ফিরোজা সামাদ : শুভ্রতা অামিরাতে বারোটি বছর কাটিয়ে যখন দেশে ফিরলো তখন ওর সাথে জমজ দু’টি ছেলে সাত বছরের। কিন্তু এবারেও শুভ্রতা ছেলেদের নিয়েই ফিরলো,অারিফ অাসেনি। এই বারোটি বছরে অনেক পরিবর্তন হয়েছে শুভ্রতার জীবনে। সেই চুপচাপ শুভ্রতা হারিয়ে গেছে বাস্তবতার অাঁকাবাঁকা পথের বাঁকে।
দুই ছেলের হাত ধরে দীর্ঘ বারোটি বসন্ত পাড় করে বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখে শুভ্রতা। শুভ্রতা এতোদিন মা শাহানা বেগম ছাড়া অার কারো সাথেই চিঠিপত্রের কোনো অাদান প্রদান করেনি।

বাবা এনামূল হক সাহেব মাঝে মাঝে জামাই, মেয়ে ও নাতী দু’টির কুশলাদি টেলিফোনের মাধ্যমে নিয়েছেন। শুভ্রতা অাস্তে অাস্তে বাবার সাথেও ভালোভাবে ফোনে কথা বলতো। এনামুল হক সাহেব ধরেই নিয়েছেন তিনি খুব একটা ভুল করেন নি। ঠিক বারো বছর পর শুভ্রতা ফিরে এলো সাত বছরের জমজ দু’টি ছেলের হাতধরে। ফিরে এলো বাবার সংসারে। এ ফিরে অাসা কেমন ? কেউ জানেনা,এমনকি শুভ্রতা নিজেও জানেনা। কোথায় তার গন্তব্য ??
বদলে যায় দিন,বদলে যায় সময় অার।সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বদলে যায় মানুষের মন। যে মারুফ একদিন অটল অনর ছিলো শুভ্রতার স্মৃতিতে ভাস্বর থাকবে অবশিষ্টাংশ জীবন, সেই মারুফ তার নিজেকে দেয়া প্রতিশ্রুতি রাখতে পারলো না। বারোটি বছর শুভ্রতার স্মৃতি ধরে চলতে চলতে বন্ধু বান্ধব,অাত্মিয় স্বজনের অনুরোধ সর্বোপরি বাবা মায়ের দীর্ঘশ্বাসের কাছে অাত্মসমর্পণ করলো। পাশের গাঁয়ের সম্ভ্রান্ত পরিবারের শিক্ষিতা এক বিশ বছরের যুবতীর সাথে পরিণয়ে অাবদ্ধ হলো। ধূমধাম সহকারে বিয়ে সম্পন্ন করে নববধূ নিয়ে বাড়ি ফিরতেই ওর বন্ধু রনি মারুফকে জানালো শুভ্রতার ফিরে অাসার কথা। খবর শুনে মারুফের মনে হলো ভুমিকম্প হচ্চে, বুকের ভেতর হাজারো হাতুড়ী পেটানোর শব্দ টের পাচ্ছে। মাথা ঘুরে পড়ে গেলো নিমিষেই।
জ্ঞান ফিরে মাথার কাছে নববধূ লাজরাঙা হয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মারুফ চোখ খুলে বউয়ের মুখের দিকে তাকাতে পারছেনা। চোখ বন্ধ করেই শুয়ে থাকলো। ভাবছে এই মেয়েটির কি দোষ? যতো দোষ অামার, অামিই সব নষ্টের মূল, কাউকে জীবনে সুখি করতে পারলামনা।
শুভ্রতা, বাবা-মা, অাত্মিয়-বন্ধু এমনকি।নিজেও কি সুখ পেয়েছি ?
পাঠক, এবার অাপনাদের নিয়ে যাচ্ছি শুভ্রতার কাছে। অারব অামিরাতে কিভাবে জীবন যাপন করলো সংসার সমরাঙ্গনে শুভ্রতা ?? -ক্রমশঃ