নিউজ ডেক্স : রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং তথ্য কমিশন সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারসহ চাঞ্চল্যকর অন্যান্য মামলার রায় দ্রুত নিষ্পত্তি করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
বুধবার (২৪ নভেম্বর) জাতীয় সংসদে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে দেওয়া স্মারক বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে বিকেল ৩টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়। জাগো নিউজ
রাষ্ট্রপতি বলেন, দুর্নীতি, মাদক, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কারণে দেশে স্বস্তি বিরাজ করছে, যা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে। সুশাসনের উদ্দেশ্যে প্রতিটি সরকারি প্রতিষ্ঠানকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির আওতায় আনার লক্ষ্যে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি, অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থাপনা, সিটিজেনস চার্টার এবং শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় দলমত নির্বিশেষে রাজনৈতিক নেতা, সুশীলসমাজ এবং অংশীজনদের সমন্বিতভাবে কাজ করে যেতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনকালীন একাদশ জাতীয় সংসদের পঞ্চদশ অধিবেশনে উপস্থিত থাকতে পারা আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দ ও গৌরবের বিষয়। এজন্য আমি পরম করুণাময় আল্লাহ্র নিকট শুকরিয়া আদায় করছি। করোনার অব্যাহত ঢেউ অগ্রাহ্য করে জাতি সাড়ম্বরে উদযাপন করছে মুজিবশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। আমরা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত ভাগ্যবান। দেশে-বিদেশে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপনের এ শুভক্ষণে আমি আপনাকে এবং আপনার (স্পিকার) মাধ্যমে সংসদ-সদস্যবৃন্দসহ প্রিয় দেশবাসী ও বিদেশে বসবাসরত সকল প্রবাসীকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন জ্ঞাপন করছি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর গণহত্যা শুরু করে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং ওই দিনই তাকে হানাদার বাহিনী গ্রেফতার করে। তার নির্দেশনায় কৃষক-শ্রমিক, ছাত্র-জনতা যার যা কিছু ছিল তা নিয়েই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ১০ এপ্রিল শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন করা হয় এবং ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে, ৩০ লাখ শহীদের জীবন ও দুই লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় বাঙালির চূড়ান্ত বিজয়, সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন ‘স্বাধীনতা’।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত, দুর্নীতি ও শোষণহীন এক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ‘বাংলার মানুষের মুক্তি’ অর্থাৎ সোনার বাংলা বিনির্মাণ। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে যুদ্ধবিধ্বস্ত নবীন দেশটির প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করে বঙ্গবন্ধু যখন মানুষের খাদ্যাভাব দূরীকরণ, সামাজিক অস্থিরতা নিরসন ও আইন-শৃঙ্খলার উন্নতিতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং দেশকে পুনর্গঠন করার জন্য বিভিন্ন উন্নয়নমুখী নীতি ও আইন প্রণয়ন করে জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে ঘাতকেরা তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন স্তব্ধ করে দেয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ যখন স্বাধীনতা লাভ করে তখন অনেকেই সদ্য স্বাধীন দেশটির ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অস্টিন রবিনসন ‘ইকোনমিক প্রসপেক্টাস অব বাংলাদেশ’ গ্রন্থে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে ‘ম্যালথাসিয়ান স্ট্যাগনেশন’ এর সঙ্গে তুলনা করেন, যার পরিণতি দুর্ভিক্ষ ও মৃত্যু। তৎকালীন মার্কিন সেক্রেটারি অব স্টেট হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র সঙ্গে তুলনা করেন। কারণ সেসময় বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে অনেক বাধা ছিল যা অতিক্রম করে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো ছিল খুবই কঠিন। কিন্তু, আজ সকল আশঙ্কা ও নেতিবাচক ভবিষ্যৎবাণী ভুল প্রমাণ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে চলেছেন তার সুযোগ্য উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ দ্রুতগতিতে উন্নয়নের পথে অগ্রসরমান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতিসংঘ কর্তৃক ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। ১৯৭৫ সালের পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী কর্মকাণ্ড এবং উপযুক্ত নীতি ও কার্যক্রমের অভাবে অর্থনীতিতে তেমন গতি সঞ্চার হয়নি। তবে গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে জাতির পিতার আদর্শের সরকার দায়িত্বে থাকায় তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ফলে দেশ আজ উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশ্বে রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট’র নির্ধারিত তিনটি সূচক মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ভঙ্গুরতা সূচকের প্রতিটিতে নির্ধারিত স্কোরের বেশি অর্জন করায় গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করে, যা স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর ক্ষণে দেশের এ সাফল্য জাতির জন্য বয়ে এনেছে এক অভাবনীয় গৌরব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাজ্ঞ, দূরদর্শী ও অদম্য নেতৃত্বের জন্য আমাদের এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। এজন্য আমি তাকে আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাই।
