গতকাল (৪ ডিসেম্বর) আমার এক সহকর্মীর সাথে মধ্য কলা উজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করতে যাই। চতুর্থ শ্রেণির পাঠদান কার্যক্রম পর্যবেক্ষণকালে জানতে পারি জয়নগর গ্রামের মোহাম্মদ হাসান তিন মাস ধরে টানা বিদ্যালয়ে আসছে না। শ্রেণি শিক্ষকের কাছ থেকে জানা যায় হাসান এখন দর্জির কাজ শিখছে। শ্রেনি শিক্ষক জনাব নুরুল ইসলাম বেশ কয়েকবার চেষ্টা চালিয়েও হাসানকে বিদ্যালয়মুখী করতে পারেন নি। ভাবলাম বাজার যেহেতু পাশে আমরাও একবার চেষ্টা চালিয়ে দেখি। খবর নিয়ে জানলাম সে আজ দর্জি কাজ শিখতে আসেনি।
হাসানকে বিদ্যালয়মুখী করার জন্য প্রচণ্ড আগ্রহ সৃষ্টি হয় আমাদের। তার বাড়িতেই হোমভিজিট করার সিদ্ধান্ত নিলাম। যেই ভাবনা সেই কাজ। প্রধান শিক্ষক জনাব জামাল উদ্দিন ও শ্রেণি শিক্ষককে সাথে নিয়ে আমরা জয়নগর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই। রাস্তা আমাদের প্রত্যাশার চেয়েও খারাপ। দীর্ঘক্ষণ মোটরসাইকেল চালিয়ে গ্রামের সর্পিল পথ পেরিয়ে হাসানের বাড়ির সন্ধান পাই।
মাটির ঘর। বাহির থেকে অভাব সহজে অনুমান করা যায়। প্রধান শিক্ষক একজনের কাছে খোঁজ নিয়ে জানলেন হাসান বাড়িতে আছে। সে বাড়িতে আছে জেনে আমাদের চোখে মুখে আনন্দের ঝিলিক বয়ে যায়। ধানকাটা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় সে দর্জি কাজে যায়নি। আমরা আসছি জেনে সে বের হল। প্রথম দেখায় মনে হল তার বয়স তের- চৌদ্দ হবে। সাথে তার বড় ভাইও বের হল। তাকে পেয়ে বিদ্যালয়ে নিয়ে আসার জন্য সবাই বুঝানোর চেষ্টা করছিলাম; এমন সময় জানলাম কয়েক বছরের ব্যবধানে তার বাবা, মা এবং এক ভাই মারা গেছে। ঘরে একটা অসুস্থ ভাই। এক বোনের বিয়ে হয়েছে, আরেক বোন ঘরে আছে। ষোল- সতের বছর বয়সী বড় ভাই এবং সে এখন ঘরের হাল ধরেছে। বয়স তার কম কিন্তু কথায় দায়িত্বের ভার বুঝা যায়। সে বলল, আমি পড়ালেখা করলে বাড়ি কে দেখাশুনা করবে? তার কথায় আমরা কিছুক্ষণ নির্বাক হয়ে রইলাম। এত অল্প বয়সে সে তার অসুস্থ ভাইকে নিয়ে চিন্তা করছে, বোনকে নিয়ে করছে। কত দায়িত্ব! তার কষ্টের কথা, দায়িত্বের কথা জেনে স্কুলে আসার জন্য আর জোরাজুরি করি নাই।
তারপরও সে কথা দিয়েছে বার্ষিক পরীক্ষা অংশগ্রহণ করার। আমরা তার এই আশ্বাসে খুশি। শুভকামনা রইল তার জন্য।
“লোহাগাড়া শিক্ষা অফিস চট্টগ্রাম” ফেসবুক আইডি থেকে নেয়া।