ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | আজ শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা

আজ শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা

bodda

নিউজ ডেক্স : আজ শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা। বৈশাখ মাসে এ পূর্ণিমা হয় বলে বাঙালি বৌদ্ধ-ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি বৈশাখী পূর্ণিমা নামে পরিচিত। এ পূর্ণিমা বৌদ্ধদের কাছে পবিত্রতম ও প্রধান ধর্মীয় উৎসব। বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এই পুণ্যোৎসব উদযাপিত হয়। এ পবিত্র তিথিতে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধের জীবনে তিনটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ঘটে। ঘটনাসমূহ হলো- তাঁর জন্মগ্রহণ, বোধি জ্ঞান লাভ এবং মহাপরিনির্বাণ অর্জন। এ মহতি দিনে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীগণ শারীরিক ও মানসিক শুদ্ধতা নিয়ে শুচিবস্ত্র পরিধান করেন এবং বৌদ্ধ বিহারে যান। এ সময় তারা বিহারে বহু প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করেন, বুদ্ধের বেদি নানা ফুল দিয়ে সাজান, বুদ্ধ পূজা করেন এবং নিমগ্ন হয়ে পঞ্চশীল, অষ্টশীল, সূত্রপাঠ,

সূত্রশ্রবণ ও সমবেদ প্রার্থনা করেন। বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে এ দেশের সকল শ্রেণি পেশার মানুষ সরকারি ছুটি উপভোগ করেন।

বৌদ্ধ ধর্মমতে, আজ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৬২৩ অব্দের এ তিথিতে নেপালে অবসি’ত কপিলাবস’র লুম্বিনী কাননে শুদ্ধোধন রাজার ঘর আলো করে মহামায়ার গর্ভ হতে সিদ্ধার্থের জন্ম হয়। রাজকুমার সিদ্ধার্থ মানুষের দুঃখে বেদনার্ত হয়ে মুক্তির উপায় খুঁজতে রাজপ্রাসাদ ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন সত্যের সন্ধানে। বিভিন্নস’ানে পরিভ্রমণের পর অবশেষে তৎকালীন উপমহাদেশের বিহার রাজ্যের গয়ার ফলগু নদীর তীরে অশ্বত্থ গাছের নিচে বজ্রাসনে বসে কঠোর সাধনার দ্বারা খ্রিস্টপূর্ব ৫৮৮ অব্দে বুদ্ধত্ব লাভ করেন। বুদ্ধত্ব লাভের পরবর্তীতে তিনি দীর্ঘ ৪৫ বছর সদ্ধর্ম প্রচার করে খ্রিস্টপূর্ব ৫৪৩ অব্দে কুশিনারা মল্লদের শালবনে মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। তাঁর জন্ম, বোধিলাভ ও মহাপ্রয়াণ বৈশাখ মাসের এ তিথিতে হয়েছিল বলে এ দিনটি বৌদ্ধদের কাছে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।

যথাযথ ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা এ উৎসব পালন করেন। দেশের সব বিহারে সকালে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। বিহারে বিহারে আলোকসজ্জা, পবিত্র ত্রিপিটক থেকে পাঠ ও ধর্মীয় আলোচনা সভাসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সময়ে বৌদ্ধরা জগতের সব প্রাণীর সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে।

গৌতম বুদ্ধ বিশ্বের মানুষের দুঃখ-বেদনাকে নিজের দুঃখ হিসেবে হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেন। মানব জীবনের দুঃখ তার দৃষ্টিগোচর হলে তিনি সম্পদ, ঐশ্বর্য তথা সংসার জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েন। জন্ম, জরা, ব্যাধি ও মৃত্যু- এ চারটির কারণ উদঘাটন করে তিনি মানুষের শান্তি ও মুক্তির লক্ষ্যে নিমগ্ন হন। আবিষ্কার করেন চতুরার্য সত্য। এ চতুরার্য সত্য হলো- দুঃখ, দুঃখ সমুদয়, দুঃখ নিরোধ ও দুঃখ নিরোধ মার্গ। এ তত্ত্বের ভিত্তিতে বৌদ্ধ ধর্মী বিধি-বিধান আছে বলেই এ ধর্মকে কর্মবাদী ধর্ম বলা হয়ে থাকে। এতে বলা হয়েছে, প্রত্যেক মানুষ তার কাজ অনুসারে ফল পাবে। প্রকৃত কর্মসাধনার মধ্য দিয়ে প্রত্যেক মানুষের পক্ষে বুদ্ধত্ব অর্জন ও নির্বাণ লাভ সম্ভব। মহামতি বুদ্ধ মানুষকে মৈত্রী ভাবনায় ভাবিত হতে বলেছেন। পরের দুঃখে দুঃখী হয়ে, অপরের সুখে সুখী হয়ে উপেক্ষার মনোভাব নিয়ে জীবন-যাপনের উপদেশ দিয়েছেন। বিশ্বচরাচরে সকল সত্তা যেন সুখী হয়, এটাই ছিল বুদ্ধের ঐকান্তিক কামনা। বুদ্ধ তাঁর শিক্ষা ও আদর্শ বিস্তারের জন্য গড়ে তুলেছিলেন ‘ভিক্ষু সংঘ’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!