Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | নাছির রাষ্ট্রপতির চেয়েও বড় হয়ে গেছেন : মহিউদ্দিন চৌধুরী

নাছির রাষ্ট্রপতির চেয়েও বড় হয়ে গেছেন : মহিউদ্দিন চৌধুরী

U11ntitled-4-440x525

নিউজ ডেক্স : নিজ দলের সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র আ জ ম নাছিরকে উদ্দেশ্য করে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, নাছির সাহেবকে মনোনয়ন দিয়েছেন আমাদের নেত্রী। আমরা তাকে মেয়র বানিয়ে দিয়েছি। কিন্তু তিনি যেসব কথাবার্তা বলছেন, মনে হয় তিনি (মেয়র) রাষ্ট্রপতির চেয়েও অনেক বড় হয়ে গেছেন।

গতকাল পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়ার আগে তাঁর বাসভবনে মেয়র নাছিরকে উদ্দেশ করে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ক্ষমতায় যখন আছেন দায়িত্ব পালন করুন। আমার বয়স হয়ে গেছে, তাই মনে করছেন আমার বেইল নাই। শারীরিকভবে অক্ষম হয়ে যাচ্ছি ভাবছেন। সাবধান হয়ে যান। আমি আসার পরে সব অপকর্মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবো, প্রতিহত করবো।

এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান, প্রচার সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক, নগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ, সদস্য এস এম সাঈদ সুমন ও শেখ নাছির উদ্দিন প্রমুখ।

মহিউদ্দিন চৌধুরী জলাবদ্ধতায় আক্রান্ত মানুষ ক্ষমা করবে না উল্লেখ করে নিজেও রাস্তায় নামবেন বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, লজ্জা লাগে, এই শহরের মানুষ, কর্মকর্তা, স্কুলেরছাত্রছাত্রীদের সাম্পানে করে চলাচল করতে হচ্ছে। কি যে এক অবস্থা। এক হাঁটু পানি, বুক পর্যন্ত পানি। ছেলেমেয়েদের পায়ে ঘা হয়ে গেছে। রাস্তাঘাটের বেহাল দশা। এটা কি শহর? যারা আছেন, শুধু বড় বড় কথা বলেন। আমি নীরব আছি। আমি নীরব আছি বলে মানুষ কিন্তু ক্ষমা করবে না।

মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, উন্নয়নের জন্য নেত্রী প্রচুর পরিমাণে টাকা প্রদান করছেন। কিন্তু সেই টাকা দিয়ে উন্নয়নের নামে অপকর্ম হচ্ছে। জলাবদ্ধতা নিয়ে কাজের চেয়েও কথা বেশি হচ্ছে। সারা দুনিয়া আজ হাতের মুঠোয় এসে গেছে। সামান্য জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য এতবেশি লম্ফজম্ফ কেন? যদি আগ্রহ থাকে, এক সপ্তাহের মধ্যে জলাবদ্ধতা দূর করা যায়।

তিনি বলেন, চুরি করতে, টাকা বানাতে যদি এক সপ্তাহে পারেন, তাহলে এটা পারবেন না কেন? কর্ণফুলী ড্রেজিং ছাড়া জলাবদ্ধতা দূর হবে না বলেও তিনি অভিমত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ড্রেজিং ছাড়া হবে না। একবার তো ড্রেজিংয়ের নামে লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করে চলে গেছে। একারণে নদী ভরাট হয়ে গেছে। বিভিন্ন জায়গায় ব্লক হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ড্রেজিং মেশিন আমদানি করেন। ড্রেজিং করলেই পানি চলে যাবে। নালা-নর্দমায় আবর্জনা যেগুলো থাকবে সেগুলো সব পরিষ্কার হয়ে চলে যাবে। কাজটা কঠিন নয় উল্লেখ করে বলেন, বাঁধ দেবেন, সেই করবেন, এই করবেন, কত কথা বলছেন, কিন্তু মানুষের কষ্ট সীমার বাইরে। ড্রেজিংটা হোক, আমি বন্দরের কাছে চিঠি লিখেছি। ড্রেজিং মেশিন যেন অল্প সময়ের মধ্যে আনা যায়। ড্রেজিং করলেই আমরা সমস্যা থেকে মুক্তি পাব। এক মুহূর্তে জাহাজ আনতে পারছেন ভাঙাচোরা, সব আনতে পারেন, এটা আনতে পারেন না কেন?

