ব্রেকিং নিউজ
Home | উন্মুক্ত পাতা | আখেরী চাহার সোম্বার মুসলিম উম্মাহর জন্য মর্যাদাপূর্ণ ও শিক্ষানীয়

আখেরী চাহার সোম্বার মুসলিম উম্মাহর জন্য মর্যাদাপূর্ণ ও শিক্ষানীয়

IMG-20171016-WA0010
মোহাম্মদ ইমাদ উদ্দীন : মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর জীবনের প্রত্যেক দিন ও প্রত্যেক মূহুর্ত তাঁর উম্মতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং শিক্ষানীয়।  তার মধ্যে হিজরি সনের দ্বিতীয় মাসের নাম সফর মাস অন্যতম। এ মাসের শেষ বুধবারকে বলা হয় আখেরি চাহার সোম্বা। আক্ষরিক অর্থে শব্দটি তা-ই বুঝায়। আখেরি চাহার সোম্বা আরবি ও ফার্সি শব্দের সংমিশ্রণে গঠিত। আখেরি শব্দটি আরবি শব্দ। এর অর্থ শেষ। চাহার সোম্বা ফারসি শব্দ এর অর্থ বুধবার।
এশিয়া ইউরোপ সহ বিভিন্ন মুসলিম দেশে আরবী সফর মাসের শেষ বুধবারকে আখেরি চাহার শোম্বা হিসেবে স্মরণ করা হয়। রাসূল করীম (সা.) জীবনের শেষ দিকে কিছুদিন গুরুতর অসুস্থ ছিলেন।  এদিন তিনি রোগমুক্তি শেষে গোসল করেন এবং মসজিদে নববীতে ইমামতি করেন। এরপর তিনি আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। অনেকদিন পর তাকে সুস্থ্য অবস্থায় দেখে সাহাবিরা খুবই আনন্দিত হন। পরবর্তীতে এইদিনটি মুসলমানদের কাছে আনন্দের দিন হিসেবে পালিত হতে থাকে। আখেরি চাহার সোম্বার দিন দশেক পর রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ সোমবার তিনি ইন্তেকাল করেন। দিনটি নিয়ে মতভেদ রয়েছে। আল্লামা ছফিউর রহমান মোবারকপুরী রচিত ‘আর রাহীকুল মাখতূম’-এ উল্লেখ করা হয়েছে, আখেরি চাহার সোম্বা ছিলো রাসূল (সা.)-র ইন্তেকালের পাঁচদিন আগে। এখানে বলা হয়, এইদিন তাঁর অসুখ আরো বেড়ে যায়। তাঁর নির্দেশ মতে, সাত কূপের সাত মশক পানি দিয়ে তিনি গোসল করেন। এরপর কিছুটা সুস্থ্যবোধ করেন।  আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন আমার গৃহে প্রবেশ করলেন এবং তাঁর অসুস্থতা বৃদ্ধি পেল, তখন তিনি বললেন, তোমরা আমার উপরে ৭ মশক পানি ঢাল, যেন আমি আরামবোধ করে লোকদের নির্দেশনা দিতে পারি। তখন আমরা এভাবে তাঁর দেহে পানি ঢাললাম। এরপর তিনি মানুষদের নিকট বেরিয়ে গিয়ে তাদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করলেন এবং তাদেরকে খুৎবা প্রদান করলেন বা ওয়াজ করলেন।’ (সহীহ বুখারী ১/৮৩, ৪/১৬১৪, ৫/২১৬০)।রাহমাতুল্লিল আলামিন গ্রন্থে আছে, রাসূল (সা.) পাথরের জলাধারে বসে সাতটি কুয়ার সাত মশক পানি নিজের মাথায় ঢালিয়ে নেন। এটিই ছিল হুজুরের দুনিয়ার শেষ গোসল। অতঃপর তিনি সুস্থবোধ করলেন। তারপর তিনি মসজিদে নববীতে গেলেন। হযরত (সা.)-র শরীরের উন্নতি দেখে সাহাবীগণ অত্যন্ত আনন্দিত হলেন। অনেকদিন পর তিনি সে দিন শেষবারের মতো মসজিদে নববীতে ইমামতি করেন।  আনন্দে সাহাবীগণ নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী দান খয়রাত করতে থাকেন।  বর্ণিত আছে, হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) ৭ হাজার দিনার, হযরত ওমর ফারুক (রা.) ৫ হাজার দিনার, হযরত ওসমান (রা.) ১০ হাজার দিনার, হযরত আলী (রা.) ৩ হাজার দিনার এবং হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) ১০০ উট ও ১০০ ঘোড়া আল্লাহর রাস্তায় দান করেন।
