এলনিউজ২৪ডটকম : লোহাগাড়ায় ৩ ঘন্টার ব্যবধানে পৃথক সড়ক দূর্ঘটনায় নানা-নাতনীসহ ৩ জন নিহত ও ৬ জন গুরতর আহত হয়েছেন। সোমবার (৪ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে পদুয়া ইউনিয়নের নয়া পাড়া ও আমিরাবাদ ইউনিয়নের রাজঘাটা ব্রিজ এলাকায় এই দূর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের পুরাতন বিওসি এলাকার লালির বাপের বাড়ির মৃত মোহাম্মদ হোসেনের পুত্র ইকবাল হোসেন প্রকাশ বাবুল (৫৫) ও তাঁর নাতনী সাতকানিয়ার ছদাহা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোরশেদুর রহমান বাড়ির মো. তারেকের কন্যা আজুয়া আক্তার (৪) ও উপজেলা চরম্বা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের চরম্বা সিকদার পাড়ার বশির আহমদের পুত্র আবদুল মান্নান (৩২)।

আহতরা হলেন নিহত বাবুলের কন্যা ও সাতকানিয়ার ছদাহা ইউনিয়নের দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবাসী মো. তারেকের স্ত্রী মোছাম্মৎ সামিরা (২৪), আমিরাবাদ ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের রাউজন্যা পাড়ার সাহেব মিয়ার পুত্র মো. রুবেল (৩৫), একই এলাকার মৃত ইউনুস পুত্র মো. মামুন (৩৫), পদুয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মাষ্টার পাড়ার মৃত আবদুল হাকিমের পুত্র শাহ আলম (৫০), তার স্ত্রী ফরিদা ইয়াছমিন (৪০) ও একই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ধলিবিলা এলাকার দানু মিয়ার পুত্র কামাল হোসেন (৩০)।
প্রত্যক্ষদর্শী ও হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বিকেল ৪টার দিকে পদুয়া নয়াপাড়া এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কক্সবাজারমুখি ইট বোঝাই ট্রাকের পেছনের চাকায় একইমুখি মোটরসাইকেল পৃষ্ট হয়। এতে মোটরসাইকেলে থাকা নানা বাবুল ও নাতনী আজুয়া আক্তার থেঁতলে গিয়ে ঘটনাস্থলে মারা যান। স্থানীয়রা দূর্ঘটনায় গুরতর আহত নারী সামিরাকে উদ্ধার করে সাতকানিয়ার কেরানিহাটে এক বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আশংকাজনক অবস্থায় চট্টগ্রামে প্রেরণ করা হয়েছে।
অপরদিকে, সন্ধ্যা ৭টায় আমিরাবাদ ইউনিয়নের রাজঘাটা ব্রিজ এলাকায় কক্সবাজারমুখি ট্রাকের সাথে বিপরীতমুখি সিএনজি চালিত অটোরিক্সার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে অটোরিক্সায় থাকা ৬ জন গুরতর আহত হন। স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে উপজেলা সদরের এক বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক আহত আবদুল মান্নানকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আশংকাজনক অবস্থায় চট্টগ্রামের প্রেরণ করা হয়েছে।
নিহত বাবুলের ছোট ভাই জাহাঙ্গীর আলম জানান, তার ভাতিজির স্বামী প্রবাসে থাকেন। স্বামীর পৈত্রিক ভিটায় নতুন বসতঘর নির্মাণের কাজ চলায় তার ভাতিজি সন্তানদের নিয়ে বাপের বাড়িতে বসবাস করে আসছিলেন। ঘটনারদিন মোটরসাইকেল যোগে তার ভাই, ভাতিজি ও নাতনীকে নিয়ে ছদাহা ইউনিয়নে নির্মাণাধীন বসতঘরের কাজ দেখতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথে এই দূর্ঘটনা ঘটে। নিহত বাবুল পেশায় ব্যবসায়ী ও ৩ সন্তানের জনক। এছাড়া গুরতর আহত ভাতিজি সামিরা ১ মেয়ে ও ১ পুত্র সন্তানের জননী। এরমধ্যে বড় মেয়ের মৃত্যু হয়েছে।
আহত সিএনজি অটোরিক্সা যাত্রী শাহ আলম জানান, তারা ভাড়া চালিত সিএনজি অটোরিক্সা যোগে লোহাগাড়া উপজেলা সদর বটতলী স্টেশন থেকে স্ব স্ব গন্তব্যে যাচ্ছিলেন। তাদের সিএনজি অটোরিক্সা রাস্তার এক পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। ঘটনাস্থলে বিপরীতমুখি মাল বোঝাই ট্রাক অপর একটি গাড়িকে ওভারটেক করতে গিয়েই সিএনজি অটোরিক্সার সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে চালকসহ সকলে গুরতর আহত হন। হাসপাতালের নেয়ার পর একজনের মৃত্যু হয়।
লোহাগাড়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা রুবেল আলম জানান, খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল পদুয়া নয়া পাড়ায় এলাকায় গিয়ে দূর্ঘটনায় নিহত ২ জনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই আহত অপরজনকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করেছেন।
লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাক্তার তৌফিক সেকান্দর জানান, সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত দুই জনকে হাসপাতালে আনার আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন।
দোহাজারী হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ খান মুহাম্মদ এরফান জানান, খবর পেয়ে উভয় ঘটনাস্থলে দ্রুত ফোর্স পাঠানো হয়। দূর্ঘটনা কবলিত ২টি ট্রাক, সিএনজি অটোরিক্সা ও মোটরসাইকেল হাইওয়ে থানা হেফাজতে রয়েছে। আইনী প্রক্রিয়া শেষে নিহতদের মরদেহ স্বজনদের হাতে হস্তান্তর করা হবে। উভয় দূর্ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।