমন্ডির বাড়িতে চলে এসেছি। কারাগারে আব্বা যখন বন্দি থাকতেন, বাইরের খবর পাওয়ার একমাত্র উপায় থাকতো খবরের কাগজ। কিন্তু যে পত্রিকা দেয়া হতো সেগুলো সেন্সর করে দেয়া হতো।

বন্দি থাকাবস্থায় পত্রিকা পড়ার যে আগ্রহ তা আপনারা যদি আমার আব্বার লেখা ‘কারাগারের রোজনামচা’ পড়েন তখনই বুঝতে পারবেন। একজন বন্দির জীবনে, আর যদি সে হয় রাজবন্দি, তার জন্য পত্রিকা কত গুরুত্বপূর্ণ– তাতে প্রকাশ পেয়েছে। যদিও বাইরের খবরাখবর পেতে আব্বার খুব বেশি বেগ পেতে হতো না, কারণ জেলের ভেতরে যারা কাজ করতেন বা অন্য বন্দিরা থাকতেন, তাদের কাছ থেকেই অনায়াসে তিনি খবরগুলো পেতেন।

আমার মা যখন সাক্ষাৎ করতে যেতেন, তখন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তিনি আব্বাকে অবহিত করতেন। আর আব্বা যেসব দিক-নির্দেশনা দিতেন, সেগুলো তিনি দলের নেতাকর্মীদের কাছে পৌঁছে দিতেন। বিশেষ করে ছয় দফা দেয়ার পর যে আন্দোলনটা গড়ে ওঠে, তার সবটুকু কৃতিত্বই আমার মায়ের। তার ছিল প্রখর স্মরণশক্তি।

বন্দি থাকাবস্থায় পত্রিকা যে কত বড় সহায়ক সাথী তা আমি নিজেও জানি। ২০০৭-০৮ সময়ে যখন বন্দি ছিলাম আমি নিজের টাকায় ৪টি পত্রিকা কিনতাম। তবে নিজের পছন্দমত কাগজ নেয়া যেতো না। সরকার ৪টা পত্রিকার নাম দিয়েছিল, তাই নিতাম। কিছু খবর তো পাওয়া যেতো।

তিন

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ঘাতকদের নির্মম বুলেটে আমার আব্বা, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নির্মমভাবে নিহত হন। সেই সাথে আমার মা, তিন ভাইসহ পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে হত্যা করা হয়।

আমি ও আমার ছোট বোন শেখ রেহানা বিদেশে ছিলাম। সব হারিয়ে রিক্ত-নিঃস্ব হয়ে রিফিউজি হিসেবে যখন পরাশ্রয়ে জীবনযাপন করি, তখনও পত্রিকা জোগাড় করেছি এবং নিয়মিত পত্রিকা পড়েছি।

১৯৮০ সালে দিল্লি থেকে লন্ডন গিয়েছিলাম। রেহানার সাথে ছিলাম বেশকিছু দিন। তখন যে পাড়ায় আমরা থাকতাম, ওই পাড়ার ৮-১০ জন ছেলেমেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দিতাম। ছুটি হলে সকলকে নিয়ে আবার ঘরে পৌঁছে দিতাম। বাচ্চাপ্রতি এক পাউন্ড করে মজুরি পেতাম। ওই টাকা থেকে সর্বপ্রথম যে খরচটা আমি প্রতিদিন করতাম তা হলো, কর্নারশপ থেকে একটা পত্রিকা কেনা। বাচ্চাদের স্কুলে পৌঁছে দিয়ে ঘরে ফেরার সময় পত্রিকা, রুটি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে বাসায় ফিরতাম। তখন একটা পত্রিকা হাতে না নিলে মনে হতো সমস্ত দিনটাই যেন ‘পানসে’ হয়ে গেছে।

