- Lohagaranews24 - http://lohagaranews24.com -

মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ আরো একধাপ এগিয়ে

Matarbari_helipad-2

নিউজ ডেক্স : মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ আরো একধাপ এগিয়ে গেল। মহেশখালীর মাতারবাড়িতে ১২০০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রয়োজনে নির্মাণ হতে যাওয়া বন্দরের সুযোগ সুবিধার ওপর ভর করে হচ্ছে কনটেইনার ও মাল্টিপারপাস টার্মিনালের চার জেটি। ২০২৩ সালের মধ্যে এসব জেটিতে ১৬ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানোর লক্ষ্যে কাজ চলছে। কাজের অগ্রগতি ও আশপাশের অবস্থা পর্যবেক্ষণে আজ নৌ মন্ত্রী শাজাহান খানের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের মূখ্য সচিব ও বেজা চেয়ারম্যান, মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলের কো-অর্ডিনেটর, নৌ সচিব, ভূমি সচিব, বিদ্যুৎ সচিব, চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যানসহ সরকারের ১১ উর্ধতন কর্মকর্তারা আজ হেলিকপ্টারে মহেশখালীর মাতারবাড়িতে যাচ্ছেন।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম খালেদ ইকবাল বলেন, ‘আমরা ২০২৩ সাল নাগাদ হ্যান্ডেলিং কার্যক্রম শুরু করতে চাই এই বন্দরে। ১৬ মিটার ড্রাফটের ২৫০ মিটার দীর্ঘ জাহাজ এখানে ভেড়ানো সম্ভব। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) এর গবেষণা অনুযায়ী এগিয়ে চলছে বন্দরের কার্যক্রম।’
তিনি আরো বলেন, প্রায় বিনা খরচে আমরা এই বন্দর সুবিধা পেয়ে যাচ্ছি। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য এটি নির্মিত হচ্ছে এবং সেখান থেকে বন্দরের জন্য পৃথক একটি জোন করা যায় বলে জাইকার গবেষণায় উঠে এসেছে। আর দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বহুগুণ বেড়ে যাবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নৌ মন্ত্রী শাজাহান খান এখনো এই এলাকা দেখেননি। একইসাথে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রকল্পটি পরিদর্শনের লক্ষ্যে আজ একটি টিম যাচ্ছে। তারা এলাকাটি দেখার পর প্রকল্পের কাজে আরো গতি পাবে।
আজকের পরিদর্শন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গতকাল সন্ধ্যায় বেজা চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, নৌ মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে মাতারবাড়ি যাচ্ছি। সেখানকার বর্তমান অবস্থা দেখে এলাকাটি সম্পর্কে বাস্তব ধারণা পাওয়া যাবে।
জানা যায়, ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে উপকূল থেকে সাগরের দুই কিলোমিটার দূর থেকে ৫৪ ফুট (১৮মিটার ) গভীর ও প্রাথমিকভাবে ৩০০ ফুট চওড়া হলেও পরবর্তীতে ৭৫০ ফুট চওড়া চ্যানেলের মাধ্যমে সহজেই জাহাজ একেবারে ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে। মাতারবাড়ির সাইবার ডাইল গ্রামের উত্তর দিকের বিশাল চরে ১৮ মিটার ড্রাফটের চ্যানেল তৈরি করতে ড্রেজিংয়ের কাজ করছে বিশ্বের শক্তিশালী ৫টি ড্রেজারের একটি ক্যাসিওপিয়া ভি। কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পটি হবে দক্ষিণ দিকে আর উত্তরের বিশাল জায়গায় গড়ে উঠবে এই বন্দর। সাগর থেকে আসা জাহাজগুলো চ্যানেল দিয়ে আসার পর একটি স্থানে একটি চ্যানেল চলে যাবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভেতরে এবং অপর চ্যানেলটি দক্ষিণে অগ্রসর হয়ে ব্যবহৃত হবে বন্দর হিসেবে। সেই স্থানে একটি কনটেইনার ও একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনাল গড়ে উঠবে। প্রতিটি টার্মিনালে দুটি করে জেটি থাকবে। জাইকার গবেষণায় এই সম্ভাবনার কথা উঠে এসেছে।
জাইকার অর্থায়নে আমরা একটি রেডিমেড গভীর সমুদ্র বন্দর পেলে আমাদের অর্থনীতির জন্য সহায়ক হবে জানিয়ে চিটাগাং জুনিয়র চেম্বারের সভাপতি মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের যেহেতু ধারণক্ষমতার বাইরে গিয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম করছে। সেহেতু এ ধরনের একটি গভীর সমুদ্র বন্দরের সুবিধা পেলে অবশ্যই আমাদের অর্থনীতির জন্য সহায়ক হবে।
অর্থায়ন প্রসঙ্গে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম খালেদ ইকবাল বলেন, ‘এতে আমাদের কোনো খরচ নেই। কয়লা নিয়ে আসা জাহাজগুলোর পোর্ট কলের জন্য বন্দরের প্রয়োজন রয়েছে। তাই তাদের প্রয়োজনে তা নির্মিত হচ্ছে, আমরা শুধু তাদের সুযোগ সুবিধাগুলো কাজে লাগিয়ে বন্দরটি গড়ে তুলছি। জাইকার গবেষণায়ও সেই সম্ভাবনার কথা উঠে এসেছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর নিয়ে সমন্বয় সভা করতে নৌ মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বে ১১ জনের একটি টিম আগামী ২১ অক্টোবর জাপানে যাচ্ছে। সেখানে কাশিমা পোর্ট নামের একটি বন্দর রয়েছে যা মাতারবাড়ির মতো। সেই বন্দর পরিদর্শনের পাশাপাশি আগামীর মাতারবাড়ি কেমন হবে তা নিয়ে পর্যালোচনা হবে। আর সেই সমন্বয় সভায় যাওয়ার আগে তারা মাতারবাড়ি সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান নিতে আজকের পরিদর্শন তাদের জন্য সহায়ক হবে।
উল্লেখ্য, প্রায় ৪৩ হাজার কোটি টাকার কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) দিচ্ছে ৩৬ হাজার কোটি টাকা ও বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৭ হাজার কোটি টাকা। এই অর্থায়নের আওতায় গভীর সমুদ্র বন্দরের জন্য জেটি নির্মাণ করা হচ্ছে। আপাতত সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করা যাচ্ছে না বলে মাতারবাড়ি দিয়েই গভীর সমুদ্র বন্দরের সুবিধা পেতে যাচ্ছে দেশ। -সুপ্রভাত