- Lohagaranews24 - http://lohagaranews24.com -

লোহাগাড়ায় ইটভাটায় পুড়ছে পাহাড়ি মাটি ও কাঠ, পরিবেশ বিপর্যয়

285

এলনিউজ২৪ডটকম : লোহাগাড়ায় সর্বমোট ইউনিয়ন সংখ্যা ৯। ইটভাটার সংখ্যা ৪৯। তার মধ্যে চরম্বা ইউনিয়নে ২০টি ইটভাটা রয়েছে। এই ইউনিয়নের লোকসংখ্যা ২০ হাজার। ভাটা নির্গত ধোঁয়া ও ধুলাবালিতে এলাকাবাসী মারাত্মকভাবে শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হচ্ছে। পরিবেশে সালোকসংশ্লেষণ হচ্ছে না। ফলে মারাত্মকভাবে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে বলে এলাকাবাসীরা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে লিখিত অভিযোগ করেছেন। কোন ব্যবস্থা হয়নি, হচ্ছেনা। তারা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পুনরায় সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

অভিযোগে প্রকাশ, এলাকাটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও সন্নিহিত পার্বত্য অঞ্চলের বনাঞ্চল ঘিরে অবস্থিত। এখানে হাত বাড়ালেই পাহাড়ি মাটি ও কাঠ পাওয়া যায়। ভাটায় মাটি কাঁচামাল হিসেবে ও কাঠ জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। এজন্য ভাটা বৃদ্ধি ঘটেছে বলে এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিটি ভাটায় বিপুল পরিমাণ পাহাড়ি মাটি ও কাঠ মজুদ রয়েছে। ভাটাগুলি হতে একযোগে নির্গত ধোঁয়ায় আকাশ মেঘাচ্ছন্নের মতো আবরণ সৃষ্টি হয়। শ্রমিকদের পয়ঃনিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা নেই। যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ করা হয় বলে ভাটার চতুর্দিকে উৎকঠ গন্ধে চলাফেরা করা দায় হয়ে পড়ে। বিগত মৌসুমে উৎপাদিত ইট ভাটায় মজুদ রয়েছে। প্রতিদিন এসব ইট বোঝাই ভারী ট্রাক চলাচলের ফলে গ্রামীণ রাস্তা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বাধা দেয়ার কথা যাদের, তারা রহস্যজনক কারণে নীরব ভূমিকা পালন করছেন। চরম্বা মূল সড়ক ঘেঁষে বেশিরভাগ ইটভাটার অবস্থান। এসব ভাটায় ব্যবহারের জন্য পাহাড়ি মাটি রাস্তা ঘেঁষে স্তূপ করা হয়েছে। বৃষ্টি হলেই মাটি রাস্তায় এসে পড়ে। ফলে চলাচলের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। বৃষ্টি থেমে গেলে শুকনো মৌসুমে জমা হওয়া মাটির উপর দিয়ে যান চলাচলের সময় ধুলাবালি উড়তে থাকে। মানুষজন চলাচল করতে পারে না। ফলে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন জনপদে লোকজনের বাড়িতে ধুলার আস্তরণ পড়ে যায়। তারা শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়।

লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ হানিফ জানিয়েছেন, ধুলাবালি শ্বাসকষ্ট রোগের অন্যতম কারণ। শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত লোকজন হাপানিতে আক্রান্ত হয়। চরম্বাতে হাপানি রোগের সংখ্যা অধিক।

লোহাগাড়া উপজেলা প্রকৌশলী প্রতিপদ দেওয়ান জানিয়েছেন, রাস্তার ধারে ইটভাটার কাঁচামাল স্তূপ করার কোন বিধান নেই। এ বিধান মানা হচ্ছে না। তিনি এ সমস্যাটির কথা উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। ভারী যানবাহনের চাপে রাস্তার পাশাপাশি ব্রিজ-কালভার্টও ধ্বংস হচ্ছে। প্রতি বছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় রাস্তা, কালভার্ট সংস্কার কিংবা নির্মিত হলেও ভারী গাড়ির চাপে তা নষ্ট হয়ে যায়।

চরম্বা সন্নিহিত টংকাবতী বনাঞ্চল হতে প্রতিরাতে চোরাইকাঠবাহী ট্রাক পদুয়া অতিক্রম করে। এছাড়া ইট ভাটায় ব্যবহৃত জ্বালানী কাঠতো রয়েছেই। পুলিশী ও বন কর্মকর্তা-কর্মচারীর টোকেনেই কাঠ পরিবাহিত হয় বলে অভিযোগ ওঠেছে। তবে লোহাগাড়া থানা ও বনবিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা দাবি করছেন এ অভিযোগ সত্য নয়। টংকাবতী বিট অফিস সংলগ্ন ইটভাটায় কাঠের স্তূপ রয়েছে।

এ ব্যাপারে বিট কর্মকর্তা বলছেন, তারা ইটভাটায় অভিযান করতে পারেন না। তবে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি যদি অভিযান পরিচালনা করেন, তবে বনবিভাগ সহায়তা দিতে পারে মাত্র।

দিন দিন ইটভাটা বৃদ্ধি ও উল্লেখিত সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে। এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের ভূমিকা নীরব বলেও অভিযোগে প্রকাশ। অনতিবিলম্বে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবেন এমন প্রত্যাশা চরম্বাবাসীর।