ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | উদ্বিগ্ন জামায়াত

উদ্বিগ্ন জামায়াত

1522490640

নিউজ ডেক্স : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষের প্রতীকে অংশ নেয়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীদের প্রার্থিতার বৈধতার প্রশ্নে উদ্বেগে আছে দলটি। জামায়াতের ২৫ জনের প্রার্থিতার বৈধতা নিয়ে এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) তিন কার্যদিবসের মধ্যে আবেদন নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এমতাবস্থায় জামায়াতের ২৫ জনের প্রার্থিতা থাকছে কি না তা জানা যাবে আগামী সোমবারের মধ্যেই।

জামায়াতের আইনজীবীরা বলছেন, জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ নয়, শুধু নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে, যেটি কি না উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। যে কারণে, আইনগতভাবে প্রার্থিতা বাতিল করার কোনো সুযোগ নেই। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই জামায়াতে ইসলামী মনোনয়ন ফরম উত্তোলন ও জমা দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনই যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্তভাবে প্রার্থিতা দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন দেশের সংবিধান ও আরপিও যদি যথাযথভাবে অনুসরণ করে, তাহলে প্রার্থিতা বাতিলের সুযোগ নেই। তবে সরকার যদি চায়, জামায়াত নির্বাচনে না থাক। সরকার ও আওয়ামী লীগের চাপে জামায়াত প্রার্থীদের প্রার্থিতা বাতিল করা হলে, সেটা হবে আইনের লঙ্ঘন।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে রিটকারীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

হাইকোর্টের ওই আদেশ বাস্তবায়নে একটি চিঠি বৃহস্পতিবার ইসিতে পৌঁছেছে। এ ব্যাপারে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘আমরা হাইকোর্টের চিঠিটা আজকে (বৃহস্পতিবার) পেয়েছি এবং আইন শাখায় বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বলেছি। যাতে কমিশনে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়। আগামী সোমবারের মধ্যে জামায়াতের প্রার্থীদের নিয়ে হাইকোর্টের রুলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

যোগাযোগ করা হলে বৃহস্পতিবার জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সাংগঠনিক সেক্রেটারি আইনজীবী মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, সংবিধান কিংবা নির্বাচন পরিচালনার বিধানমতে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীদের প্রার্থিতা বাতিল করার কোনো সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, ‘প্রার্থিতাও চূড়ান্ত হয়েছে, প্রতীকও বরাদ্দ হয়েছে। নির্বাচনী ট্রেন স্টেশন ছেড়ে গেছে। এখন যদি কেউ আবেদন করে নির্বাচনী ট্রেন থামাতে চান, সেটা তো সম্ভব না। আর তা আইনগত বৈধও হবে না।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রশিবিরের সাবেক সেক্রেটারি ও বর্তমানে জামায়াতের অন্যতম এক আইনজীবী বলেন, ‘নিবন্ধন না থাকায় জোটগতভাবে জামায়াত ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। নির্বাচনের যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই মনোনয়ন ফরম উত্তোলন, জমা ও যাচাই-বাছাই শেষে প্রার্থিতাও চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। কারও আপত্তি থাকলে প্রক্রিয়া চলাকালীনই নির্বাচন কমিশনে আবেদন করতে পারতেন। সে জন্য তো তিন কার্যদিবস সময়ও ছিল। তখন তো কেউ আবেদন করেননি। এখন আর কোনো সুযোগ নেই। বাতিলের প্রশ্নই ওঠে না। বরং এই রিট রাজনৈতিকভাবে চাপ তৈরির অপকৌশল মাত্র।’

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুল হালিম বলেন, জোটগতভাবে (মহাজোট কিংবা ২০ দলীয় জোট অথবা ঐক্যফ্রন্ট) অনেক দলই নির্বাচন করছে। সেখানে অধিকাংশ দলের জোটের প্রতীক নির্ধারিত হয়েছে নৌকা ও ধানের শীষ। সেখানে যদি সমস্যা না হয় তবে জামায়াতেরও সমস্যা হবে না।

‘তবে রিটকারী ও আওয়ামী লীগ এটা বলতে পারে যে জামায়াত যুদ্ধাপরাধী দল। কিন্তু জামায়াতের যারা ধানের শীষের প্রতীকে নির্বাচন করছেন তাদের সবাই ক্লিন ইমেজের। কারও বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগই নাই। নিবন্ধন বাতিলের বিষয়টিও উচ্চ আদালতে বিচারাধীন’,- বলেন তিনি।

প্রার্থিতা বাতিল হওয়ার বিষয়ে জামায়াত উদ্বিগ্ন কি না জানতে চাইলে আব্দুল হালিম বলেন, ‘আমরা তো অবশ্যই উদ্বিগ্ন। আইন অনুযায়ী ও নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমেই বৈধতা পেয়েছেন আমাদের প্রার্থীরা। এখন নির্বাচনের ডামাডোল চলছে। পোস্টার ছাপিয়েছি, মাইকিং চলছে, প্রচার-প্রচারণা চলছে পুরোদমে। এমতাবস্থায় এমন একটি বিষয় খুবই উদ্বিগ্নের ও অস্বস্তিকর। আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন আমাদের প্রার্থীদের প্রার্থিতা বাতিল করতে পারবেন না।

তবে এ ব্যাপারে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, যেহেতু রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়ে গেছে। বাতিল হবার পরে সেই দলের সদস্য অন্য দলের প্রতীক নিয়ে আবার নির্বাচনে অবতীর্ণ হবেন এবং পরোক্ষভাবে দলীয় প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করা অনৈতিক। এটা নিবন্ধন বাতিলের রায়ের পরিপন্থী।

তিনি বলেন, ‘তাদেরতো স্বতন্ত্রভাবে নয়, নমিনেশন দেয়া হয়েছে জামায়াতের সিট বা প্রার্থী হিসেবে। যেই জামায়াতের কোনো নিবন্ধনই নেই, সেখানে তারা প্রার্থী হয় কী করে? সুতরাং হাইকোর্ট বিভাগ সঠিকভাবেই রুলটা ইস্যু করে নির্বাচন কমিশনকে একটা নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তা তিন কার্যদিবসের মধ্যে সুরাহা করা হয়।

উদাহরণ দিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমার যদি আইনজীবী হিসেবে সনদটা বাতিল হয় তাহলে অন্যের কোর্টটা পড়ে কি প্র্যাকটিস করতে পারব?

