- Lohagaranews24 - http://lohagaranews24.com -

ভর্তি ফি তিন হাজার টাকার বেশি নেওয়া যাবে না

6

নিউজ ডেক্স : চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২০১৮ সালের শিক্ষাবর্ষে সেশন চার্জসহ ভর্তি ফি তিন হাজার টাকার বেশি নেওয়া যাবে না। এছাড়া একই প্রতিষ্ঠানে পুনঃভর্তি ফি বা কোন ধরণের উন্নয়ন ফিও নেওয়া যাবে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক সম্প্রতি প্রকাশিত বেসরকারি স্কুল/স্কুল অ্যান্ড কলেজে মাধ্যমিক, নিম্ন মাধ্যমিক ও সংযুক্ত প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালায় এসব কথা বলা হয়েছে। ভর্তির ফি বাবদ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত অর্থের চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও বাতিলসহ সরকারের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও নীতিমালায় বলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে গতকাল বুধবার বিকেলে অনুষ্ঠিত ২০১৮ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি সম্পর্কিত ‘ভর্তি তদারকি ও পরিবীক্ষণ’ কমিটির সভায় এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. হাবিবুর রহমান। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী।

সভায় হাবিবুর রহমান জানান, প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীর বয়স ছয় বছরের অধিক হতে হবে। লটারির মাধ্যমে প্রথম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে হবে। দ্বিতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে এবং নবম শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে কোন ধরনের ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া যাবে না। সেশন চার্জসহ ভর্তি ফি মফস্বল এলাকায় ৫০০ টাকা, পৌর/উপজেলা এলাকায় ১০০০ হাজার টাকা, পৌর/জেলা সদর এলাকায় ২০০০ টাকা এবং চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় ৩০০০ হাজার টাকার বেশি নেওয়া যাবে না। ভর্তি ফি আগে থেকে প্রকাশ করতে হবে। উন্নয়ন খাতে কোন প্রতিষ্ঠান অর্থ আদায় করতে পারবে না এবং এক শ্রেণি থেকে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হলে পুনঃভর্তির ফি নেওয়া যাবে না। কোন অবস্থায় শূন্য আসনের অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে না। অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে হলে মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমতি নিতে হবে।

মো. হাবিবুর রহমান আরো বলেন, ‘প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসে মন্ত্রণালয় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য ভর্তি নীতিমালা প্রকাশ করে। এতে ভর্তি সংক্রান্ত সকল নির্দেশনা দেওয়া থাকে। আইন-কানুন মেনে ভর্তি নীতিমালা অনুসরণ করা উচিত। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যয় বুঝে আয় করার নীতিমালা গ্রহণ করে। এটা অধঃপতনের সিগনাল। শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্য করার বা টাকা বেশি আদায় করার কোন সুযোগ নেই। চট্টগ্রাম মহানগরীর বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা প্রধান মন্ত্রীর দপ্তর থেকে নির্ধারিত। ভর্তি পরীক্ষা ডিজিটাল হওয়াও বাঞ্চনীয় বলে মনে করেন হাবিবুর রহমান।

সভায় ছাত্রনেতা নুরুল আজিম রনি বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপর অতিরিক্ত পাঠ্য বই চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। নির্ধারিত দোকান থেকে এসব বই কিনতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করে কমিশন আদায় করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে উন্নয়ন ফি আদায় করছে। সিটি করপোরেশনের স্কুলগুলোতে ১৬০০ টাকা উন্নয়ন ফি নিচ্ছে। ২০০০ টাকা ফি নিয়ে শিক্ষার্থীদের কোচিং করতে বাধ্য করা হচ্ছে।’

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নামে-বেনামে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ জেলা প্রশাসনের কাছে এসেছে বলে জানান জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তুলনায় ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়মের কারণে অভিভাবকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে বাণিজ্য করা বা মুনাফা করার চিন্তা ভাবনা করা উচিত নয়।’

জিল্লুর রহমান বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা মনে করি, আপনারা বেশি অর্থ আদায় করছেন। আপনারা আত্মসমালোচনা করুন। টাকা কম নেওয়া যায় কিনা বিবেচনা করবেন। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে একটা সিস্টেমে আসা উচিত। কাউকে আতঙ্কে ফেলা প্রশাসনের লক্ষ্য না। আইন ও পরিপত্র আপনাদের মেনে চলা উচিত।’

সভায় নগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান/অধ্যক্ষ, ক্যাব, চসিক, মাউশি, ছাত্রনেতা, শিক্ষাবোর্ডের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।