Home | উন্মুক্ত পাতা | যুবসমাজকে নৈতিক শিক্ষা প্রদান সময়ের অনিবার্য দাবী

যুবসমাজকে নৈতিক শিক্ষা প্রদান সময়ের অনিবার্য দাবী

43
অধ্যক্ষ এম সোলাইমান কাসেমী : শিক্ষা হচ্ছে জাতির মেরুদন্ড, আর শিক্ষারূপ মেরুদন্ড নিজের মহিমা প্রকাশের মাধ্যমে যুবসমাজকে আলোকিত পথে পরিচালনা করে। আলোকিত যুবসমাজ জাতিকে উন্নতকরণের মাধ্যমে উৎকৃষ্ট জাতির রূপদান করে। অর্থ্যাৎ যুবসমাজ জাতির ভবিষ্যৎ। সুতরাং কোন জাতির যুবসমাজ যদি নৈতিকতা ও মনুষ্যত্ববোধ হারিয়ে বিপথে ধাবিত হয়, তবে সে সেদেশের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত অন্ধকারাচ্ছন্ন। দেশের বিভিন্ন কারণে যুবসমাজে নৈতিকতার অবক্ষয় ঘটে। বর্তমান যুবসমাজের বিপথগামিতার উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে প্রযুক্তি। প্রযুক্তির আশীর্বাদ টেলিভিশন, ডিশ এন্টেনা, মোবাইল, কম্পিউটার, ইন্টারনেট, ফেইসবুক ইত্যাদি সমাজে যতটুকু আশীর্বাদ বয়ে এনেছে, তার চেয়ে শতগুণ বেশি অভিশাপ বয়ে এনেছে তরুণদের জন্য। প্রযুক্তির এসব প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তরুণ সমাজে উন্মোচিত হচ্ছে অশ্লীলতার পর্দা, ফলে সহজেই তরুণরা হারিয়ে ফেলছে চরিত্রের শ্লীলতা। অশালীন ও উদ্ভট প্রকৃতির সিনেমা তরুণদের মানসিকতায় প্রবেশ করিয়ে দিচ্ছে উদ্ভট চিন্তাধারা, যা জীবন গঠনের ক্ষেত্রে অন্যতম অন্তরায়। শিক্ষাঙ্গণে রাজনৈতিক অস্থিরতাও যুবসমাজকে বিপথে পরিচালনা করে। দলের প্রভাব ও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ছাত্রদের মনে ক্রোধ ও লোভের জন্ম দেয়। ফলে তারা মূল লক্ষ্যকে পাশ কাটিয়ে অনর্থক কাজে উৎসাহী হয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। বেকারত্ব যুবসমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের আরেকটি নিয়ামক। সমাজের অর্থলোভী কর্ণধারদের প্রবঞ্চনার শিকার হয়ে তারা নিজের প্রতি আত্ববিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। ফলে আলোকিত পথের তাদেরকে হাতছানি দেয় অন্ধকারাচ্ছন্ন মাদকের পথ। এর পরিণতিতে সমাজে সন্ত্রাস, ডাকাতি ও চাঁদাবাজির সূত্রপাত ঘটে। এছাড়াও প্রেমে ব্যর্থতা, পারিবারিক কলহ, অসৎ সঙ্গ, মিথ্যাচার ইত্যাদি যুবসমাজকে ধ্বংসের দিকে ধাবিত করে।

দেশে শান্তিশৃঙ্খলার পরিবেশ সৃষ্টি করে দেশকে উন্নতির পথে পরিচালিত করতে হলে সর্বপ্রথম যুবসমাজের নৈতিক অবক্ষয় প্রতিরোধ করতে হবে। প্রযুুক্তির যে অভিশাপ তরুণদের চরিত্রের প্রভাব বিস্তার করেছে, তা থেকে তাদের ফেরানোর জন্য প্রয়োজন সুস্থ বিনোদন মাধ্যম। শিক্ষাঙ্গণকে হতে হবে রাজনীতিমুক্ত। আর শিক্ষাব্যবস্থাও হতে হবে স্বচ্ছ ও বাস্তব জীবনসম্মত। শিক্ষার নামে সার্টিফিকেট বিক্রির যে মহড়া সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে, তার মোহ থেকে যুবসমাজকে মুক্ত করে সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে যুবসমাজকে মুক্ত করতে হবে এবং মেধার সঠিক মূল্যায়ন করতে হবে। সমাজে মাদকের অবাধ ছড়াছড়ি রয়েছে। এসব মাদকের মূলোৎপাটনের মাধ্যমে যুবসমাজকে রক্ষা করতে হবে। কারণ মাদকের অর্থের যোগান দিতেই যুবসমাজ খুন, ডাকাতি, রাহাজানির মতো বিষয়ে জড়িয়ে পড়ে। যুবসমাজের নৈতিকতা রক্ষায় মা-বাবাকে সচেষ্ট হতে হবে, সাধ্যানুযায়ী তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে হবে এবং শিষ্টাচার শিক্ষা দিতে হবে। শিক্ষকদেরকেও সঠিক শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে যুুবসমাজের উন্নয়নে ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে যুবসমাজকে নৈতিক শিক্ষা প্রদান করা সমেয়র অনিবার্য দাবীতে পরিণত হয়েছে। এছাড়া সমাজ ও রাষ্ট্রকেও যুবসমাজের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তাহলে একটা জাতির বুকে একটি উন্নত যুবসমাজ গড়ে উঠবে।

লেখক : শিক্ষাবিদ ও এম.ফিল গবেষক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!