জামায়াতে ইসলামীকে ধানের শীষ প্রতীক দিয়ে কি তাহলে আদালত অবমাননা করেছে বিএনপি? জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপি যেভাবে জামায়াতকে মনোনয়ন দিয়েছে, এটা জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হওয়ার যে রায় হয়েছে, সেটার পরিপন্থী। কারণ, জামায়াতকে জামায়াতে ইসলামী হিসেবেই জোটে কোটা দিয়েছে বিএনপি।

উল্লেখ্য, জামায়াতের প্রার্থীরা হলেন- ঢাকা-১৫ আসনে ডা. শফিকুর রহমান, সিরাজগঞ্জ-৪ রফিকুল ইসলাম খান, খুলনা-৬ আবুল কালাম আজাদ, কুমিল্লা-১১ সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, খুলনা-৫ মিয়া গোলাম পারোয়ার, পাবনা-৩ আনোয়ারুল ইসলাম, পাবনা-৫ ইকবাল হোসাইন, যশোর-২ আবু সাঈদ মো. শাহাদাত হোসাইন, ঠাকুরগাঁও-২ আবদুল হাকিম, দিনাজপুর-১ আবু হানিফ, দিনাজপুর-৬ আনোয়ারুল ইসলাম, নীলফামারী-৩ আজিজুল ইসলাম, গাইবান্ধা-১ মাজেদুর রহমান, সাতক্ষীরা-২ মুহাদ্দিস আবদুল খালেক, সাতক্ষীরা-৪ গাজী নজরুল ইসলাম, পিরোজপুর-১ শামীম সাঈদী, নীলফামারী-২ মো. মনিরুজ্জামান, ঝিনাইদহ-৩ মতিয়ার রহমান, বাগেরহাট-৩ ওয়াদুল শেখ, বাগেরহাট-৪ আব্দুল আলীম ও চট্টগ্রাম-১৫ আসনে শামসুল ইসলাম।

জামায়াত নেতা হামিদুর রহমান আযাদ কক্সাবাজার-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। সেখানে বিএনপি অন্য কোনো প্রার্থী দেয়নি। এ ছাড়া জামায়াতের নূরুল ইসলাম বুলবুল চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩, জহিরুল ইসলাম চট্টগ্রাম-১৬ এবং ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান পাবনা-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।

গত ১৭ ডিসেম্বর তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিবসহ কয়েকজন নেতা জামায়াতের ২৫ জনের প্রার্থিতার বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টে রিট করেন। একইসঙ্গে ২৫ জনের প্রার্থিতা বাতিল বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে ওইদিন নির্বাচন কমিশনের কাছে চিঠি দেন তারা।

জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিলের বিষয়টি উল্লেখ করে রিটকারীদের আবেদনে বলা হয়েছে, ‘ইদানীং বিভিন্ন পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ২৫ জন প্রার্থী তাদের রাজনৈতিক পরিচয় গোপন রেখে অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতীক বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন কমিশনে নমিনেশন পেপার জমা দেন, যা অত্র ইলেকশন কমিশন কর্তৃক গৃহীত হয় এবং তাদের বৈধ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার সুযোগ প্রদান করা হয়েছে, যা আইনগত বৈধ নয়।’

পরে জামায়াতে ইসলামীর ২৫ নেতার প্রার্থিতা বাতিল সংক্রান্ত নির্বাচন কমিশনে করা আবেদন তিন কার্যদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রতি এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

আদালতের আদেশের পর রিটকারীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর জাগো নিউজকে বলেন, ১৩ ডিসেম্বর সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয় রিটকারীদের পক্ষ থেকে। নোটিশ অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় রিট করা হয়। রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (১৮ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুলসহ ইসির প্রতি আদেশ দেন।

তানিয়া আমীর বলেন, ২০০৮ সালে তরিকত ফেডারেশনের দায়ের করা একটি রিট মামলার রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন (২০১৩ সালের ১ আগস্ট) অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছিলেন। এর বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী আপিল করলেও তারা এর শুনানি করেননি। প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে অন্য দলের প্রতীক ও স্বতন্ত্র হয়ে তারা নির্বাচন করছেন। আইনের প্রতিষ্ঠিত রীতি যা প্রত্যক্ষভাবে করা যায় না, তা পরোক্ষভাবেও করা যায় না। এসব যুক্তিতে গত ১৭ ডিসেম্বর রিটটি করা হলে পরের দিন আদালত রুলসহ ইসির প্রতি ওই নির্দেশ দেন।

তিনি বলেন, নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতে ইসলামীর ২৫ জন নেতার নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, রুলে নিবন্ধনহীন দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ সংবিধানের সঙ্গে কেন সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। এখন আমরা অপেক্ষায় আছি আগামী তিন কার্যদিবসে কী পদক্ষেপ নেন নির্বাচন কমিশন।

সূত্র : জাগোনিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!