আবদুল হামিদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেছে। এখন পৃথিবীর যে ১১টি দেশকে ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য ‘উদীয়মান এগারো’ বলে অভিহিত করা হয় তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। গত এক দশকে গড়ে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ এবং পরপর তিন বছর ৭ শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধি অর্জনের পর বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশে উন্নীত হয়। করোনার প্রভাব সত্ত্বেও যে কয়েকটি দেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে তাদের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। দেশের অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য কাঠামোগত পরিবর্তনের মাধ্যমে কৃষিপ্রধান দেশ এখন আধুনিক অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য ধারণ করেছে। অর্থনৈতিক উন্নতির এ ধারাবাহিকতায় বর্তমানে জিডিপিতে কৃষির অবদান মাত্র ১৩ শতাংশ, অন্যদিকে শিল্প ও সেবা খাতের অবদান জিডিপিতে যথাক্রমে ৩৫ ও ৫২ শতাংশ যা অত্যন্ত আশাপ্রদ। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। ২০৩৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশ বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিণত হওয়ার বিষয়ে মন্তব্য করেছে বৃটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিক অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ।
তিনি বলেন, গত দেড় দশকে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ৫৪৩ মার্কিন ডলার হতে বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ৫৫৪ মার্কিন ডলারে এবং জিডিপির আকার ৬ গুন বৃদ্ধি পেয়ে ৪ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা হতে ২৭ লাখ ৯৬ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। রপ্তানি প্রায় ৪ গুন বৃদ্ধি পেয়ে ১০ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে প্রায় ৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৭৪৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে আজ ৪৮ হাজার মিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে যা এ যাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। বাজেটের আকার ১০ গুন বৃদ্ধি পেয়ে ৬১ হাজার ৫৭ কোটি টাকা থেকে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা হয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ ২ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা থেকে ১ লাখ ৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকায় বৃদ্ধি করা হয়েছে। এডিপির আকার প্রায় ৯ গুন বৃদ্ধি পেয়ে ২৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা হতে ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা হয়েছে।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে এবং কিছু কিছু সূচকে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশসমূহের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। এমডিজি অর্জনে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন বিশেষভাবে শিশুমৃত্যু হ্রাসের কারণে বাংলাদেশ জাতিসংঘ কর্তৃক এমডিজি পুরস্কারে ভূষিত হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার সময় আমাদের গড় আয়ু ছিল ৪৭, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২ বছরের ওপরে। প্রাথমিক স্কুলে যাওয়া ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় শতভাগ। স্বাক্ষরতার হার ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। শিশু ও মাতৃ মৃত্যুহার হ্রাস পেয়েছে। আমাদের উৎপাদিত পোশাক, সিমেন্ট, ওষুধ, ফুল, সবজি, মাছসহ অসংখ্য পণ্য বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। পোশাক রপ্তানিতে এবং ইন্টারনেটভিত্তিক কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। কৃষিজমির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাওয়া সত্ত্বেও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় খাদ্য উৎপাদনে আজ আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ফলে ২০০৫ সালে যেখানে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪০ শতাংশ সেখানে ২০১৯ সালে দারিদ্র্যের হার ২০ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলার আধুনিক রূপ ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ কোনো স্বপ্ন নয় বরং বাস্তবতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদের পরামর্শ ও দিকনির্দেশনায় ডিজিটাল বাংলাদেশের বাস্তবায়ন শুধু দেশে নয়, বিশ্বে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে যখন গোটা বিশ্ব বিপর্যস্ত তখন সরকারের বিভিন্ন ডিজিটাল উদ্যোগ মানুষকে দেখিয়েছে নতুন পথ, যুগিয়েছে প্রেরণা। ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নে নেতৃত্বদান ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রী ‘উইটসা এমিনেন্ট পারসনস অ্যাওয়ার্ড’ এ ভূষিত হয়েছেন। পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ও অবদানের জন্য ‘অ্যাসোসিও লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করেছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ। প্রধানমন্ত্রী এবং তার সুযোগ্য পুত্রের এ অর্জন বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা আরও বৃদ্ধি করেছে।