সব সময়ই আব্বা ও মায়ের কথা চিন্তা করি। তারা দেশ ও দেশের মানুষের কথা ভাবতে শিখিয়েছেন। মানুষের প্রতি কর্তব্যবোধ জাগ্রত করেছেন। সাধাসিধে জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে উন্নততর সুচিন্তা করতে শিখিয়েছেন। মানবপ্রেম ও দায়িত্ববোধ সম্পর্কে সচেতন করেছেন। সে আদর্শ নিয়ে বড় হয়েছিলাম বলেই আজ দেশসেবার মত কঠিন দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হচ্ছি। প্রতিদিনের রাষ্ট্র পরিচালনায় মানব কল্যাণকে প্রাধান্য দিয়ে পরিকল্পনা নিতে পারছি এবং তা বাস্তবায়ন করছি। যার সুফল বাংলাদেশের মানুষ ভোগ করছে।

সমালোচনা, আলোচনা রাজনৈতিক জীবনে থাকবেই। কিন্তু সততা-নিষ্ঠা নিয়ে কাজ করলে, নিজের আত্মবিশ্বাস থেকে সিদ্ধান্ত নিলে, সে কাজের শুভ ফলটা মানুষের কাছেই পৌঁছাবেই।

গণমাধ্যম সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারে। আমি সরকার গঠন করার পর সব সরকারি পত্রিকা ব্যক্তি খাতে ছেড়ে দিই। যদিও সরকারিকরণের বিরুদ্ধে যারা ছিলেন এবং সরকারিকরণ নিয়ে যারা খুবই সমালোচনা করতেন, তারাই আবার যখন বেসরকারিকরণ করলাম, তখন তারা আমার বিরুদ্ধে সমালোচনা করতেন। আন্দোলন, অনশনও হয়েছে।

আমি মাঝেমধ্যে চিন্তা করি, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে যে কয়টা পত্রিকা ছিল তা সরকারিকরণ করে সব সাংবাদিকের চাকরি সরকারিভাবে দেয়া হলো, বেতনও সরকারিভাবে পেতে শুরু করলেন তারা, আবার তারাই সকল সুযোগ-সুবিধা নিয়েও আব্বার বিরুদ্ধে সমালোচনা করা শুরু করলেন। কেন?

আবার আমি যখন সব ব্যক্তি মালিকানায় ছেড়ে দিলাম, সরকারি পত্রিকা তখন কেন বেসরকারি করছি তা নিয়ে সমালোচনা, আন্দোলন, অনশন সবই হলো। কেন? এর উত্তর কেউ দেবেন না, আমি জানি।

১৯৯৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে তখন বাংলাদেশে হাতে গোনা কয়েকটা পত্রিকা ছিল। সেগুলোরও নিয়ন্ত্রণ হত বিশেষ জায়গা থেকে। সরকারি মালিকানায় রেডিও, টেলিভিশন। বেসরকারি খাতে কোনো টেলিভিশন, রেডিও চ্যানেল ছিল না।

আমি উদ্যোগ নিয়ে বেসরকারি খাত উন্মুক্ত করে দিলাম। এক্ষেত্রে আমার দুটি লক্ষ্য ছিল– একটা হলো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, আরেকটা হলো আমাদের সংস্কৃতির বিকাশ– বর্তমান যুগের সাথে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর সংস্কৃতি-শিল্পের সম্মিলন ঘটানো। যাতে আধুনিকতা বিকশিত হওয়ার সুযোগ পায়, তৃণমূলের মানুষ এর সুফল ভোগ করতে পারে।

২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করেছিলাম। ডিজিটাল ডিভাইস আমাদের কর্মজীবনে বিশেষ অবদান রেখে যাচ্ছে। বিশেষ করে করোনাভাইরাসের মোকাবিলা করতে সহায়তা করছে। সময়োচিত পদক্ষেপ নিয়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখার সুযোগ পাচ্ছি। ১৯৯৬ সালেই মোবাইল ফোন বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দিয়েছি। আজ সকলের হাতে মোবাইল ফোন।

