নিউজ ডেক্স : করোনাভাইরাসের কারণে গত দুই বছর বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের নাগরিকরা হজ করতে পারেননি। তবে এবার করোনার প্রাদুর্ভাব কমে আসায় বাংলাদেশিদের জন্য খুলেছে হজের দুয়ার।
এ বছর চুক্তি অনুসারে বাংলাদেশ থেকে ৫৭ হাজার ৫৮৫ জনকে পবিত্র হজ পালনের অনুমতি দিয়েছে সৌদি সরকার। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় চার হাজার ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫৩ হাজার ৫৮৫ জন হজের সুযোগ পাবেন।
চলতি বছর (২০২২ সাল) হজ অনুষ্ঠিত হবে ৯ জুলাই (চাঁদ দেখা সাপেক্ষে)। এর মধ্যে আবার ৩১ মে থেকে হজ ফ্লাইট শুরুর ঘোষণা দেন বেসরকারি বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী।
তিনি জানান, এ বছর হজযাত্রী পরিবহনে বিমান ভাড়া (যাওয়া-আসা) ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা নির্ধারণ হয়েছে। এছাড়া মোট হজযাত্রীর ৫০ শতাংশ বিমান বাংলাদেশ ও বাকি ৫০ শতাংশ পরিবহন করবে সৌদি এয়ারলাইন্স।
এদিকে ভাড়া ও হজ ফ্লাইটের সময় ঠিক করা হলেও এর অন্যান্য কার্যক্রম এখনো বাকি। অথচ হাতে সময় রয়েছে মাত্র দুই মাস। এর আগের বছরগুলোতে হজ কার্যক্রম ও ব্যবস্থাপনার জন্য এজেন্সিগুলো গড়ে ৭-৮ মাস সময় হাতে পেতো।
হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) শীর্ষ একাধিক নেতা জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হজ যাত্রার সব কার্যক্রম শেষ করা সম্ভব নয়।
তারা বলছেন, ১৫ জুনের আগে ফ্লাইট শুরু করা প্রায় অসম্ভব। কারণ এখনও হজ প্যাকেজই ঘোষণা হয়নি। এছাড়া নিবন্ধন যাত্রীদের মধ্যে কতজন যাবেন সেটা ঠিক করা, লিড এজেন্সি নির্ধারণ, মোনাজ্জেম, বাড়ি ভাড়া, খাবার ও যানবাহন ঠিক করাসহ আরও অনেক কাজ বাকি রয়েছে।
এদিকে এবার ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের হজে যেতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অর্থাৎ ১৯৫৭ সালের ৩০ জুন বা তার আগে যাদের জন্ম তারা হজে যেতে পারবেন না। ফলে তাদের বিকল্পও ঠিক করতে হবে।
নির্ভরযোগ্য দায়িত্বশীল একটি সূত্রে জানা যায়, হজ প্যাকেজ ঘোষণার জন্য সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়া, খাবার ও পরিবহনসহ বিভিন্ন খরচের হিসাব ৫ মে পর্যন্ত হাতে পায়নি ধর্ম মন্ত্রণালয়।
যদিও হাব সভাপতি এম. শাহাদাত হোসাইন তসলিম গত ২৭ এপ্রিল ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীকে জরুরি ভিত্তিতে হজ প্যাকেজ ঘোষণা ও যথাসময়ে অন্যান্য কার্যক্রম শেষ করতে চিঠি দেন।
সেই চিঠিতে বলা হয়, হজ একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ। এর মধ্যে প্যাকেজ ঘোষণা, হজযাত্রী নিবন্ধন, লিড এজেন্সি ও মোনাজ্জেম নির্ধারণ, হজযাত্রীদের সৌদি আরবে আবাসন এবং মোয়াল্লেম ফি ও অন্যান্য খরচের অর্থ পাঠানোসহ বিভিন্ন কার্যক্রম শেষ করা হয়। হজের প্যাকেজ ঘোষণার পর পর্যায়ক্রমে এ কাজগুলো শেষে ভিসা ইস্যু করে দিতে হয় হজ ফ্লাইট।
চিঠিতে আরও বলা হয়, কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণে এবছর হজ ব্যবস্থাপনা যথাসময়ে শেষ করা চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে হজ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দ্রুত হজ প্যাকেজ নির্ধারণ করা জরুরি।
এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, ঈদের ছুটির কারণে প্যাকেজ ঘোষণা করা যায়নি। তিনি আরও বলেন, অন্যান্য বছর হজ প্যাকেজ মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের প্রয়োজন হলেও এবার তা হবে না।
কারণ জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, নতুন হজ আইন অনুসারে হজ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য জাতীয় ও নির্বাহী দুটি কমিটি করা হয়েছে। জাতীয় কমিটির প্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ কমিটিতে একাধিক মন্ত্রী, সচিব ও হাবের শীর্ষ নেতারা রয়েছেন। আর নির্বাহী কমিটির প্রধান হলেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান। তাই মন্ত্রিসভার অনুমোদন ছাড়াই খুব দ্রুত হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হবে। তবে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা প্যাকেজ ঘোষণার নির্দিষ্ট কোনো দিন বলতে রাজি হননি।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে হাব সভাপতি বলেন, এবছর সময় অনেক কম এবং তা প্রাকৃতিক দুর্যোগের (মহামারি) কারণেই হচ্ছে। কিন্তু অনেক কাজ বাকি থাকায় দ্রুত হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা দরকার। প্যাকেজ ঘোষণা ছাড়া অন্যান্য কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।
৩১ মে থেকে হজ ফ্লাইট চালুর বিষয়ে তিনি জানান, এই সময়ে ফ্লাইট শুরু করা কিছুতেই সম্ভব নয়। কারণ হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর খরচ বাড়া সাপেক্ষে অনেকে নাও যেতে পারেন, সেক্ষেত্রে হজে যারা যেতে রাজি আছেন তাদের তালিকা করতে হবে। আবার ৬৫ বছরের বেশি বয়সী ১০ হাজার ৪৪১ জন এবার হজে যেতে পারবেন না। ফলে তারা ছেলে-মেয়ে বা অন্য কাউকে পাঠাবেন কি না, নাকি টাকা তুলে নেবেন- এসব ঠিক করতে সময় লাগবে। এরপর মোনাজ্জেম ঠিক করা। সেই মোনাজ্জেম আবার সৌদিতে গিয়ে বাড়ি ভাড়া, যাতায়াত ও খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি ঠিক করে দেশে ফিরে পাসপোর্ট ও ভিসার জন্য সৌদি দূতাবাসে পাঠাবেন। এসব কারণেই ৩১ মের মধ্যে ফ্লাইট চালু করা সম্ভব হবে না।
তবে হাব সভাপতি আশা প্রকাশ করে বলেন, বিগত বছরগুলোর ন্যায় সবার সম্মিলিত চেষ্টায় এবছরও সুন্দরভাবে হজ ব্যবস্থাপনা সম্ভব হবে। -জাগো নিউজ