সফর মাসের শেষ বুধবার অর্থাৎ আখেরী চাহার শম্বারের ফজীলত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দিনে সূর্যোদয়ের পূর্বে গোসল করা এবং সূর্যোদয়ের পর দুই রাকাআত নফল নামাজ আদায় করা উত্তম। “রাহাতুল কুলুব” ও “জাওয়াহেরে গায়েবী” কিতাবে বর্ণিত আছে, এই দিন সকালে গোসল করে দোহার সময় দুই রাকাআত নফল নামাজ আদায় করিবে।এই নামাজের প্রত্যেক রাকাতে সূরা ইখলাছ এগার বার পড়িবে। সালামের পর নিম্নোক্ত দরুদ শরীফ সত্তর বার পড়িবে  “আল্লাহুম্মা ছাল্লি আলা মুহাম্মাদিনিন্ নাবিয়্যিল্   উম্মিয়্যি ওয়া আলা আলিহী ওয়া আছহাবিহী ওয়া বারিক ওয়া ছাল্লিম”। অর্থাৎ- হে আল্লাহ! নবী করীম (সা:) এবং তাঁহার বংশধর ও সাহাবীগণের উপর রহমত, বরকত ও শান্তি নাযিল কর। তারপর নিম্নোক্ত দোয়াটি তিনবার পড়িবে, ” আল্লাহুম্মা ছার্রিফ্ আন্নী সূ-আ হাযাল্ ইয়াওমে ওয়া আ’ছিমনী মিন্ সূ-ইহী ওয়া নাজ্জিনী আম্মা আছাবা ফীহি মিন্ নাহুসাতিহী ওয়া কুরাবাতিহী বিফাদলেকা ইয়া দাফেয়াশ্ শুরূরে ওয়া ইয়া-মালেকান্ নুশুরে ইয়া আর্ হামার রা’হেমীন। ওয়া ছাল্লাল্লাহু আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলিহীল্ আমজা’দে ওয়া বা’রিক ওয়া ছাল্লিম”।
“জাওয়াহেরে গায়েবী” কিতাবে বর্ণিত আছে,সফর মাসের শেষ বুধবার অর্থাৎ আখেরী চাহার শম্বার দিন দোহার সময় আরও দুই রাকাত নফল নামাজ পড়িতে পারা যায়। এই নামাজের প্রত্যেক রাকাতে সূরা ইখলাছ তিনবার পড়িবে। নামাজের পর সূরা “আলাম্ নাশরাহ্” বিশবার, সূরা “ওয়াত্তীন” বিশবার, সূরা “ইযাজাআ নাছরুল্লাহ” বিশবার ও সূরা “ইখলাছ” বিশবার পড়িবে।
এই নামাজ পড়িলে আল্লাহ্ তাআলা ঐ নামাজীর দিলকে ধনী করিয়া দিবেন। একথা আনয়ারুল আউলিয়া কিতাবেও উল্লেখ আছে।এমন কি এইদিনে কিছু দোয়া কলা গাছের পাতায় লিখিয়ে একটি পরিষ্কার বদনার পানির মধ্যে অথবা কোনো জগ বা পাত্রের পানিতে ধুইয়া ঐ পানি গোসল করার পর এক কোমর পানিতে নামিয়া মাথার উপর ঢালা এবং সপ্ত সালাম লিখে তা পানিতে ধুয়ে পান করা  মুস্তাহাব।
জাওয়াহেরুল কানয্ ৫ম খন্ডে আছে, সফর মাসে শেষ বুধবারে সপ্ত সালাম লিখে তা পানিতে ধুয়ে পান করবে।
তাযকিরাতুল আওরাদ কিতাবে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি আখেরী চাহার সোম্বার প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাজের পর আয়াতে সাত সালাম পাঠ করবে নিজের শরীরে ফুঁক দেবে বা পানের উপর লিখে তা ধুয়ে পান করে, আল্লাহ তাআলা সব রকম বালা-মুসিবত ও রোগব্যাধি থেকে নিরাপদ রাখবেন।
আখেরী চাহার সোম্বার ব্যাপারে তেমন কোনো বাধ্যকতা না থাকলেও অস্বীকার করার সুযোগ নেই। এই দিন থেকে দান খায়রাতের একটি শিক্ষানীয় আছে। তাই উম্মতে মুহাম্মদীর আধ্যাত্মিক জীবনে আখেরি চাহার শোম্বার গুরুত্ব ও মহিমা অপরিসীম। আসুন এই দিনটাকে বেশী বাড়াবাড়ি না করে যথাযথ ভাবে মর্যাদা সহকারে নফল ইবাদত বন্দেকী এবং দান খায়রাত ও ত্যাগের শিক্ষা গ্রহণ করি।
লেখক: এমফিল,গবেষক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!