বাংলাদেশে সিনেমা শিল্পের শুরু হয়েছিল আব্বার হাত ধরে। এ শিল্পকে আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন করে বাংলাদেশের মানুষের চিত্তবিনোদনের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। আবার সার্বিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনেও ভূমিকা রাখতে পারে এ শিল্প।

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের কারণে আমরা এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে দিনযাপন করছি। আমি আশাবাদী এ কালোমেঘ শিগগিরই কেটে যাবে, উদয় হবে আলোকোজ্জ্বল নতুন সূর্যের। সকলের জীবন সফল হোক, সুন্দর হোক। সবাই সুস্থ থাকুন, এই কামনা করি। লেখক : বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সৌদি ফেরত এক-তৃতীয়াংশের যাওয়া হবে না : বায়রা

Posted By admin On In দেশ-বিদেশের সংবাদ,ব্রেকিং নিউজ,শীর্ষ সংবাদ | No Comments

নিউজ ডেক্স : মহামারীর মধ্যে সৌদি আরব থেকে ফেরত আসা এক-তৃতীয়াংশের বেশি বাংলাদেশি কর্মীকে নানা জটিলতার কারণে ফেরত পাঠানো সম্ভবপর হবে না বলে মনে করছে জনশক্তি রপ্তানিকারকরা।

জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিস (বায়রা) সংসদীয় কমিটিকে একথা জানিয়েছে। সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বায়রার পক্ষে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরা হয়।

বায়রা বলছে, সৌদি দূতাবাস বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকার পরেও আলাদা করে নতুনভাবে পুলিশ ভেরিফিকেশন চেয়েছে। তাছাড়া ভিসা প্রক্রিয়া স্থগিত রেখেছে। সেই প্রক্রিয়া সময় সাধ্য। ওই ভেরিফিকেশন আসতে আসতে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এতে করে নিয়োগকর্তারা বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগ দিতে অনীহা প্রকাশ করছে।

ঢাকাস্থ সৌদি দূতাবাসের সার্কুলার অনুযায়ী, একজন কর্মীকে সব কার্যক্রম পুনরায় করে পাঠানো ব্যয়বহুল ও সময় সাপেক্ষ উল্লেখ করে বায়রার পক্ষ থেকে বলা হয়, এ প্রক্রিয়ায় প্রায় ৩০ থেকে ৪০ ভাগ কর্মীর ক্ষেত্রে তাদের কর্মস্থলে যোগদান করা প্রায় অসম্ভব। এ প্রক্রিয়াকে সহজ করার জন্য জোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাতে সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে বায়রা। খবর বিডিনিউজের।

সিলিন্ডারে নেই প্রস্তুত কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ

Posted By admin On In দেশ-বিদেশের সংবাদ,ব্রেকিং নিউজ,শীর্ষ সংবাদ | No Comments

নিউজ ডেক্স : নিয়ম নীতির কোনো তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন ধরনের গাড়ি সিএনজিতে রূপান্তর এবং তাতে নিম্নমানের সিলিন্ডার ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। ফলে এসব গাড়ি যেন চলমান বোমায় পরিণত হচ্ছে। একই সাথে বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত এলপিজি সিলিন্ডারগুলো বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করছে। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর বা চৌদ্দ হাজার বার রিফিল করার পর সিএনজি সিলিন্ডার এবং ১০ বছর পর এলপিজি সিলিন্ডার রি-টেস্ট করানোর বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা যেন কেউ মানছে না।

এছাড়া সিলিন্ডারে নেই প্রস্তুত কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ। যানবাহন মালিকদের অনীহা, এলএনজি ব্যবসায়ীদের দুর্নীতি এবং সর্বোপরি প্রশাসনের উদাসীনতায় গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে পরিস্থিতি ক্রমে নাজুক হয়ে উঠছে। একটা সিলিন্ডার প্রস্তুতের পর অনন্তকাল ধরে ব্যবহারের প্রচলিত ধারাই এই খাতের বড় হুমকি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

