- Lohagaranews24 - http://lohagaranews24.com -

অযত্ন-অবহেলায় চকরিয়ার দুটি খাদ্য গুদাম

Untitled-8-1

নিউজ ডেক্স : দীর্ঘদিন ধরে অযত্ন–অবহেলায় পড়ে রয়েছে কক্সবাজারের চকরিয়ার উপকূলীয় ইউনিয়ন বদরখালীর দুটি খাদ্য গুদাম। অথচ এই দুটি খাদ্য গুদাম চালু করা গেলে চকরিয়ার উপকূলীয় সাতটি ইউনিয়ন ছাড়াও পার্শ্ববর্তী পেকুয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলার খাদ্য সরবরাহ নির্বিঘ্নে করা যেত। বিশেষ করে এই অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন সাধিত হওয়ায় এবং নৌ–পথও চালু থাকায় তার সুফল পাওয়া যেত বদরখালীতে পড়ে থাকা খাদ্য গুদাম দুটি থেকে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকার সারাদেশে নতুন করে খাদ্য গুদাম নির্মাণের কর্মসূচি হাতে নিয়ে অগ্রসর হলেও চকরিয়া উপজেলার উপকূলীয় ইউনিয়ন বদরখালীতে ১ হাজার টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন দুটি খাদ্য গুদাম রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে খাদ্য গুদাম দুটি এভাবে পড়ে থাকায় দিন দিন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। সামান্য অর্থ ব্যয়ে সংস্কার করা হলে গুদাম দুটি অনায়াসে ব্যবহার করা যাবে।

কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেদিকে নজর না দিয়ে বছরের পর বছর অযত্ন–অবহেলায় ফেলে রেখেছে গুদাম দুটি।

জানা গেছে, কক্সবাজার জেলা খাদ্য বিভাগ ১৯৬১ সালে প্রায় ২ একর জমি অধিগ্রহণ করে অবিভক্ত চকরিয়ার উপকূলীয় বদরখালীতে দুটি খাদ্য গুদাম নির্মাণ করে। খাদ্য গুদাম দুটি নির্মাণের সময় পরিকল্পনায় ছিল চকরিয়ার উপকূলীয় ইউনিয়নগুলো ছাড়াও পাশ্ববর্তী পেকুয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলার ইউনিয়ন সমূহে সরকারী কর্মসূিচর খাদ্য সরবারাহ নিশ্চিত করা। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্মিত এই খাদ্য গুদাম দুটি থেকে ওইসব স্থানে খাদ্য সরবরাহও হয়ে আসছিল।

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানায়, বদরখালীর খাদ্য গুদাম দুটি থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত খাদ্য সরবরাহ অব্যাহত ছিল। পরে খাদ্য গুদামে কোন ধরনের খাদ্যশস্য মজুদ না করে কিছু দিন সরকারিভাবে ক্রয়কৃত লবণ মজুদ রাখার পর খাদ্য গুদাম দুটির কপালে নেমে আসে অন্ধকার। মূলত এর পর থেকেই পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে গুদাম দুটি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চকরিয়া উপজেলা খাদ্য বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ইতিপূর্বে বদরখালীর খাদ্য গুদাম দুটি স্বচক্ষে দেখেছি। এ সময় গুদামের বিভিন্ন অংশ বেশ ভালই রয়েছে। মাত্র কয়েকলাখ টাকার বাজেটে গুদাম দুটি ভালভাবে সংস্কার করলে অন্তত ২০ বছর পর্যন্ত পুরোপুরি সচল রাখা যাবে গুদাম দুটি। কিন্তু উপজেলা ও জেলা খাদ্য বিভাগ থেকে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নজরে আনা হলেও কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।’

তিনি আরো বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার তাগাদা দেওয়া হলেও সেখান থেকে ফিরতি কোন নির্দেশনা বা ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় অযত্ন–অবহেলায় পড়ে রয়েছে গুদাম দুটি। তবে গুদাম দুটি রক্ষণা–বেক্ষণের জন্য সেখানে একাধিক কর্মচারীও নিয়োজিত রয়েছেন। তিনি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সরকারী বেতন–ভাতা তুলছেন এবং গুদাম দুটির পাশে থাকা সরকারী কোয়ার্টার ভাড়া দিয়ে অর্থ হাতাচ্ছেন প্রতিমাসে।’

বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খাইরুল বশর জানান, দীর্ঘদিন ধরে ভুতুড়ে পরিবেশে অযত্ন–অবহেলায় খাদ্য গুদাম দুটি পড়ে রয়েছে। কোন ধরণের সংষ্কার না করায় দিন দিন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে গুদাম দুটি। বিষয়টি খাদ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনেকবার বলা হয়েছে। কক্সবাজার জেলার খাদ্য বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বদরখালীর খাদ্য গুদাম দুটি চালু করা হলে চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়ার অন্তত ২০টি ইউনিয়নে সরকারী কর্মসূিচর খাদ্য সরবরাহ সহজ হতো। এতে পরিবহন খাতে সরকারী অর্থের ব্যয় কমার পাশাপাশি নানা বিড়ম্বনা থেকে পরিত্রাণ পেত সবপক্ষই। যদি সহসা খাদ্য গুদাম দুটি সংস্কার করা না হয় তাহলে ভবিষ্যতে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা ছাড়া কোন গত্যন্তর থাকবে না।’

এ ব্যাপারে চকরিয়ার চিরিঙ্গা খাদ্য গুদাম ও বদরখালীর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি–এলএসডি) সুনীল দত্ত বলেন, ‘আমি সবেমাত্র এখানে যোগদান করেছি। কয়েকদিনের মধ্যে সরজমিন পরিদর্শনের পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি লিখিতভাবে অবহিত করব। পরবর্তীতে নির্দেশনা মোতাবেক বদরখালীর খাদ্য গুদাম দুটি নিয়ে কী করা যায় সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। -দৈনিক আজাদী