ব্রেকিং নিউজ
Home | উন্মুক্ত পাতা | উল্টো থেকে দেখা

উল্টো থেকে দেখা

মোহাম্মদ আবদুল মালেক : ‘কুকুর হইতে সাবধান’। বাড়ির গেইটে বড় করে লেখা। আচ্ছা ভাই বলুন তো-বাড়িতে মানুষ থাকে না কুকুর থাকে? কয়েক দিন আগে এমন সাইনবোর্ড লাগানো এক বাড়িতে গিয়েছিলাম। যথারীতি দারোয়ান জিজ্ঞেস করল, কোথায় যাবেন? বললাম আপনাদের কুত্তা সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে। দারোয়ান আমার উত্তরে কী মনে করেছিল জানি না। এখন প্রায় বাড়িতে দেখি, ড্রইং রুমের বাইরে জুতা রেখে ভিতরে যেতে হবে। এতো সেই কুত্তা ঢোকারই অবস্থা। কেন ভাই? আপনার ঘর পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব কি আপনার মেহমানের! এটা কোন্‌ ধরনের ভদ্রতা। আর যারা ফিতাওয়ালা জুতা পরে এসেছেন-চিন্তা করুন তাদের কথা। বেচারা কী গুনাহ না করেছিল- জুতা পরে এসেছিল।

আমাকে আমার স্বাস্থ্যগত কারণে বিশ্বের বহু বড় বড় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে বা বিভিন্ন সময় রোগী দেখতে গিয়েছি সেখানে। কিন্তু কোথাও জুতা খুলে ঢুকতে হয়নি। কারণ তারা মনে করে, হাসপাতাল পরিষ্কার রাখা, ডিজ-ইনফেকটেড বা জীবাণুমুক্ত রাখা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব, ভিজিটারদের নয়।

আমার মনে হয় যারা তাদের ড্রইংরুমকে এত পবিত্র করে রাখতে চান, তাদের উচিত জুতাওয়ালাদের হাতে একটা ঝাড়ু ধরিয়ে দেয়া, যাতে তারা যাওয়ার সময় ঘরটা ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করে দিয়ে যেতে পারে। বিদেশে দেখেছি- কোনো কোনো দর্শনীয় স্থাপনায় গেলে- যেখানে দিনে হাজার হাজার লোক যায়, সেখানে বড় বড় জুতার খোলস রাখা আছে- তার ভিতর জুতা ঢুকিয়ে পুরো জায়গা ঘুরে বেড়ানো যায়। আপনি জুতা খোলার বিড়ম্বনা থেকে বাঁচলেন-আর স্থাপনাটাও জুতার ময়লা থেকে বাঁচল। হ্যাঁ, জুতা খুলতে আমার কোনো দ্বিমত নেই- সেটা যদি কোনো ধর্মীয় স্থান হয়। সেটা যে কোনো ধর্মের হতে পারে।

আবার আপনি কোনো বহুতল ভবনে আত্মীয় বা বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। ঢোকার পথেই বিরাট সাইনবোর্ড- ‘অতিথির গাড়ি বাইরে রাখুন’। যদি আপনার সাথে ড্রাইভার না থাকে- যদি সেই সময় বৃষ্টি হয়, তাহলে গাড়িটি বাইরে রেখে ভিজে ভিজে ফ্ল্যাটে ঢুকলেন-বা বৃষ্টিতে ভেজার ভয়ে গাড়ি নিয়ে বাড়ি চলে আসবেন। সেটা আপনার ইচ্ছা।

বাড়িতে বসে টেলিভিশনের কোনো চ্যানেলে প্রোগ্রাম দেখছেন। নিচে টেলঅপে একটি লাইন বার বার ঘুরে ফিরে আসছে (যা বিরক্তিকর) : ‘এই চ্যানেল দেখা না গেলে নিকটস্থ ক্যাবল অপারেটরের সঙ্গে যোগাযোগ করুন বা মোবাইলে যোগাযোগ করুন-নং-০১—– ’। সেই নম্বর ঠিকমত লিখতে গেলে আপনাকে কমছে কম ১০ মিনিট সময় নষ্ট করতে হবে। কিন্তু কথাটা সেখানে নয়। কথা হলো চ্যানেলই যখন দেখা যাচ্ছে না-তখন আপনি বুঝবেন কী করে যে ওই বিশিষ্ট চ্যানেলটি দেখতে পাচ্ছেন না।

আমার মনে হয় টিভি চ্যানেল মালিকদের যে সংগঠন আছে তারা একটা মতৈক্যে পৌঁছাতে পারেন যে- চ্যানেলগুলোর নাম দিয়ে আমাদের এই চ্যানেল চালু আছে- এর মধ্যে কোনোটা আপনার টেলিভিশনে দেখা না গেলে-ক্যাবলওয়ালার সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

কয়েকদিন আগে BRTC ল্যান্ডফোনের নাম্বার বদল করেছে। অর্থাৎ ১১ সংখ্যায় নিয়ে গেছে- সময়োপযোগী করার জন্য। লোকে ল্যান্ডফোন ব্যবহার করত পয়সা সাশ্রয় করার জন্যে। আগের নম্বরগুলো ছিল ছয় অংকের, এখন হয়েছে ১১ অংকের। অর্থাৎ মনে রাখা খুবই অসুবিধা। যদিও প্রথম দিকে (শূন্য) ও ছয়টা ২ (২২ ২২ ২২) আছে। যাদের পরের নম্বরগুলো পরিবর্তন হয়েছে, তা নতুন করে মনে করা সম্ভব নাও হতে পারে। আর Cell (সেল ফোনের একটি সুবিধা হলো আপনি আপনার প্রয়োজনীয় নম্বরগুলো সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন। যা আপনি ল্যান্ড ফোনে পারেন না। অনেকের মতো আমারও মনে হয় BRTC ইচ্ছা করেই এই কাজ করেছে যাতে গ্রাহক ল্যান্ডফোন ব্যবহার না করে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। অর্থাৎ মোবাইল ফোনে আরও বাড়তি আয়ের ব্যবস্থা করে দেয়া হলো। আসলে সরকারের আয় হোক না হোক-কারও কিছু আসে যায় না। বেতন মাস শেষে ঠিকই পাওয়া যাবে।

লেখক : সম্পাদক, দৈনিক আজাদী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!