বিস্ফোরক অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস এবং গ্যাস সেক্টরের বিভিন্ন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা গেছে, দেশে গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। রান্নাঘর থেকে শুরু করে যানবাহন, অফিস থেকে দোকানপাট পর্যন্ত সর্বত্রই ব্যবহৃত হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। এক সময় বিদেশ থেকে সিলিন্ডার আমদানি করে ব্যবহার করা হলেও বর্তমানে দেশে প্রচুর সিলিন্ডার তৈরি হচ্ছে। মানসম্পন্ন সিলিন্ডারের পাশাপাশি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের পাইপের জোড়াতালি দিয়ে সিলিন্ডার তৈরি করার মতো ঘটনাও ঘটছে। বিস্ফোরক অধিদপ্তরের প্রজ্ঞাপন ও সিএনজি বিধিমালা-২০০৫ অনুসারে সিএনজি চালিত যানবাহনের সিলিন্ডার স্থাপনের পাঁচ বছর অন্তর বা চৌদ্দ হাজার বার রিফিল করার পর পুনঃপরীক্ষার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু দেশের লাখ লাখ সিলিন্ডারের খুবই স্বল্প সংখ্যকের রি-টেস্ট করা হয়। সিলিন্ডার রি-টেস্ট সনদ দেয়া না হলে গাড়ির ফিটনেস আটকে দেয়ার একটি নিয়ম করেছিল বিআরটিএ। পরবর্তীতে ওই নিয়ম শিথিল হয়ে যায়। এতে দেশের কয়েক লাখ যানবাহনে অন্তত ১৫ বছরের বেশি পুরনো গ্যাস সিলিন্ডার থাকলেও তা নিয়ে কারো যেন কোনো মাথাব্যথাই পরিলক্ষিত হচ্ছে না। পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই ব্যবহৃত হচ্ছে এসব সিলিন্ডার।

অপরদিকে বাসাবাড়িতে প্রাকৃতিক গ্যাসের সংযোগ না দেয়া ও গ্রামগঞ্জে লাকড়ির ব্যবহার কমে যাওয়াসহ নানা কারণে দেশে লিকুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ব্যবহার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। গৃহস্থালীর পাশাপাশি হোটেল রেস্তোরাঁয়ও চলছে এলপিজি। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন এলপিজি লিমিটেড বছরে অন্তত ১৪ লাখ সিলিন্ডার বাজারজাত করে। এটি দেশের এলপি গ্যাসের চাহিদার ৩ শতাংশেরও কম। এছাড়া অনুমোদিত অন্তত ২৫টি প্রতিষ্ঠান কয়েক কোটি এলপিজি সিলিন্ডার রিফিল করে বাজারজাত করে। বিদেশ থেকে এলপিজি সিলিন্ডার আমদানির পাশাপাশি দেশে সিলিন্ডার প্রস্তুতকারী ১৬টি প্রতিষ্ঠান প্রতি মাসে অন্তত তিন লাখ সিলিন্ডার উৎপাদন এবং বাজারজাত করে। বছরে ৩৬ লাখ এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদিত হচ্ছে দেশেই। এর বাইরে চীন, ভারত, থাইল্যান্ড এবং তুরস্ক থেকেও প্রচুর এলপিজি সিলিন্ডার আমদানি করা হয়।

বিস্ফোরক অধিদপ্তরের পদস্থ একজন কর্মকর্তা বলেন, এই পরিসংখ্যান থেকেই অনুমান করা যায়, দেশে গ্যাসের ব্যবহার কী পরিমাণ বেড়েছে। বেড়েছে সিলিন্ডারের ব্যাবহার। বাজারে সাড়ে ১২ কেজি, ৩০ কেজি ও ৩৫ কেজিসহ বিভিন্ন মাপের সিলিন্ডার রয়েছে। এসব সিলিন্ডার ঘরে ঘরে গ্যাসভর্তি হয়ে গেলেও এগুলোর অধিকাংশরই কোনো মেয়াদকাল নেই। যতদিন পর্যন্ত সিলিন্ডারগুলো নষ্ট হয়ে না যায় বা কোনো অঘটন না ঘটে ততদিন সেগুলো রিফিল হতে থাকে।

