Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | মোটরসাইকেলে বাড়ছে দুর্ঘটনা, প্রাণহানি

মোটরসাইকেলে বাড়ছে দুর্ঘটনা, প্রাণহানি

ফাইল ছবি

নিউজ ডেক্স : সহজে বহন, পারিবারিক প্রয়োজন এবং ফ্যাশনে মোটর সাইকেলের বিকল্প নেই। মোটরসাইকেল গতির বাহন। মূলত যুবকরা এই বাহন ব্যবহার করে থাকে। তবে এই বাহনে ভারসাম্যহীনতার সমস্যা আছে, ফলে মোটরসাইকেল যেমন বেড়েছে তার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দুর্ঘটনা। ইদানিং সড়ক ও মহাসড়কে বিশৃঙ্খলা ও প্রাণহানির বড় কারণ বেপরোয়া মোটরসাইকেল। বিশেষ করে অভিভাবকগণ অতি আবেগী হয়ে কিশোর এবং উঠতি তরুণদের হাতে তুলে দিচ্ছেন মোটর সাইকেলের চাবি। অধিকাংশই কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়া রাস্তায় নামছে মোটরসাইকেল নিয়ে। বয়সটা এমন যে গতি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ কথা নয়।

বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার শ্যামল কুমার নাথ বলেন, সচেতনতার বিকল্প নেই। আবেগের বশে মোটরসাইকেল সন্তানের হাতে তুলে দেওয়ার সময় ভাবছি না যে, হয়তো এর ফলে সন্তানকে চিরতরে হারাতেও হতে পারে। তিনি বলেন, রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ অধিকাংশ মামলা করছে মোটর সাইকেলের বিরুদ্ধে। কারও লাইসেন্স নেই, কখনো আবার চালক কিংবা আরোহীর মাথায় হেলমেট নেই, কারও ডকুমেন্ট ফেল। কিন্তু আইন প্রয়োগ করে দুর্ঘটনা কমানো যাবে না। যদি আমরা সচেতন না হই।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক ও দুুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) তথ্য মতে, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় শীর্ষে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। গবেষণা পত্রের ভাষ্যমতে, দেশের মোটরসাইকেল দুুর্ঘটনার ৭৪ শতাংশই মফস্বলে ঘটে। এর বড় কারণ হলো সেখানে ট্রাফিক তদারকি কম। এছাড়া মফস্বলের যাত্রীরা মহাসড়কে বেশি যাতায়াত করেন বলেও দুুর্ঘটনা বেশি ঘটে। মফস্বলের ৭৪ শতাংশ সড়ক দুুর্ঘটনার ৬৯ শতাংশই মহাসড়কে ঘটে। মফস্বলের বিপরীতে নগর-মহানগরে মোটরসাইকেল দুুর্ঘটনার পরিমাণ ৩১ শতাংশ। দ্রুত গতির সঙ্গে সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ চালনার কারণে মোটরসাইকেলে দুর্ঘটনার পরিমাণ বৃদ্ধি করছে। এভাবে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হয়ে কত মা-বাবার বুক যে খালি হচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই। অনেক সন্তান আহত হয়ে পঙ্গু জীবনযাপন করছে। শখের এই যান মূলত মৃত্যুফাঁদ হিসেবে দেখা দিয়েছে। রাস্তায় বের হলেই দেখা যায় বেপরোয়াভাবে চলছে মোটরসাইকেল। এভাবেই ঘটছে বহু দুর্ঘটনা। যেখানে যতটুকু গতি থাকা দরকার তা থাকছে না। মোটরসাইকেল নিয়ে একধরনের হিরোইজম ইগোতে পেয়ে বসেছে এ প্রজন্মকে।

সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা সংস্থা রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বুধবার (১৭ নভেম্বর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে দেশে ১৬৫৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ১৭৫৮ জন। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন ১১২৩ জন। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় অল্প বয়সীরা বেশি মারা যাচ্ছেন উল্লেখ করে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বছর এ দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৪ থেকে ৪৫ বছর বয়সী মানুষের সংখ্যা ১ হাজার ৩২৭ (৭৫ শতাংশ)। এর মধ্যে ৬৬৯ জন শিক্ষার্থী ও ৭২ জন শিক্ষক। মোটরসাইকেলের ধাক্কায় মারা গেছেন ১৫১ পথচারী। গত বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেশে ১০১১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১০২৬ জন নিহত হয়। এই হিসেবে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে দুর্ঘটনা বেড়েছে ৬৩.৬০ শতাংশ এবং প্রাণহানি ঘটেছে ৭১.৩৫ শতাংশ। এই প্রতিবেদনে আরেকটি তথ্যে বলা হয় এসব দুর্ঘটনার পেছনে ৬৭২টিতে মোটরসাইকেল চালক এককভাবে দায়ী।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন জানায়, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার কারণগুলোর মধ্যে কিশোর-যুবকদের বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল চালানো, অতি উচ্চগতির মোটরসাইকেল কেনা এবং ব্যবহারে সহজলভ্যতা ও বাধাহীন সংস্কৃতি, ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির শিথিলতা, দ্রুত গতির যানবাহনের বেপরোয়া গতি উল্লেখযোগ্য।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, দেশের সর্বত্র কিশোর-যুবকদের হাতে বেশি গতির মোটরসাইকেলের ছড়াছড়ি। এগুলো ক্রয় ও ব্যবহারে নিয়মকানুন মানার বালাই নেই; নেই মনিটরিং ব্যবস্থা। তিনি আরও বলেন, দেশে বর্তমানে প্রায় ৩৫ লাখ মোটরসাইকেল চলছে। মানসম্মত গণপরিবহনের অভাব ও যানজটের কারণে মোটরসাইকেলের ব্যবহার অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। মোটরসাইকেল চার চাকার যানবাহনের তুলনায় ৩০ গুণ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এ জন্য গণপরিবহন ব্যবস্থা উন্নত ও সহজলভ্য করে মোটরসাইকেলের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে হবে। -দৈনিক আজাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!