- Lohagaranews24 - http://lohagaranews24.com -

লটারি বেচে দিনে ২৫ কোটি টাকা আয় !

3bg20171005171912

নিউজ ডেক্স : লটারির টিকেট বিক্রি করে দিনে ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা আয় করছে একটি প্রতারক চক্র, যে চক্রের মধ্যে ১২ জন চীনা নাগরিকও আছেন। এই প্রতারণার জাল বিস্তৃত নাইজেরিয়া-ইয়েমেন পর্যন্তও। বাংলাদেশে চক্রটি পিবিডিএফ নামে একটি প্রতিষ্ঠান খুলে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (০৫ অক্টোবর) চট্টগ্রামে এক চীনা নাগরিকসহ এই চক্রের ১২ জনকে আটক করেছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। তাদের কাছ থেকে লটারি ব্যবসার বিস্তারিত জেনেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (এডিসি-বন্দর) আবু বক্কর সিদ্দিক বাংলানিউজকে বলেন, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এই সংঘবদ্ধ চক্রটি লটারি বিক্রি করে।  গরিব-শ্রমজীবী মানুষকে লাখ লাখ টাকার লোভ দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়।  প্রতিদিন সারা দেশে চক্রটি মোট ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকার টিকেট বিক্রি করে। এই টাকার ১০ থেকে ১৫ শতাংশ তারা পুরস্কার বাবদ ব্যয় করে বলে আমাদের জানিয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তাদের ধারণা, টিকেট বিক্রির অর্থের বড় অংশ জঙ্গিবাদের কাজে ব্যয় করা হচ্ছে।  অথবা এই টাকা দেশের বাইরে পাচার হয়ে যাচ্ছে।

এডিসি আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ এবং নাইজেরিয়ায় এই লটারি ব্যবসা চালু আছে।  এই ব্যবসা যারা করে তাদের মধ্যে যোগসাজশ আছে।  ইয়েমেনে আগে এই ব্যবসা ছিল।  তারা সেটা বন্ধ করেছে।

বৃহস্পতিবার নগরীর দক্ষিণ খুলশীর এক নম্বর সড়কে চিকিৎসক ডা.নীলকান্ত ভট্টাচার্যের মালিকানাধীন গৌরি নামে একটি ভবনের পাঁচতলায় অভিযান চালায় পুলিশ। সেখানেই ছিল পিবিডিএফ বা পেট্রো নজরুল বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড নামে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়।

অভিযানের সময় প্রতিষ্ঠানটিতে চীনের নাগরিক শেন জিয়াং (৩৬) সহ ১২ জন কাজ করছিলেন।  শেন জিয়াং ছাড়া বাকি সবাই বাঙালি, যাদের মধ্যে দুজন নারীও আছেন।

কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (এডিসি) পলাশ কান্তি নাথ বাংলানিউজকে বলেন, শেন জিয়াং একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার।  দুই মাস পরপর তিনি বাংলাদেশে আসেন।  এভাবে আরও ১১ জন চীনের নাগরিক আছেন যারা বাংলাদেশে অবস্থান করে এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।

পিবিডিএফ নামে প্রতিষ্ঠানটির মালিক মোল্লা নজরুল ইসলাম। তার নামে জারি হওয়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স এবং টিআইএন সনদের কপি বাঁধাই করে ওই প্রতিষ্ঠানের দেওয়ালে রাখা হয়েছে।

এডিসি আবু বক্কর সিদ্দিক জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানটির মূল অফিস হচ্ছে ঢাকার বনানীতে। যেসব টিকেট বিক্রি করা হয় সেগুলো চীন থেকে মুদ্রিত হয়ে আসে।

ঝাল মরিচ, সমুদ্রের গুপ্তধন-এই ধরনের বিভিন্ন নামে টিকেট বিক্রি হয়। স্ক্র্যাচ কার্ড টাইপের টিকেটগুলো ঘষে দেখা যায়, পাশাপাশি তিনটি প্রতীক সেটা হোক মরিচ কিংবা গুপ্তধন, যদি একই ধরনের হয়, তবে পাশে লেখা পুরস্কারের অর্থ টিকেট ক্রেতা পাবেন। তবে সাধারণত তিনটি ছবি মিলে না বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরতরাই।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি-বন্দর) আসিফ মহিউদ্দিন বলেন, নগরীর ইপিজেড, আকবর শাহ, তুলাতলী, ফয়সলেক, বাকলিয়াসহ যেসব এলাকায় গরিব-শ্রমজীবী মানুষ বেশি সেখানে তারা এসব টিকেট বিক্রি করে। নগরীতে মোট ৪১টি দোকানে টিকেট বিক্রির তথ্য আমরা পেয়েছি। প্রতিষ্ঠানের সেলস রিপ্রেজেন্টিভরা টিকেট নির্দিষ্ট দোকানে সরবরাহ করেন।

২০১৬ সালের ডিসেম্বরে বন্দরনগরীতে কার্যক্রম শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। গত ১১ মাসে তারা চারবার অফিস পরিবর্তন করেছে।

এডিসি আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, কোন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের লটারি বিক্রির অনুমোদন নেই। তারা লটারি বিক্রির কোন সরকারি অনুমোদন আমাদের দেখাতে পারেনি। এই কোটি কোটি টাকা আয় করে তারা কী কাজে ব্যবহার চীন থেকে মুদ্রিত হয়ে আসে এসব লটারির টিকেট। -বাংলানিউজ