চট্টগ্রামে গ্যাস সিলিন্ডার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিন হাবিব বিডি লিমিটেডের পরিচালক, সাবেক চেম্বার পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ গতকাল জানান, উৎপাদিত সিলিন্ডারে কোনো মেয়াদকাল থাকে না। তবে সচরাচর একটি সিলিন্ডার ১০/১২ বছর ব্যবহার করা যায়। উৎপাদনের তারিখ না থাকলে ১০/১২ বছর নির্ধারণ কিভাবে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে সবাইতো একইভাবে করছেন।

এই ব্যাপারে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রাণাধীন এলপিজি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার ফজলুর রহমান গতকাল বলেন, আমাদের সিলিন্ডারগুলোর নিয়মিত রি-টেস্ট করা হয়। একবার রি-টেস্টে উত্তীর্ণ হলে ওই সিলিন্ডার ১০ বছর ব্যবহার করা যায়। আমরা আমাদের প্রতিটি সিলিন্ডার নিয়মিত রি-টেস্ট করি। তারিখ লিখে রাখি। ১০ বছর পর আবারো রি-টেস্ট করি। তবে কোনো সিলিন্ডার গাড়ি থেকে পড়ে বা অন্য কোনো কারনে বাঁকা হলে কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হলে ওই সিলিন্ডার ১০ বছর আগে রি-টেস্ট করা হয়। রি-টেস্টে উত্তীর্ণ হতে না পারা সিলিন্ডারগুলো আমরা সাথে সাথে চার টুকরো করে কেটে স্ক্র্যাপ বানিয়ে ফেলি। এলপিজি লিমিটেডের সিলিন্ডারে কোনো সমস্যা হওয়ার আশংকা নেই বলে তিনি দাবি করেন।

ইউরোপ থেকে বেশ কিছু সিলিন্ডার আমদানির কথা উল্লেখ করে ফজলুর রহমান বলেন, সিলিন্ডারের মেয়াদকাল সচরাচর ১৫ বছর। কিন্তু ইউরোপীয় ওসব সিলিন্ডার ২৫ বছরেরও বেশি সময়কাল ধরে টিকে আছে। সিলিন্ডারের কোয়ালিটির উপর এর মেয়াদ নির্ভর করে জানিয়ে ইঞ্জিনিয়ার ফজলুর রহমান বলেন, রি-টেস্টে সমস্যা না হলেও সিলিন্ডার ব্যবহার করা যায়।

বিস্ফোরক অধিদপ্তরের পদস্থ একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করাার শর্তে বলেন, এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার অনেক ঝুঁকিপূর্ণ একটি বস্তু। কিন্তু এর চেয়ে অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে সিএনজি সিলিন্ডার। এলপি গ্যাস থেকে এলএনজি গ্যাসের প্রেসার ২০ গুণ বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এলপি গ্যাসের চেয়ে সিএনজি অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এজন্য প্রতি পাঁচ বছর অন্তর সিএনজি সিলিন্ডার রি-টেস্টের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অথচ দেশে আইনটি বাস্তবায়িত হচ্ছে না। আবার এলপি গ্যাস সারাক্ষণই আগুনের খুব কাছাকাছিতে থাকে। এতে এই সিলিন্ডারকেও একেবারে অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই।