মেয়র নাছিরকে উদ্দেশ্য করে মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, কথা, কথা, কথা শুধু। মাইক পেলে কথা বলবেন। গাড়িতে বসে মোবাইলে কথা বলবেন। সারাক্ষণ উনি কাজে ব্যস্ত থাকেন। কি কাজ করেছেন। রাস্তায় এক হাঁটু পানি, এক বুক পানি। উন্নয়ন তো নাই। আর কিছু করতে না পারলেও কিছু রিলিফ তো আনা যায়। এটা সংগ্রহ করেন। কিন্তু এটাও পারছেন না। আমিও তো মেয়র ছিলাম। চাইলেই তো আপনি আনতে পারেন। করছেন না কেন? টাকাপয়সা তো অনেক আয় করছেন।

এসময় তিনি সাংবাদিকদের সমালোচনা করে বলেন, সাংবাদিকরা বিভিন্ন কারণে লিখতে পারছেন না। তাদের মামলা দেয়া হয়। ৫৭ ধারায় মামলা দেয়া হচ্ছে। এই ভয়ে লিখতে পারছে না। বিজ্ঞাপনের বিষয় আছে। একটু বিজ্ঞাপনের আশায় অনেকে সত্য কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছেন। সাংবাদিকরাও এদেশের সন্তান, এই মাটির সন্তান উল্লেখ করে লেখনীর মাধ্যমে সত্য তুলে ধরার আহবান জানিয়ে বলেন, জনগণ এখন চুপ আছে। আপনার লেখনী শুরু করুন। দেখবেন মানুষও বলতে শুরু করেছে।

উল্লেখ্য, গত ৮ এপ্রিল পারিবারিক অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিয়ে সাংবাদিকদের মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেছিলেন, ১০ তারিখ লালদীঘিতে আসুন, সেখানে গরম কথা বলব। মহিউদ্দিন চৌধুরী লালদীঘির মাঠে সমাবেশে মেয়র নাছিরকে ‘অযোগ্য ও অথর্ব’ উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ আনেন। ১১ এপ্রিল মহিউদ্দিন চৌধুরী সংবাদ সম্মেলন করে পাঁচ হাজার লাঠি প্রস্তুত রাখার কথাও বলেছিলেন। ১৭ এপ্রিল আবার শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে হাত তুলে দুজন ঐক্যবদ্ধ রাজনীতির অঙ্গীকার করেন।

পাঁচ মাস ধরে চুপ থাকা প্রসঙ্গে মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমি বেশ কিছুদিন ধরে কথাবার্তা বন্ধ করে রেখেছি। কথা বললেই নারাজ, আমি নারাজ না, যারা শুনবেন তারা নারাজ। চট্টগ্রামে বিশেষ করে অথর্ব, অযোগ্য, অদক্ষ, অপরিপক্ক ব্যক্তিরাই নেতৃত্বে আছেন। তারাই নারাজ হন।

প্রায় তিন দশক ধরে চট্টগ্রামের রাজনীতিতে পরস্পরবিরোধী অবস্থানে আছেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দিন। ২০১০ সালে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মহিউদ্দিন হারলে রাজনীতির নানা সমীকরণে দুজন একমঞ্চে উঠেন। কিন্তু কথা-বার্তায় এবং আচরণে দুই নেতার দূরত্ব লক্ষ্য করা যায়। ২০১৩ সালে কেন্দ্রঘোষিত কমিটিতে সভাপতি মহিউদ্দিনের সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক করা হয় নাছিরকে। বিরোধ জোরালো হয় ২০১৫ সালে। মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন দুজনই। মনোনয়ন পান নাছির। নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে গণমাধ্যমের কাছে নাছির সম্পর্কে মহিউদ্দিন মূল্যায়ন করেছিলেন ‘অপাত্রে ঘি ঢেলেছি।’

– দৈনিক পূর্বকোণ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!