- Lohagaranews24 - http://lohagaranews24.com -

রোহিঙ্গাদের অবশ্যই মিয়ানমারকে ফেরত নিতে হবে : সুষমা

P-1-2-1

নিউজ ডেক্স : রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের অবশ্যই মিয়ানমারকে ফেরত নিতে হবে। ঢাকা সফররত ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এ কথা বলেছেন। তিনি রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান হওয়াও দরকার বলে মন্তব্য করেছেন। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এ বিষয়ে ব্রিফ করেন। এর আগে দুই দিনের সফরে গতকাল রোববার সকালে ঢাকায় আসার পর হোটেল সোনারগাঁওয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক করেন সুষমা স্বরাজ। এ বৈঠকের পর এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘কেবল বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের রাখাইন রাজ্যে ফেরত যাওয়ার মধ্য দিয়েই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য ভারত জরুরি ত্রাণ সহায়তা পাঠালেও তাদের দেশে ফেরা নিয়ে এর আগে স্পষ্ট বক্তব্য আসেনি দিল্লির। মিয়ানমারে নিধনযজ্ঞের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা এই মানুষদের বোঝাতে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দ ব্যবহার করেননি সুষমা স্বরাজ, রাখাইন রাজ্যের ‘বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিবর্গ’ বলেছেন তিনি। সুষমা স্বরাজ বলেন, ‘মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতায় ভারত গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’ মাহমুদ আলী বলেন, ভারত–বাংলাদেশ যৌথ পরামর্শক কমিশনের বৈঠকে তারা ভারতের প্রতি মিয়ানমারের ওপর চাপ দেওয়ার আহ্বান জানান, যাতে রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ ভূমিতে প্রত্যাবর্তনসহ সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, বিশাল সংখ্যার এই শরণার্থীদের বাংলাদেশের জন্য ‘বড় বোঝা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশে কত দিন এই ভার বহন করবে। এর একটা স্থায়ী সমাধান হতে হবে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আর্থ–সামাজিক উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা রাখার উপর জোর দেন তাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পরপরই সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পূর্ব নির্ধারিত মিয়ানমার সফরে গিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সুষমা স্বরাজ শেখ হাসিনাকে বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সূচিকে তার আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির কথাও মনে করিয়ে দিয়েছিলেন। ইহসানুল করিম বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদী সু চিকে বলেছেন,আপনার আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ভালো, এটা নষ্ট করবেন না।’

বৈঠকে শেখ হাসিনা শরণার্থী সঙ্কট মোকাবেলায় বাংলাদেশের পদক্ষেপগুলো ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার দেশের ১৬ কোটি মানুষের অন্নের সংস্থান যেহেতু করতে পারছে, এই শরণার্থীদের খাদ্যের ব্যবস্থাও করতে পারবে। মানবিক কারণে মিয়ানমারের এই নাগরিকদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার কথাও বলেন শেখ হাসিনা।

মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহায়তার কথা এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট পরবর্তী সময়ে নিজের এবং ছোট বোন শেখ রেহানার ভারতে শরণার্থী হিসাবে আশ্রয় নেওয়ার কথাও স্মরণ করেন তিনি।

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবনে আসার আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক নিয়ে নিজের সন্তোষের কথাও শেখ হাসিনাকে জানান সুষমা। ইহসানুল করিম বলেন, ‘ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার দেশের লাইন অফ ক্রেডিটে হওয়া কাজগুলোর কিছুটা দেরি হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন।’

বৈঠকে শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী, ভারতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী এবং পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন সেদেশের পররাষ্ট্র সচিব জয়শঙ্কর এবং ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা।

বৈঠকের শুরুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর ব্যবহৃত কিছু সমরাস্ত্র প্রদানের অনুষ্ঠান হয়। বাংলাদেশকে শুভেচ্ছার স্মারক হিসেবে তখন ব্যবহৃত এমআই হেলিকপ্টার, দুটি ট্যাংক, ২৫টি বিভিন্ন অস্ত্র দিয়েছে ভারত। গণভবনের অনুষ্ঠানে একটি সার্ভিস রিভলবার শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেন সুষমা স্বরাজ। আনুষ্ঠানিক সৌজন্য সাক্ষাতের পর শেখ হাসিনা ও সুষমা স্বরাজ একান্তে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন।

আজ সোমবার সুষমা স্বরাজ ভারতীয় হাই কমিশনের চ্যান্সেরি ভবনের উদ্বোধন করবেন। সেই সঙ্গেই উদ্বোধন করবেন ভারতীয় অর্থায়নে বাস্তবায়িত বাংলাদেশে ১৫টি প্রকল্প। আজ বিকেল নাগাদ ঢাকা ছাড়ার আগে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের সঙ্গেও তার মতবিনিময় করার কথা রয়েছে। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।