প্রচণ্ড ঝুঁকি নিয়ে এসব সিলিন্ডার এক বাসা থেকে বাসায় ঘুরছে। তিনি তথ্য প্রকাশ করে বলেন, গত ১০ বছরে দেশে সংঘটিত নয় শতাধিক ছোট বড় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্তত দেড় হাজার মানুষ হতাহত হয়েছেন। এই ধরনের দুর্ঘটনা ঠেকাতে নিম্নমানের সিলিন্ডার প্রস্তুত ও ব্যবহার বন্ধের পাশাপাশি রি-টেস্টের বিষয়ে জোর দিতে হবে। সিলিন্ডারের গায়ে প্রস্তুত ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ লিখে রাখতে হবে। তাহলেই বড় ধরনের ঝুঁকি থেকে বাঁচা যাবে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোহাম্মদ আলাউদ্দীন গ্যাস ব্যবহারে সতর্কতার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, অসচেতন থাকায় বেশি সিলিন্ডার দুর্ঘটনা ঘটছে। সিলিন্ডারের সঙ্গে থাকা নিম্নমানের হোস পাইপ, রেগুলেটরসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। এজন্য সিলিন্ডার ঠিক থাকলেও অনেক সময় অগ্নিকাণ্ড কিংবা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে।

গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ সংক্রান্ত ঘটনা দিন দিন আরো আশংকাজনক পর্যায়ে চলে যাচ্ছে জানিয়ে ফায়ার সার্ভিসের অপর এক কর্মকর্তা বলেন, যতই দিন যাচ্ছে সিলিন্ডারের আয়ু ততই বাড়ছে। একই সাথে বাড়ছে দুর্ঘটনার শংকাও। দেশে ক্রস ফিলিংয়ের মাধ্যমে এলপিজির ব্যবসা চলছে। আবার বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান মান বজায় রেখে সিলিন্ডার তৈরি করছে না। বিস্ফোরক অধিদপ্তরের মনিটরিং করতে পারছে না। গ্যাসের অনিরাপদ ব্যবহার ক্রমেই উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেন ফায়ার সার্ভিসের ওই কর্মকর্তা। তিনি সিলিন্ডার প্রস্তুতের তারিখ ও মেয়াদকাল উল্লেখ এবং নির্দিষ্ট সময়ে রি-টেস্ট করানোর উপর জোরদার করা গেলে এ ধরনের দুর্ঘটনা কমবে বলে উল্লেখ করেন। দৈনিক আজাদী

স্ত্রীর লাথিতে স্বামীর মৃত্যু

Posted By admin On In দেশ-বিদেশের সংবাদ,ব্রেকিং নিউজ,শীর্ষ সংবাদ | No Comments

নিউজ ডেক্স : সীতাকুণ্ড থানাধীন জঙ্গল সলিমপুর এলাকায় স্পর্শকাতর স্থানে স্ত্রীর লাথিতে স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ অভিযুক্ত নারীকে আটক করেছে। শুক্রবার (৯ অক্টোবর) সকালে জঙ্গল সলিমপুরের ৫ নম্বর সমাজ এলাকায় এ ঘটনায় মারা যান আবুল হাশেম নামের ওই ব্যক্তি।

খবর পেয়ে পুলিশ নিহত আবুল হাশেমের স্ত্রী লাইলীকে আটক করে। লাইলী বর্তমানে সীতাকুণ্ড থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। সীতাকুণ্ড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন চন্দ্র বণিক বলেন, শুক্রবার সকালে জঙ্গল সলিমপুরের ৫ নম্বর সমাজ এলাকায় স্বামী আবুল হাশেমের স্পর্শকাতর স্থানে স্ত্রী আঘাত করলে তার মৃত্যু হয়। ঘটনার পরপরই লাইলীকে আটক করা হয়েছে। তিনি আমাদের হেফাজতে রয়েছেন।

সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফিরোজ হোসেন মোল্লা বলেন, আটক লাইলী দাবি করেছে-বুধবার রাতে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। ঝগড়ার একপর্যায়ে আবুল হাশেমকে লাথি মারেন। পরে চিকিৎসা নেন আবুল হাশেম। শুক্রবার সকালে তিনি মারা যান।

ওসি বলেন, আসলে কি কারণে আবুল হাশেমকে মারধর করেছে এবং আর কেউ জড়িত কি-না তা তদন্তে জানা যাবে। বাংলানিউজ