ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | আরো বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে কালুরঘাট সেতু

আরো বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে কালুরঘাট সেতু

নিউজ ডেক্স : আরো বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে কালুরঘাট সেতু। পচে নষ্ট হয়ে গেছে সেতুর দুপাশের কাঠের নিরাপত্তা বেষ্টনীর পাটাতন। আবার অনেক জায়গায় কাঠের পাটাতন ও লোহার বেষ্টনীর অস্তিত্বও নেই। ফলে পাটাতনের ফাঁক দিয়ে দেখা যায় নিচের কর্ণফুলী নদীর প্রবাহ। সেতুর এমন দৃশ্যে শঙ্কিত হয়ে উঠেছে যাত্রীরা। এছাড়া উভয় পাশের ডেক এবং লোহার বেড়াও নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সেতু পারাপার এখন অনেকটা অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন শত শত যানবাহন সেতু দিয়ে যাতায়াত করছে।

গতকাল সরেজমিনে সেতুর শহরের অংশ থেকে পায়ে হেঁটে অপর পাড়ে (বোয়ালখালী অংশ পর্যন্ত) গিয়ে বেশ কিছু বিপজ্জনক চিত্র চোখে পরে। দুপাশের অনেকাংশে কাঠের নিরাপত্তা বেষ্টনী পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় একটু অসচেতনভাবে হাঁটলেই পা পিছলে নিশ্চিত নদীতে পড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এছাড়া লোহার পাতে মরিচা ধরেছে। এর মধ্যেই চলাচল করছে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। যেসব স্থানে কাঠের পাটাতন নেই সেখানে কিছু কাঠের বিট মেরে দেয়া হয়েছে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, কালুরঘাট সেতুটি ২০০১ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছিল। এরপরও জোড়াতালি দিয়ে কোনোরকমে চলাচল করছে যানবাহন। ফলে দিন দিন বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে সেতুটি। সেতু দিয়ে ১০ টনের ওপরে ভারী যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। অবশ্য প্রকৌশলীরা বলছেন, সংস্কারের পর সেতুটি ১৫ টন পর্যন্ত ভার নিতে পারবে। সেতুর ওপর দিয়ে প্রতিদিন চট্টগ্রাম-পটিয়া ও দোহাজারী রুটে দুটি ট্রেন চলাচল করে। এছাড়া দোহাজারী বিদ্যুৎ কেন্দ্রে তেলবাহী ট্রেনও যায় প্রতি সপ্তাহে।

ব্রিটিশ আমলে নির্মিত শত বছরের পুরোনো চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন ও গাড়ি দুটিই চলে, তবে ঝুঁকি নিয়ে। সংস্কার না হওয়ায় পিচ উঠে প্রায় পৌনে এক কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুতে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের। এই গর্তের ফাঁক দিয়ে নদীর জল দেখা যাচ্ছে।

কালুরঘাট সেতু দিয়ে প্রতিদিন ছোট-বড় শত শত গাড়ি চলে। একমুখী এই সেতু পার হওয়া নিয়ে এমনিতেই বিড়ম্বনা পোহাতে হয় যাত্রীদের। সেতুর দুই প্রান্তে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজটের। ভোগান্তি সয়েই প্রতিদিন বোয়ালখালী আর পটিয়া উপজেলার একাংশের লোকজনকে চট্টগ্রাম নগরে যাতায়াত করতে হয়। কেবল বোয়ালখালী উপজেলার প্রায় তিন লাখ মানুষের চট্টগ্রাম নগরে যাতায়াতের একমাত্র পথ এই কালুরঘাট সেতু।

বোয়ালখালী এলাকার বাসিন্দা সাবেক ছাত্রনেতা ও তরুণ উদ্যোক্তা শফিউল আজম জিপু জানান, নিয়মিত ও যথাযথভাবে সংস্কার না করায় সেতুটি বর্তমানে ভঙ্গুর অবস্থায় আছে। এখন সবচেয়ে বিপজ্জনক হচ্ছে সেতুর দুপাশের নিরাপত্তা বেষ্টনীর কাঠের পাটাতন পচে নষ্ট হয়ে গেছে। বিশাল অংশ জুড়ে কাঠের নিরাপত্তা পাটাতন না থাকায় পায়ে হেঁটে সেতু পারাপারের সময় নদীতে পারে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য অবিলম্বে সেতুটি সংস্কার করা দরকার।

বোয়ালখালীর পৌর এলাকার বাসিন্দা ও সংগঠক শাহরিয়ার মুনীর জিসান জানান, প্রতিদিন দুই মিনিটের সেতু পার হতে লেগে যায় ২০-৩০ মিনিট। এর মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দ। এসব খানাখন্দ সংস্কারে কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যথা নেই।

গতকাল সেতু পারাপারের সময় অসংখ্য পথচারী নতুন সেতু নির্মাণে বিলম্ব হওয়ায় তাদের ক্ষোভের কথা জানান। তাদের মতে শত দুর্ভোগ আর যন্ত্রণার নাম কালুরঘাট সেতু। এই দুর্ভোগ যেন শেষ হতেই চায় না। দিন-মাস নয়, বছরের পর বছর কালুরঘাট সেতুর দুর্ভোগ বোয়ালখালীসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের একাংশের জনগণের নিত্য সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতিতে বছরের পর বছর পার হয়ে যাচ্ছে এই অঞ্চলের মানুষের। সেই প্রতিশ্রুতি আর পূরণ হয় না। নতুন সেতুর স্বপ্ন, স্বপ্নই থেকে যাচ্ছে বছরের পর বছর।

এদিকে নতুন করে সেতু নির্মাণ কার্যক্রম বিলম্বিত হওয়ায় কালুরঘাট বিদ্যমান (পুরনো) সেতু মেরামতের জন্য বুয়েটের দ্বারস্থ হয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। বিদ্যমান পুরনো সেতুটি মেরামতের জন্য বুয়েটকে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পাওয়ার জন্য আবেদন করলে তাতে বুয়েট সাড়া দেয়। বুয়েটের ৩ সদসের বিশেষজ্ঞ টিমের সদস্যরা কালুরঘাট সেতু সরেজমিনে পরির্দশন করেছেন। তারা সেতুর শহর অঞ্চল থেকে পায়ে হেটে বোয়ালখালী অংশ পর্যন্ত প্রত্যক্ষ করেন। এরপর নৌকা করে নদী থেকে সেতুর নিচের অংশও প্রত্যক্ষ করেন।

সরেজমিন পরির্দশন শেষে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল তাদের প্রস্তাব (প্রতিবেদন) রেলওয়ের কাছে দিয়েছেন বলে জানান রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সেতু) আহসান জাবির। তিনি জানান, আমরা তাদের (বুয়েটের) প্রস্তাবনা পেয়েছি। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুটি সংস্কারের জন্য ১৯টি প্রস্তাবনা দিয়েছেন। এখন বুয়েটের এই প্রস্তাব রেল কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবেন। তারপর উনাদের (বুয়েটের) প্রস্তাবের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন। কর্তৃপক্ষ (রেল মন্ত্রণালয়) প্রস্তাবটি অনুমোদন দিলে পরার্মশক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হবে বুয়েটকে। আর বুয়েট সেতুটি মেরামতে যেভাবে প্রস্তাব দিবেন-সেই অনুযায়ী কাজ করা হবে। -আজাদী প্রতিবেদন 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!