- Lohagaranews24 - http://lohagaranews24.com -

বাংলাদেশি পরিচয়ে আদালতে রোহিঙ্গা যুগলের বিয়ে!

d5b0b6ef3add0c29234378c5cecf7b97

নিউজ ডেক্স : পরিচয় গোপন রেখে অভিনব কায়দায় চট্টগ্রামের আদালতে হলফনামার মাধ্যমে বিবাহ সম্পন্ন করলেন এক যুগল। ছেলেটি হালিশহর ও মেয়েটির নিবাস রাঙ্গুনিয়া দেখানো হয়েছে। তবে শেষমেষ রক্ষা পেলেন না তারা। পুলিশের কাছে ধরা পড়ে তাদের আসল পরিচয় বের হলো বিদেশি নাগরিক রোহিঙ্গা যুগল হিসেবে। আশ্রয় হল শরণার্থী ক্যাম্পে। তবে প্রশ্ন উঠছে ধরা পড়ার আগে তারা আদালতের মাধ্যমে কিভাবে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে স্বীকৃত পেলেন? গতকাল দুপুর ১২টা নাগাদ এ রোহিঙ্গা যুগলকে আটক করে হালিশহর থানা পুলিশ। আর আটকের পর বিকালে তাদের শরণার্থী ক্যাম্পে পাঠানো হয়।

এ ব্যাপারে হালিশহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান গতকাল আজাদীকে বলেন, দু’জনকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করার এক পর্যায়ে তারা যে রোহিঙ্গা সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাদের একজনকে বাড়ি কোথায় জিজ্ঞাসাবাদ করলে বলে উঠে, রাঙ্গুনিয়ায়। রাঙ্গুনিয়ার কোন জায়গায় জিজ্ঞেস করলে সে আর কিছুই বলতে পারেনি।

রোহিঙ্গা নাগরিক হিসেবে নিশ্চিত হওয়ার পর কক্সবাজারে খবর পাঠালে মেয়েটির মা এসে তাদের শনাক্ত করেন। পরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পে তাদের পাঠানো হয় শরণার্থী ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

হলফনামা করে বাংলাদেশি নাগরিক পরিচয় দিয়ে কীভাবে বিবাহ সম্পন্ন করা যায়, এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, আমাদের মধ্যে অনেক দুর্বলতা আছে। যারা তাদের বিয়ে পড়ালেন তাদেরও একটা দায়–দায়িত্ব থাকা উচিত। কোনো যাচাই বাছাই না করে আদালতে হলফনামার মাধ্যমে তাদের বিবাহটি সম্পন্ন করা হয়েছে। সব পুলিশের উপর ছেড়ে দিলে কেমন হবে, তিনি প্রশ্ন রাখেন।

চমেক হাসপাতালে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পে দায়িত্বে থাকা জেলা পুলিশের এএসআই আলাউদ্দিন তালুকদার বলেন, দুই রোহিঙ্গাকে আটকের পর হালিশহর থানা বিকালে (সোমবার) আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। পরে তাদের কক্সবাজারে শরাণার্থী ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, গতকাল তাদের দু’জনের পাশাপাশি মোট ৬ জন রোহিঙ্গাকে শরাণার্থী ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে। ভুয়া পরিচয়ের মাধ্যমে কীভাবে আদালতে বিবাহের হলফনামা সম্পাদন করেছিল তা নিয়ে বিস্মিত খোদ পুলিশের এ সদস্য।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মাসুকুর রহমান সিকদার গতকাল আজাদীকে বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে আমাদের দেশে কোনো ভোটার হতে না পারে কিংবা পরিচয় গোপন করে নাগরিক হতে না পারে সে ব্যাপারে ইতোমধ্যে সরকার সবাইকে নির্দেশনাও দিয়েছে। এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। যেখানে রোহিঙ্গাদের পাওয়া যাবে তাদের মানবিক আচরণ প্রদর্শনের মাধ্যমে শরাণার্থী ক্যাম্পে পাঠানোর জন্য ব্যবস্থা নিতে সবাইকে বলা হয়েছে। পরিচয় গোপন রেখে আদালতের হলফনামা সম্পন্ন করে তারা কীভাবে বিবাহ সম্পন্ন করলেন তা আদালতই ভালো বলতে পারবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

রোহিঙ্গা যুগলের হলফনামায় দেখানো হয়েছে, ছেলেটির নাম মো. ইউনুছ আলী, পেশায় ব্যবসায়ী। থাকেন হালিশহর থানাধীন চুনা ফ্যাক্টরী মোড়ে রাজুমনি ভবনে। পিতা মো. ইদ্রিস ও মা সুফিয়া খাতুন। অন্যদিকে মেয়েটির পরিচয় দেখানো হয়েছে, বুসরা নাঈম। ঠিকানা, রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরা ইউনিয়ন। মা– হাসিনা বেগম ও বাবা– দিল মোহাম্মদ। বিবাহের যৌথ হলফনামাটি নোটারি পাবলিক কার্যালয়ের সীলমোহর, আইনজীবীদের স্বাক্ষর ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে দেখা গেছে। গত ৫ নভেম্বর হলফনামাটি সম্পাদনের তারিখ দেখানো হয়েছে। -আজাদী