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, ‘৭ কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না’। কোভিড-১৯ মহামারি আমাদের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাকে সাময়িকভাবে বাঁধাগ্রস্ত করলেও থামিয়ে দিতে পারেনি। সরকারের সময়োচিত ও দূরদর্শী পদক্ষেপের কারণে অনেক উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ এবং সংক্রমণজনিত মৃত্যুহার অপেক্ষাকৃত কম। এরই মধ্যে ৪ কোটি ৫৫ লাখ ৯১ হাজার ৫৭৮ জনকে টিকার আওতায় আনা হয়েছে। করোনার সংকট মোকাবিলায় অর্থনীতিকে দ্রুত পুনর্গঠন এবং এর গতি পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার ২৮টি প্যাকেজের আওতায় ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করছে। এ সকল প্রণোদনা প্যাকেজসমূহের বাস্তবায়ন কর্মসৃজন ও কর্মসুরক্ষা, অভ্যন্তরীণ চাহিদা সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।
‘রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা প্রদান সহায়তাসহ স্বল্প সুদে বিভিন্ন প্রকার সুবিধা প্রদান করায় বৃহৎ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহ দ্রুত উৎপাদনে ফিরতে সক্ষম হয়েছে। ফলে দেশের রপ্তানি পূর্বের গতি ফিরে পেয়েছে। করোনাকালীন বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, ওএমএস কার্যক্রম এবং নগদ অর্থ বিতরণ ইত্যাদি নানামুখী জনকল্যাণকর কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের একটি মানুষও না খেয়ে থাকেনি। জীবন-জীবিকার অসাধারণ সমন্বয়ের মাধ্যমে করোনা সংকট মোকাবিলায় অনন্যসাধারণ নেতৃত্ব প্রদানের কারণে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ এবং জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অকুণ্ঠ প্রশংসা করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ স্বীকৃতি আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের, যা বিশ্ব দরবারে আমাদের সম্মান আরও বৃদ্ধি করেছে। এজন্য আমি প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, জাতি হিসেবে আমরা এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত অতিক্রম করছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর সোপান বেয়ে আমরা পৌঁছে গিয়েছি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর স্বর্ণতোরণে। সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর নির্মাণ এখন সমাপ্তির পথে। প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় মনোবল, বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন হয়েছে। এ সেতুর বাস্তবায়ন জাতি হিসেবে আমাদের স্বকীয়তা, সম্পদ ব্যবস্থাপনা, স্বচ্ছতা, সক্ষমতা, জবাবদিহি, দক্ষতা এবং আত্মবিশ্বাসের প্রতীকস্বরূপ মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সাহস দিয়েছে। পদ্মা সেতুর নেগোসিয়েশনের পর অন্যান্য মেগা প্রকল্পে নেগোসিয়েশন দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বহুলেন টানেলের দ্বিতীয় টানেলের নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়েছে। সমগ্র দেশে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বিজয় দিবসের উপহার হিসেবে দেশের জনগণ প্রথম মেট্রো রেলে চলাচল করতে পারবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ৫৭তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সফলভাবে উৎক্ষেপণ করেছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এমডিজির সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ২০১৫ হতে ২০২০ সাল পর্যন্ত এসডিজি’র বিভিন্ন সূচকে অনন্য অগ্রগতির স্বীকৃতিস্বরূপ সম্প্রতি বাংলাদেশ ‘এসডিজি প্রোগ্রেস অ্যাওয়ার্ড’ এ ভূষিত হয়। সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সল্যুশন নেটওয়ার্কের প্রেসিডেন্ট বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও উন্নয়ন কৌশলবিদ অধ্যাপক জেফরি ডেভিড স্যাকস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভার্চুয়ালি ‘এসডিজি প্রোগ্রেস অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করেন। এ প্রাপ্তি আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের এক বিশাল অর্জন। এ সম্মান বাংলাদেশের, এ সম্মান সমগ্র বাঙালি জাতির।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ইউনেস্কো কর্তৃক প্রবর্তিত ’UNESCO-Bangladesh Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman International Prize for the Creative Economy’ এর আওতায় প্রথমবারের মতো উগান্ডার মোটিভ ক্রিয়েশন নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর নামে এ আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তন জাতি হিসেবে আমাদের আরেকটি অসাধারণ প্রাপ্তি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে প্রয়োজন ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সকলের মধ্যে ঐক্য। ঐক্য গড়ে তুলতে হবে সাম্প্রদায়িকতা, অগণতান্ত্রিকতা ও সহিংসতার বিরুদ্ধে। রাজনৈতিক দলসমূহকে পরমতসহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। আসুন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা দল-মত-পথের পার্থক্য ভুলে, ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে জাতির গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা ও দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার মধ্য দিয়ে লাখো শহীদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করি।